Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৩৩ ঘণ্টা ধরে গাড়ি চালানোয় ক্লান্ত ছিলেন চালক

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসের চালকসহ ২০ যাত্রী নিহতের ঘটনায় চালকের ক্লান্তি এবং অতিরিক্ত ঘুম দায়ী বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩৩ ঘণ্টারও বেশি সময় বাস চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন গাড়িচালক জাহিদ হাসান (৪৫)। দুর্ঘটনায় তিনিও মারা গেছেন।

শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে জেনেছি, ইমাদ পরিবহনের বাসটির চালক কোনো রকম বিশ্রাম না নিয়েই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। দীর্ঘ ৩৩ ঘণ্টা ধরে গাড়ি চালানোর কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। সকাল সকাল ঘুম ঘুম চোখে বাস চালানোয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি।

ফরিদপুর জোনের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মাহাবুবুল হাসান জানান, বাসটির ফিটনেস ছিল না এবং যান্ত্রিক ত্রুটিও রয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত শেষেই বাসটির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, রোববার (১৯ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের বাসটি শিবচরের পাঁচ্চর পার হয়ে কুতুবপুর সংলগ্ন এক্সপ্রেসওয়েতে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের আন্ডারপাসের পাশে সংযোগ সড়কে আছড়ে পড়ে। এসময় বাসটির একটি অংশ আন্ডারপাসের ওপর এবং অন্য অংশ এক্সপ্রেসওয়ের ঢালুতে ঝুলে ছিল। ঘটনাস্থলেই গাড়ির মধ্য থেকে ১৪ জনের মরদেহ বের করা হয়। শিবচর হাসপাতালে মারা যায় তিনজন এবং ঢাকা মেডিকেলে আরও দুইজন।

রোববার (১৯ মার্চ) বিকেলে চালক জাহিদের ছেলে রাতুল হাসান বাবার লাশ শনাক্ত করার জন্য শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন।

এসময় তিনি জানান, মাসে দুই দিন বাড়ি আসতেন বাবা। গাড়ি চালিয়ে তিনি সব সময় ক্লান্ত থাকতেন। গত পরশু ঢাকা, পিরোজপুর, খুলনা রুটে পাঁচটি ট্রিপে গাড়ি চালিয়েছেন। বাবা শনিবার রাতে ফোনে জানান, তিনি অনেক ক্লান্ত। রোববার ঢাকা থেকে এসে বাসায় একদিন বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু বাবা আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন।

অন্যান্য জেলার নিহতরা হলেন- মুকসুদপুরের মো. আমজাদ আলীর ছেলে মাসুদ মিয়া (৩৫), খুলনার সোনাডাঙ্গার শেখ আহমদ মিয়ার ছেলে শেখ আব্দুল আল মামুন (৪২), নড়াইলের লোহাগাড়ার বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ হোসেন (৬৭), ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা এলাকার শহিদ মুরাদ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৮), বনগ্রাম এলাকার শামসুল শেখের ছেলে মোসতাক আহম্মেদ (৪৭), ডুমুরিয়া এলাকার পরিমল সাদু খায়ের ছেলে মহাদেব কুমার সাদু খা (৫৫), আমতলা এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে আশফাকুজ্জামান লিংকন (২৬) এবং বাগেরহাটের শান্তি রঞ্জন মজুমদারের ছেলে অনাদি মজুমদার (৩০)। বাসচালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলী আকবরের ছেলে জাহিদ হাসান ও চালকের সহকারী মো. মিরাজ।

গোপালগঞ্জের নিহত ৭ জন হলেন- গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অনাদী রঞ্জন মজুমদার (৫০), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও সদরের মাসুদ মিয়ার মেয়ে সুইটি আক্তার (২২), সদরের মাসুম মিয়ার ছেলে মোস্তাক শেখ (৪১), টুঙ্গিপাড়ার মো. কাঞ্চন শেখের ছেলে শেখ কবির হোসেন (৫৭), ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সদরের আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি (২৫), একই উপজেলার নওশাদ শেখের ছেলে সজীব (২৭), গোপিনাথপুরের তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া (৫৫)। বাকিদের নাম-পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল ইসলাম জানান, শিবচরে ১৭ জনের মরদেহ ছিল। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত শনাক্ত করা মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আহত এক যাত্রী সাইফুল জানান, খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে বাসটি ছাড়ার পর হাইওয়েতে উঠেই বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালানো হচ্ছিল। আমরা যাত্রীরা কয়েক দফা বারণ করেছিলাম। কিন্তু চালক কারও কোনো কথা শোনেনি। চালকের গাফিলতির কারণে আজকে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ফরিদপুর জোনের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মাহাবুবুল হাসান বলেন, বাসটির ফিটনেসেও যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত শেষে বাসটির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানিয়েছে, বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না। ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

