অনেক সরকার আসে আর যায় কিন্তু আমাদের রাস্তার কাজ কেউ করে না। ৪০ বছর ধইরে পাহাড়ের রাস্তার কোনো কাজ হয় না। আমার জন্মের পর থেকে এই রাস্তা দিয়ে কষ্ট করে চলাফেরা করছি। এভাবেই নিজেদের কষ্টের কথা জানাচ্ছিলেন জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা বিন্দু মারাক।
শুধু বিন্দু মারাক নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় এবং কাঁচা রাস্তাগুলো দীর্ঘদিন যাবত মেরামত না করায় কামালপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর প্রায় তিন হাজার সদস্যকে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ।
ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি অঞ্চল বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন। জেলা সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তরে এই পাহাড়ি জনপদে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছে গারো সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার সদস্য। পাহাড়ের দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে লোকালয়ে আসা কারো জন্য ঘণ্টা খানেকের, আবার কারো জন্য কয়েক ঘণ্টার। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-ত্বাত্তিক গোষ্ঠীর প্রায় তিন হাজার মানুষ।
পাহাড়ি অঞ্চলের একজন শিক্ষার্থী তৃষা দাংগো বলেন-‘গ্রীষ্মকালে আমরা স্কুলে আসতে পারলেও বর্ষাকালে রাস্তা খারাপ থাকায় স্কুলে আসা সম্ভব হয় না। আমরা চায় আমাদের এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হোক।’
দিঘলাকোনা গ্রামের লিটন সাংমা বলেন-এই রাস্তায় চলাফেরা করতে করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। গ্রীষ্ম কালে কিছুটা কষ্ট হলেও বর্ষাকালে এই রাস্তা দিয়ে একদম চলাফেরা করা যায় না। বর্ষাকালে একজন রোগীকে বকশিগঞ্জে নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্ট সাধ্য হয়ে যায়। বকশিগঞ্জে নিয়ে যেতে যেতে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।
পাহাড়ি অঞ্চলের হাতিবের কোনা গ্রামের প্রোদিন সাংমা বলেন,এই পাহাড়ের রাস্তায় কোনো গাড়ি-ঘোড়া চলতে পারে না। কোনো মালামাল নিতে হলে আমাদের মাথায় করে নিতে হয়। এছাড়াও ক্ষেত থেকে বাড়ি পর্যন্ত মাথায় করে ফসল নিতে হয়। আমাদের কষ্ট হয়। রাস্তাগুলো একটু সংস্কার বা উন্নয়ন করলে আমাদের কষ্ট কিছুটা কম হতো।
ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারন সম্পদাক পিটিশন সাংমা বলেন-এই পাহাড়ের সব রাস্তায় কাঁচা রাস্তা। সরকার যদি এই কাঁচা রাস্তাগুলো পাকা করে দিতো আর পুরাতন রাস্তাগুলো সংস্কার করে দিলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হতো। এই পাহাড়ে চলাফেরা করা খুবই কষ্টসাধ্য।
দিঘলাকোনা গ্রামের সাধু আন্দ্রে ধর্মপল্লীর ধর্ম গুরু ফাদার ডোমিনিক সরকার পিএসসি বলেন, বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই তুলনায় আমরা একেবারে জিরো। আমাদের গ্রামগুলোর রাস্তার কোনো উন্নতি হয়নি। সরকার যদি আন্তরিক হয়, তবে এই পাহাড়ি এলাকার রাস্তাগুলো একটু উন্নত হবে। ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর জনগন একটু শান্তিতে চলাফেরা করতে পারবে।
এসব বিষয়ে বকশিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা মোবাইল ফোনে বলেন-পাহাড়ে অঞ্চলের যে রাস্তা গুলো সংস্কার করা প্রয়োজন সেই রাস্তাগুলো সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার করা হবে। আর কোনো জায়গায় যদি নতুন রাস্তার প্রয়োজন হয় তাহলে স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে সেখানে নতুন রাস্তা তৈরি করার উদ্যোগ নিবে উপজেলা প্রশাসন।