Dhaka বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মেহেরপুরে ভৈরব নদের দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের বালু। সিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে কম। ফলে নির্মাণকাজ স্থায়ী হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে স্থানীয় লোকজন। এদিকে ওয়াকওয়ের নির্মাণ প্রকল্পের নকশায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিও পড়েছে। ওয়াকওয়ে নির্মাণ নিয়ে সেসব মালিকের অভিযোগের কথা শুনছেন না প্রশাসনের লোকজন ও ঠিকাদার।

মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সৌন্দর্য বাড়ানো লক্ষ্যে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সহগলপুর থেকে সদর উপজেলা হয়ে মুজিবনগরের কিছু অংশে ভৈরব নদের দুই পাশে ১৬ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কাজটি পেয়েছে কুষ্টিয়ার সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মেহেরপুরের আর আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাহিনুরজামান পোলেনসহ চারজনের একটি গ্রুপ কাজটির দেখভাল করছেন।

সোমবার (২০ মার্চ) ভৈরব নদের তীরে গেলে লোকজন জানায়, যাদবপুর গ্রামের ২০ থেকে ২৫ ব্যক্তির নিজস্ব জমি ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের নকশায় পড়েছে। জমির ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা।

ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে দেখা যায়, নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের বালু। ১ : ৪ অনুপাতে সিমেন্ট ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, নির্মাণকাজে ১ : ১০ ভাগও সিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নির্মাণকাজ স্থায়ী হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁরা। তা ছাড়া ওয়াকওয়ে লেভেল করা হয়নি। উন্নয়নের নামে শুধু সরকারি টাকা নষ্ট হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, আমি ২০১৩ সালে ১৮ কাঠা জমি কিনেছি, যা সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছে। ওই জমিতে বিভিন্ন ফলের বাগান ছিল। ওয়াকওয়ে করার জন্য আমার বাগান কেটে জমি নেওয়া হয়েছে। জমি নেওয়ার আগে কোনো ধরনের নোটিশও দেওয়া হয়নি।

একই গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে কাজ বন্ধ রাখার জন্য আবেদন করেও কোনো ফল পাননি। কিছু বলতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন বাজে ভাষায় কথা বলে, হুমকি দেয়।

গাংনী উপজেলার সহগলপুর গ্রামের নাসিম আহমেদ বলেন, খুব বাজেভাবে ওয়াকওয়ের কাজ করা হয়েছে। রাস্তার কোনো লেভেল করা হয়নি। এতে দ্রুত এই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

ভৈরব নদের দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের বিষয়ে মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান বলেন, পানি আইন-২০১৩ অনুযায়ী নদের কিনারা থেকে ১০ মিটার (৩৩ ফুট) পর্যন্ত জমি খাস খতিয়ান হয়ে যাবে। ওই জমি অন্য যে কারো নামে, এমনকি যেকোনো রেকর্ড থাকলেও তা নদের মালিকানায় আসবে।

ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, শিডিউলে যে মানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, সেভাবেই কাজ দেখে নেওয়া হবে। এর ব্যত্যয় হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

Tag :

আবহাওয়া

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

মেহেরপুরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ০৪:২২:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মেহেরপুরে ভৈরব নদের দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের বালু। সিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে কম। ফলে নির্মাণকাজ স্থায়ী হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে স্থানীয় লোকজন। এদিকে ওয়াকওয়ের নির্মাণ প্রকল্পের নকশায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিও পড়েছে। ওয়াকওয়ে নির্মাণ নিয়ে সেসব মালিকের অভিযোগের কথা শুনছেন না প্রশাসনের লোকজন ও ঠিকাদার।

মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সৌন্দর্য বাড়ানো লক্ষ্যে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সহগলপুর থেকে সদর উপজেলা হয়ে মুজিবনগরের কিছু অংশে ভৈরব নদের দুই পাশে ১৬ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কাজটি পেয়েছে কুষ্টিয়ার সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মেহেরপুরের আর আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাহিনুরজামান পোলেনসহ চারজনের একটি গ্রুপ কাজটির দেখভাল করছেন।

সোমবার (২০ মার্চ) ভৈরব নদের তীরে গেলে লোকজন জানায়, যাদবপুর গ্রামের ২০ থেকে ২৫ ব্যক্তির নিজস্ব জমি ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের নকশায় পড়েছে। জমির ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা।

ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে দেখা যায়, নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের বালু। ১ : ৪ অনুপাতে সিমেন্ট ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, নির্মাণকাজে ১ : ১০ ভাগও সিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নির্মাণকাজ স্থায়ী হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁরা। তা ছাড়া ওয়াকওয়ে লেভেল করা হয়নি। উন্নয়নের নামে শুধু সরকারি টাকা নষ্ট হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, আমি ২০১৩ সালে ১৮ কাঠা জমি কিনেছি, যা সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছে। ওই জমিতে বিভিন্ন ফলের বাগান ছিল। ওয়াকওয়ে করার জন্য আমার বাগান কেটে জমি নেওয়া হয়েছে। জমি নেওয়ার আগে কোনো ধরনের নোটিশও দেওয়া হয়নি।

একই গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে কাজ বন্ধ রাখার জন্য আবেদন করেও কোনো ফল পাননি। কিছু বলতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন বাজে ভাষায় কথা বলে, হুমকি দেয়।

গাংনী উপজেলার সহগলপুর গ্রামের নাসিম আহমেদ বলেন, খুব বাজেভাবে ওয়াকওয়ের কাজ করা হয়েছে। রাস্তার কোনো লেভেল করা হয়নি। এতে দ্রুত এই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

ভৈরব নদের দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের বিষয়ে মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান বলেন, পানি আইন-২০১৩ অনুযায়ী নদের কিনারা থেকে ১০ মিটার (৩৩ ফুট) পর্যন্ত জমি খাস খতিয়ান হয়ে যাবে। ওই জমি অন্য যে কারো নামে, এমনকি যেকোনো রেকর্ড থাকলেও তা নদের মালিকানায় আসবে।

ওয়াকওয়ের নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, শিডিউলে যে মানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, সেভাবেই কাজ দেখে নেওয়া হবে। এর ব্যত্যয় হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।