৩৩ ঘণ্টা ধরে গাড়ি চালানোয় ক্লান্ত ছিলেন চালক

প্রকাশের সময় : ০১:০০:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসের চালকসহ ২০ যাত্রী নিহতের ঘটনায় চালকের ক্লান্তি এবং অতিরিক্ত ঘুম দায়ী বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩৩ ঘণ্টারও বেশি সময় বাস চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন গাড়িচালক জাহিদ হাসান (৪৫)। দুর্ঘটনায় তিনিও মারা গেছেন।

শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে জেনেছি, ইমাদ পরিবহনের বাসটির চালক কোনো রকম বিশ্রাম না নিয়েই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। দীর্ঘ ৩৩ ঘণ্টা ধরে গাড়ি চালানোর কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। সকাল সকাল ঘুম ঘুম চোখে বাস চালানোয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি।

ফরিদপুর জোনের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মাহাবুবুল হাসান জানান, বাসটির ফিটনেস ছিল না এবং যান্ত্রিক ত্রুটিও রয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত শেষেই বাসটির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, রোববার (১৯ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের বাসটি শিবচরের পাঁচ্চর পার হয়ে কুতুবপুর সংলগ্ন এক্সপ্রেসওয়েতে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের আন্ডারপাসের পাশে সংযোগ সড়কে আছড়ে পড়ে। এসময় বাসটির একটি অংশ আন্ডারপাসের ওপর এবং অন্য অংশ এক্সপ্রেসওয়ের ঢালুতে ঝুলে ছিল। ঘটনাস্থলেই গাড়ির মধ্য থেকে ১৪ জনের মরদেহ বের করা হয়। শিবচর হাসপাতালে মারা যায় তিনজন এবং ঢাকা মেডিকেলে আরও দুইজন।

রোববার (১৯ মার্চ) বিকেলে চালক জাহিদের ছেলে রাতুল হাসান বাবার লাশ শনাক্ত করার জন্য শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন।

এসময় তিনি জানান, মাসে দুই দিন বাড়ি আসতেন বাবা। গাড়ি চালিয়ে তিনি সব সময় ক্লান্ত থাকতেন। গত পরশু ঢাকা, পিরোজপুর, খুলনা রুটে পাঁচটি ট্রিপে গাড়ি চালিয়েছেন। বাবা শনিবার রাতে ফোনে জানান, তিনি অনেক ক্লান্ত। রোববার ঢাকা থেকে এসে বাসায় একদিন বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু বাবা আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন।

অন্যান্য জেলার নিহতরা হলেন- মুকসুদপুরের মো. আমজাদ আলীর ছেলে মাসুদ মিয়া (৩৫), খুলনার সোনাডাঙ্গার শেখ আহমদ মিয়ার ছেলে শেখ আব্দুল আল মামুন (৪২), নড়াইলের লোহাগাড়ার বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ হোসেন (৬৭), ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা এলাকার শহিদ মুরাদ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৮), বনগ্রাম এলাকার শামসুল শেখের ছেলে মোসতাক আহম্মেদ (৪৭), ডুমুরিয়া এলাকার পরিমল সাদু খায়ের ছেলে মহাদেব কুমার সাদু খা (৫৫), আমতলা এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে আশফাকুজ্জামান লিংকন (২৬) এবং বাগেরহাটের শান্তি রঞ্জন মজুমদারের ছেলে অনাদি মজুমদার (৩০)। বাসচালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলী আকবরের ছেলে জাহিদ হাসান ও চালকের সহকারী মো. মিরাজ।

গোপালগঞ্জের নিহত ৭ জন হলেন- গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অনাদী রঞ্জন মজুমদার (৫০), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও সদরের মাসুদ মিয়ার মেয়ে সুইটি আক্তার (২২), সদরের মাসুম মিয়ার ছেলে মোস্তাক শেখ (৪১), টুঙ্গিপাড়ার মো. কাঞ্চন শেখের ছেলে শেখ কবির হোসেন (৫৭), ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সদরের আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি (২৫), একই উপজেলার নওশাদ শেখের ছেলে সজীব (২৭), গোপিনাথপুরের তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া (৫৫)। বাকিদের নাম-পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল ইসলাম জানান, শিবচরে ১৭ জনের মরদেহ ছিল। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত শনাক্ত করা মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আহত এক যাত্রী সাইফুল জানান, খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে বাসটি ছাড়ার পর হাইওয়েতে উঠেই বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালানো হচ্ছিল। আমরা যাত্রীরা কয়েক দফা বারণ করেছিলাম। কিন্তু চালক কারও কোনো কথা শোনেনি। চালকের গাফিলতির কারণে আজকে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ফরিদপুর জোনের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মাহাবুবুল হাসান বলেন, বাসটির ফিটনেসেও যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত শেষে বাসটির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানিয়েছে, বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না। ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গিয়েছিল।