নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাস্তা থেকে বেঁদেরগাঁও রাস্তায় ১২ মিটার চিনারদি ব্রিজ নামে পরিচিত। প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুর্যাল ব্রিজেস-এর আওতায় এ ব্রিজের মেজর মেইনটেন্যান্স হয়েছে। এর সাথে ৯ মিটার দীর্ঘ বালিগাঁও ব্রিজিটিও মেজর মেইটেন্যান্স করা হয়েছে। এক প্যাকেজে এ দুটি ব্রিজের মেজর মেইনটেন্যান্সের বাজেট ৩০ লাখ টাকা। ৯ মিটার ব্রিজটি বন্দর ইস্পাহানী বাজার থেকে লাঙ্গলবন্দ বাজার হয়ে বালিগাঁও এলাকার রাস্তাকে সচল করেছে। এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করছে প্রাইভেট কার, ট্রাক, ইজিবাইক, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেলসহ সব ধরণের যানবাহন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ব্রিজ দুটি ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। তখন ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারতো না। ভাঙা ব্রিজ দিয়ে চলাচল হালকা যানবাহনকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে একটা একটা করে পারাপার হতে হতো। এতে করে ব্রিজের দুই পাশেই যানজটের সৃষ্টি হতো। তাতে অনকে সময় নষ্ট হতো।
সরেজমিনে ব্রিজ দুটি পরিদর্শনকালে স্থানীয় সুবিধাভোগীরা কথা বলেন। তারা মিয়া নামে একজন ইজিবাইক চালক বলেন, ব্রিজ দুটি মেরামতের আগে এই রাস্তায় চলাচলে আমাদের খুবই অসুবিধা হতো। ব্রিজে উঠতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। তখন সময় বেশি লাগতো। এজন্য অনেক যাত্রীই এ ব্রিজ ব্যবহার করতো না। তারা বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতো। এখন অনেক সুবিধা হয়েছে। আমার ইজিবাইকের ট্রিপ বেড়েছে। তাতে আয়ও বেড়েছে।
আরেক ইজিবাইক চালক হারুনুর রশীদ বলেন, ব্রজি দুটি আগে খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। তখন বন্দর ইস্পাহানী বাজার থেকে লাঙ্গলবন্দ বাজার হয়ে বালিগাঁও এলাকার রাস্তা অনেকটা অচল হয়ে পড়েছিল। মানুষের যাতায়াতে খুবই অসুবিধা হতো। এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা ছিল মহাবিপাকে। তারা স্কুলে কলেজে যেতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতো। ইজিবাইক ও রিকশা দিয়ে ভেঙে ভেঙে যাতায়াত করতো। তাতে তাদের একদিকে সময় বেশি লাগতো, অন্যদিকে সময়েরও অপচয় হতো। এখন ব্রিজ দুটি মেরামত হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই উপকৃত হয়েছে। লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে এসেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নজরুল মোল্লা বলেন, নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা হলো ব্যবসার এলাকা। এখানে অনেক মিল ফ্যাক্টরী রয়েছে। মিল-ফ্যাক্টরীর মালামাল বহন করার জন্য এখন ইস্পাহানী বাজার থেকে লাঙ্গলবন্দ বাজার হয়ে বালিগাঁও এলাকার রাস্তা দিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করছে। এতে ব্যবসায়ীদের খুবই উপকার হয়েছে। যাতায়াতের সুবিধার কারণে যানবাহনের ভাড়া কমেছে। জিনিসপত্রের দামও কমেছে।
স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী সালেক বেপারী বলেন, ব্রিজ দুটি মেরামতের আগে এই রাস্তা দিয়ে যাবাহন চলাচল করতে খুবই অসুবিধা হতো। ভ্যানে করে সবজি বাজারে নিতে গেলে অনেক বেশি ভাড়া দিতে হতো। এখন ভাড়া কমেছে। আমরা এখন অপেক্ষাকৃত কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারি। তাতে বাজারেও কম দামে সবজি বিক্রি হওয়ার সুযোগ হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আরেক উপজেলা আড়াইহাজার। এ উপজেলার উচিৎপুর বাজার থেকে বিশনন্দি সড়কে দয়াকান্দা ব্রিজের মাইনর মেইনটেনেন্সের কাজ চলমান। একই সড়কে আরও একটি ব্রিজেরও মেইনটেন্সের কাজ চলছে। তবে ঠিকাদার অসুস্থ থাকায় এ ব্রিজের কাজ বন্ধ রয়েছে। টেলিফোনে মেইনটেনেন্স কাজের ঠিকাদার জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সে কারণে ব্রিজের মেরামতের কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছেন। এ মেরামত বাবদ বরাদ্দ ২০ লাখ টাকা।