Dhaka মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়ার জানাজা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে তাঁর বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে স্বামী মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এসব তথ্য জানান।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউতে বেগম জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার পর তাকে শহীদ রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

তিনি বলেন, জানাজার পর তাকে (বেগম খালেদা জিয়া) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।

আসিফ নজরুল জানান, তাকে দাফন করা হবে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশেই। মন্ত্রিপরিষদ সভায় প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানাজার বিষয়ে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। সভায় উপদেষ্টা বেগম খালেদা জিয়ার স্মৃতিচারণ করেন। সর্বশেষ সশস্ত্র বাহিনী দিবসে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছিল।

তিনি বলেন, জাতির এই বিশেষ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার খুব প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে তার অবস্থান অক্ষয় অবিনশ্বর হয়ে থাকবে। ওনার জানাজার নামাজে সেটা শৃঙ্খলার সঙ্গে ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালন করার অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এত শ্রদ্ধা, এত সম্মান, এত মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন নেত্রীর চলে যাওয়াকে একটা বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত শ্রদ্ধা, এত সম্মান, এত মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এরকম একজন নেত্রীর চলে যাওয়াটা একটা বিশেষ মুহূর্ত। আমরা প্রতিটা মানুষ এই শোকে একত্রিত হয়েছি। একত্রে আমরা আগামীকাল শোক পালন করব, এরপর দুইদিন শোক দিবস পালন করব। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের জন্য অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে তার যে জানাজা এবং দাফন হবে সেগুলো আমরা পালন করব।

খালেদা জিয়ার জানাজা বুধবার, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষায় অতন্ত্র প্রহরী, আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভোর ৬টায় শাহদাতবরণ করেছেন। গোটা জাতির মতো আমাদের সরকারে যারা আছেন তারা গভীরভাবে শোকাহত। এই শোকের ভেতর প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার শুরুতে বেগম জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা মোনাজাত পরিচালনা করেন। সভায় বেগম জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এবং বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় শোক প্রস্তাব পাশ হয়েছে। বিশ্বের যত জায়গায় বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে সেসব জায়গায় শোক বই খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অংশগ্রহণ করেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ওনাকে জেলখানায় বিভিন্ন সময় যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, ওনাকে আমরা হয়তো এত তাড়াতাড়ি হারাতাম না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বেগম জিয়ার এই মৃত্যুর পেছনে ফ্যাসিস্ট যে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা এবং ওনার যে সরকার ছিল, অবশ্যই তার দায় রয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, ওনাকে একটা প্রহসনমূলক রায়ে জেলখানায় পাঠিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে যেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, এটা যে প্রহসনের একটা রায় ছিল, এটা যে একটা সম্পূর্ণ সাজানো রায় ছিল, এটা আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল এবং রিভিউ এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত। সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিলের ডিভিশনের রায়ের মধ্যে বারবার বলা হয়েছে যে, বেগম জিয়াকে যেই মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ ভুলভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জিজ্ঞাংসাপ্রসূতভাবে ওনাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আপনারা সবাই লক্ষ্য করেছেন— আমাদের যা করার ছিল, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহম্মদ ইউনুস— উনি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় খোঁজখবর রেখেছেন, যা দরকার ছিল। ওনার যদি আবার বিদেশে পাঠানোর মতো অবস্থা থাকতো, অবশ্যই আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হতো। উনি ব্যক্তিগতভাবে এই জিনিসগুলো খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা হয়তো বেগম খালেদা জিয়াকে বছরখানেক বা বছর দুয়েক আগে যদি আমরা যদি পেতাম, হয়তো আমাদের পক্ষে কিছু একটা করা সম্ভব ছিল। আল্লাহর ইচ্ছা উনি চলে গেছেন। তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে উনি সারাদেশের মানুষের সম্মান, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিয়েছেন।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোকের প্রজ্ঞাপন জারি

খালেদা জিয়ার জানাজা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

প্রকাশের সময় : ১২:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে তাঁর বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে স্বামী মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এসব তথ্য জানান।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউতে বেগম জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার পর তাকে শহীদ রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

তিনি বলেন, জানাজার পর তাকে (বেগম খালেদা জিয়া) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।

আসিফ নজরুল জানান, তাকে দাফন করা হবে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশেই। মন্ত্রিপরিষদ সভায় প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানাজার বিষয়ে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। সভায় উপদেষ্টা বেগম খালেদা জিয়ার স্মৃতিচারণ করেন। সর্বশেষ সশস্ত্র বাহিনী দিবসে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছিল।

তিনি বলেন, জাতির এই বিশেষ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার খুব প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে তার অবস্থান অক্ষয় অবিনশ্বর হয়ে থাকবে। ওনার জানাজার নামাজে সেটা শৃঙ্খলার সঙ্গে ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালন করার অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এত শ্রদ্ধা, এত সম্মান, এত মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন নেত্রীর চলে যাওয়াকে একটা বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত শ্রদ্ধা, এত সম্মান, এত মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এরকম একজন নেত্রীর চলে যাওয়াটা একটা বিশেষ মুহূর্ত। আমরা প্রতিটা মানুষ এই শোকে একত্রিত হয়েছি। একত্রে আমরা আগামীকাল শোক পালন করব, এরপর দুইদিন শোক দিবস পালন করব। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের জন্য অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে তার যে জানাজা এবং দাফন হবে সেগুলো আমরা পালন করব।

খালেদা জিয়ার জানাজা বুধবার, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষায় অতন্ত্র প্রহরী, আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভোর ৬টায় শাহদাতবরণ করেছেন। গোটা জাতির মতো আমাদের সরকারে যারা আছেন তারা গভীরভাবে শোকাহত। এই শোকের ভেতর প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার শুরুতে বেগম জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা মোনাজাত পরিচালনা করেন। সভায় বেগম জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এবং বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় শোক প্রস্তাব পাশ হয়েছে। বিশ্বের যত জায়গায় বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে সেসব জায়গায় শোক বই খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অংশগ্রহণ করেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ওনাকে জেলখানায় বিভিন্ন সময় যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, ওনাকে আমরা হয়তো এত তাড়াতাড়ি হারাতাম না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বেগম জিয়ার এই মৃত্যুর পেছনে ফ্যাসিস্ট যে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা এবং ওনার যে সরকার ছিল, অবশ্যই তার দায় রয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, ওনাকে একটা প্রহসনমূলক রায়ে জেলখানায় পাঠিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে যেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, এটা যে প্রহসনের একটা রায় ছিল, এটা যে একটা সম্পূর্ণ সাজানো রায় ছিল, এটা আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল এবং রিভিউ এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত। সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিলের ডিভিশনের রায়ের মধ্যে বারবার বলা হয়েছে যে, বেগম জিয়াকে যেই মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ ভুলভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জিজ্ঞাংসাপ্রসূতভাবে ওনাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আপনারা সবাই লক্ষ্য করেছেন— আমাদের যা করার ছিল, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহম্মদ ইউনুস— উনি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় খোঁজখবর রেখেছেন, যা দরকার ছিল। ওনার যদি আবার বিদেশে পাঠানোর মতো অবস্থা থাকতো, অবশ্যই আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হতো। উনি ব্যক্তিগতভাবে এই জিনিসগুলো খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা হয়তো বেগম খালেদা জিয়াকে বছরখানেক বা বছর দুয়েক আগে যদি আমরা যদি পেতাম, হয়তো আমাদের পক্ষে কিছু একটা করা সম্ভব ছিল। আল্লাহর ইচ্ছা উনি চলে গেছেন। তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে উনি সারাদেশের মানুষের সম্মান, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিয়েছেন।