নিজস্ব প্রতিবেদক :
রমজানের শুরুতেই নিত্যপণ্যের বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে এর উত্তাপ। প্রায় প্রতিটি জিনিসপত্রের দামই বেড়েছে। নিত্যপণ্যের মধ্যে এখনো নৈরাজ্য চলছে চিনির দরে। খেজুরও গেলো বছরের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে দাম। কাচা মরিচ, লেবুসহ অন্যান্য সবজিও প্রথম রমজানকে টার্গেট করে বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দাম কমলেও মুরগীর দাম নাগালের বাইরে।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা ও শাহজাদপুরসহ বিভিন্ন বাজার বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, শিম ৪০-৫০ টাকা কেজি, করলা ১০০-১২০ টাকা, আকারভেদে লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। চাল কুমড়া প্রতিটি ৫০-৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০, পটল ৮০, ঢেঁড়স ১০০, কচুর লতি ১০০, পেঁপে ৩০-৪০, বরবটি ১২০ ও ধুন্দুল ৫০-৬০ টাকা কেজি। পাতা কপি ৩০-৪০ টাকা পিস। বেগুন ১০০ টাকা কেজি যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকায়। শসার কেজি মানভেদে ৮০-১০০ টাকা। যা কদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪০-৬০ টাকা কেজি দরে। ছোট সাইজের লেবুর হালি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। বড় সাইজের লেবু পিসপ্রতি ১০ টাকা বেডে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
বাজারগুলোতে দেখা যায়, আলুর দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৪০ টাকা, যা বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ছিল ৩৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের কেজি ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা।
কথা হয় ক্রেতা মুজিবুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, রমজানের প্রথম দিনেই সবজির দাম বেড়ে গেছে। ছোলা বুটের দাম না বাড়লেও কখন বেড়ে যাবে তার ঠিকঠিকানা নেই।
আরেক ক্রেতা শিমুল হোসেইন বলেন, রমজানের প্রথম দিনেই বেগুনের দাম বেড়েছে। শসার দামও অতিরিক্ত চাওয়া হচ্ছে। এখন ইফতারিতে তো এসব লাগবেই, তাই বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, চাহিদা বাড়তি থাকায় বেগুন, শসার দাম একটু বেশি। সাপ্লাই বেড়ে গেলে দামও কমে যাবে।
বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, খাসির মাংসের কেজি ১১০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা, দেশী মুরগি ৭০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা, লেয়ার ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র ১০ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিলগেট থেকে মুরগি বিক্রি হওয়ার পর কয়েক হাত বদল হয়ে তাদের কাছে আসে। আজ সকালে তারা ১৪৮ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনে এনেছেন। তাদের ধারণা, পাইকারি পর্যায়ে নতুন দাম এখনো কার্যকর হয়নি। তাই খুচরা বাজারে মুরগির দাম কমেনি।
নতুন দাম আজ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের ব্রয়লার মুরগির খুচরা বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আজ আমরা কাপ্তান বাজার থেকে ২৪৮ টাকা কেজি দরে মুরগি কিনে এনেছি। কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ীরা মিলগেটে গিয়ে মুরগি কিনে আনে। তারা নতুন দামে কিনতে পারেনি বলে আমাদেরও দিতে পারেনি। যেদিন থেকে নতুন দামে আমরা মুরগি কিনতে পারব, সেদিন কম দামে খুচরা বিক্রি হবে।
এদিকে ক্রেতারা বলেন, নতুন দাম কার্যকর হলেও কোনো লাভ নেই। কারণ যে হারে দাম বেড়ে ১৫০ টাকার মুরগি কেজিতে ২৭০-২৮০ টাকা হয়েছে, সেই তুলনায় ৩০-৪০ টাকা দাম কমা কিছুই না। এছাড়া নতুন দাম কবে কার্যকর হবে তা নিয়েও ক্রেতাদের মনে অনিশ্চয়তা।
নাগালের বাইরেই রয়েছে গরুর মাংসের দাম। গরু বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় আর আর খাসির মাংসের কেজি ১০৫০-১১০০ টাকা।
ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৪০ টাকা করে, যা ছিল ১২০ টাকা। আর দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৯০-২০০ টাকা।
প্রতি কেজি ছোলার দাম ৯০-৯৫ টাকা। সপ্তাহখানেক আগেও ছোলার কেজি ছিল ৮০ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য ডাল কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অ্যাংকার ডাল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, মাসকলাইয়ের ডাল ১৫০ টাকা, মুগডাল ১১০ টাকা।
মানভেদে বেসন বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১২০ টাকায়। বুটের ডালের বেসন ৯৫ টাকা ও মুগ ডালের বেসন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। সবধরনের বেসনের দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত।
খুচরা চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গুটি স্বর্ণা কেজি ৫০ টাকা, মিনিকেট ৭০ টাকা, পাইজাম ৫০ টাকা, ২৮ চাল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত, পোলাও চাল খোলা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।
বড় রসুনের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা। ছোট রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা, আদার কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, চায়না আদা ২২০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে যা রসুন ও আদার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা।
বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৮৭ টাকা, দুই লিটারের বোতল ৩৭৪ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটার ১৮০ টাকা এবং পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা লিটার দরে।
এছাড়া লবণ এক কেজির প্যাকেট ৪২ টাকা কেজি, খোলা লাল চিনির কেজি ১৩০ টাকা, সাদা চিনি ১১২, দুই কেজির প্যাকেট আটা ১৩০ টাকা, দুই কেজি ময়দা ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা শ্যামল রায় বলেন, দেশে সবকিছু দাম বাড়ছে। ছোট থেকে বড় সব ব্যবসায়ী এই দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেটে জড়িত। খুচরা ব্যবসায়ীদের বলতে তারা বলে পাইকাররা বেশি নিচ্ছে। পাইকাররা আবার বলে আমরা দাম কম নিচ্ছি। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি নিচ্ছে। দুই দল দুজনকে দোষ দেয়। অথচ মাঝ থেকে বলির পাঠা হতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।
বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। সরকারি চাকজীবীদের গত ৬/৭ বছর ধরে কোন পে স্কেল দেয়া হচ্ছে না। বিপরীতে বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়েনি। কোন কোন ক্ষেত্রে অনেকের বেতন কমছে। আবার ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ কিংবা তার আগে করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে কর্মহীন হযে পড়ছেন। বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসসহ মাছ-মাংসের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। ফলে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। একদিকে আয় না বাড়া অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।