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার উচিৎপুর বাজার থেকে বিশনন্দি সড়কে দয়াকান্দা ব্রিজের মাইনর মেইনটেনেন্সের কাজ চলমান।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিজটি অনেক পুরাতন হওয়ায় এটি ভেঙে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছিলো। তখন যানবাহন চলতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তো। এক লেনে চলতে গিয়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরী হতো। তাতে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হতো।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোখলেছুর রহমান বলেন, আড়াইহাজার উপজেলা অনেক বড় একটা উপজেলা। যে সড়কে ব্রিজ দুটির অবস্থান সেই সড়ক দিয়ে দিনে সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করে। স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সড়কও এই একটাই। ব্রিজটি ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের খুবই অসুবিধা হতো। তাদেরকে সময় নিয়ে স্কুল কলেজে যেতো হতো। কেউ কেউ উপায় না পেয়ে পায়ে হেঁটেই যেতো। আর যারা রিকশা বা অটোরিকশা ব্যবহার করতো তাদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হতো। এখন ব্রিজটি মেরামত হওয়ায় যাতায়াত সহজ হয়েছে। সময় কমেছে, ভাড়াও কমেছে।
কৃষক ইউসুফ গরুর খাবার ঘাস সাইকেলে চড়ে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, এখন অনায়াসে গরুর জন্য ঘাস কেটে সাইকেলে করে চলাচল করতে পারি।
ব্রিজটি মেরামতের কারণে এই সুযোগ হয়েছে। কিছুদিন আগেও এই সুযোগ ছিল না।
মোটরসাইকেল আরোহী শাহীন বলেন, আগে ব্রিজটি ভাঙা ছিল। তখন মোটরসাইকেল নিয়ে পারাপার ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ব্রিজের দুইপাশে যানজট লেগে থাকতো। এক পাড়ের গাড়ি অপেক্ষা করতো, তারপর আরেক পাড়ের গাড়ি পারাপার হতো। এখন চলাচল নির্বিঘ্ন হয়েছে। আমাদের জন্য খুবই সুবিধা হয়েছে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এলজিইডিকে ধন্যবাদ জানাই।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বরুহা সেতুর মাইনর মেইন্টনেন্সের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বরুহা বাজার থেকে মারকোল বাজার পর্যন্ত সড়কে ধলেশ্বরী নদীর উপর স্থাপিত সেতুটি ১৫১ মিটার লম্বা। এই সেতুরে এক প্রান্তে সিলিমপুর ইউনিয়নের বিশাল গোলচত্ত্বর। যা মাহমুদ নগর গোলচত্ত্বর নামে পরিচিত। এই চত্ত্বরে গড়ে উঠছে বিরাট বাজার। অনেক দোকানপাট, অটোরিকশা ও টেম্পু স্ট্যান্ডের কারণে এই গোলচত্ত্বরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এই সেতুর মেইনটেনেন্সে খরচ হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ২৪৫ টাকা (প্যাকেজ ডব্লিউ-১৩৪)।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, সেতুটি মেরামত করার আগে খুবই জরাজীর্ণ অবস্থা ছিল। তখন যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হতো। যেহেতু সেতুটি একটা বড় নদীর উপর। সেহেতু সেতু ছাড়া এখানে বিকল্প কোনো পথও নেই। সেতুটি মেরামত করার পর এলাকাবাসীর খুবই উপকার হয়েছে। সিলিমপুর এলাকার মানুষ এখন সহজেই টাঙ্গাইল সদরে যেতে পারে।
আরেক বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, মাহমুদ নগর গোলচত্ত্বরে সকাল-বিকাল বিরাট বাজার বসে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই বাজারে আসে।
সেতুটির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন খুব সহজেই স্কুল কলেজে যেতে পারে। ব্যবসায়ীরা সহজে মালামাল আনা নেওয়া করতে পারে।
সেতু সংলগ্ন চায়ের দোকানদার বেলাল হোসেন বলেন, সেতুটি মেরমতের কারণে বহু মানুষের উপকার হয়েছে। বর্ষকালে ধলেশ্বরী নদীর দুই পাশ ডুবে যায়। তখন সড়কটাই শুধু জেগে থাকে। সেতু ছাড়া তখন যানবাহন চলাচলের কোন পথ থাকে না। সেতুটি সঠিক সময়ে মেরামত না করলে আগামী বর্ষায় খুবই বিপদ হতো।
মাহমুদ নগরের বাসিন্দা আবুল খায়ের বলেন, সেতুটি এই অঞ্চলের অর্থনীতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। সেতুটির কারণে এই অঞ্চলে ব্যবসার প্রসার বেড়েছে। মাহমুদ নগর বাজারটিতে বেচাকেনা বেড়েছে। মানুষের জীবন জীবিকার উন্নতি হয়েছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সুবিধা হয়েছে। টাঙ্গাইল সদরে যেতে এখন আর বেশি সময় এবং টাকা লাগে না। এক কথায় সেতুটি আমাদের জন্য একটি আর্শিবাদ।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মানিকগঞ্জ- সিংগাইর জসড়ক ও জনপথ সড়কের বেতিলা-বালিরটেক হাট সড়কে ৬০.৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। (প্যাকেজ নং এসইউপিআরবি/মানিক/রিপ্লেস/২১-২২/ডব্লিউ ৯৯)।
এর নির্মাণ খরচ ৫ কোটি ৪২ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৯ টাকা। বিশ^ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস এর আওতায় এটি নির্মাণ (রিপ্লেসমেন্ট) করা হচ্ছে।
সরেজমিনে নির্মাণাধীন সেতুটি পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সেতু নির্মাণের জন্য পিলার ঢালাইয়ের কাজ চলছে। শ্রমিকরা নির্দ্দিষ্ট পোশাক পরে রড সরানোর কাজ করছে। সেতুটির পাশেই শ্রমিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে টিনশেডের অস্থায়ী ঘর। যেখানে শ্রমিকরা দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করেন। আছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। টিনশেড ঘরের সামনেই ঝুলছে শ্রকিদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ফাস্ট এইড বক্স।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মানিকগঞ্জ- সিংগাইর জসড়ক ও জনপথ সড়কের বেতিলা-বালিরটেক হাট সড়কে ৬০.৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। ছবিতে র্নাণাধীন সেতুটির বিকল্প সড়ক। (প্যাকেজ নং এসইউপিআরবি/মানিক/রিপ্লেস/২১-২২/ডব্লিউ ৯৯)।
এই প্রকল্পের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হলো, সেতুটির বিকল্প সড়ক। সেতুর পাশেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিকল্প সড়ক। এই সড়ক দিয়ে অবাধে যানবাহন চলাচল করছে। স্থানীয় অটোচালক তারা মিয়া বলেন, সেতুটি আগে সরু ছিল। ডালাই ভেঙে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছিলো। সেতুর উপরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। এক পাশ দিয়ে খুব সতর্কতার সাথে কোনোরকমে যানবাহন চলাচল করতো। পুরাতন সেই সেতুটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটির বিকল্প একটি উঁচু সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। যেটি খুবই মজবুত এবং টেকসই। এই বিকল্প সড়ক দিয়ে এখন অবাধে যানবাহন চলাচল করতে পারে।
অটোচালক হারুনুর রশীদ বলেন, সেতুটি বড় আকারে নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে আমাদের খুবই সুবিধা হবে। আমরা সহজেই যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবো। তিনি বলেন, আগে এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে খুবই অসুবিধা হতো। সেতুটি ভাঙা থাকায় একটা একটা করে যানবাহন পারাপার হতো। তখন দুপাশে যানজট লেগেই থাকতো। এছাড়া দুর্ঘটনার ঝুঁকি তো ছিলই।
সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী হালিমা খাতুন বলেন, আগে আমরা এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে খুবই অসুবিধায় পড়তাম। সময় এবং খরচ দুটোই বেশি লাগতো। বিকল্প সড়কে এখন সময় ও খরচ বাঁচিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে। সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে আরও সুবিধা হবে।
আরেক মহিলা যাত্রী খায়রুন নেছা বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা এই সড়ক ব্যবহার করেই স্কুল কলেজে যায়। তিনি বলেন, আগে এই সড়কে কোনো রোগি বহন করা যেতো না। রোগির কষ্ট হতো। সময়ও বেশি লাগতো। এখন বিকল্প পথেই তা অনেক সহজ হয়েছে।