নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ প্রদান এবং দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগে করা পৃথক দুই মামলায় সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া মেজর মো. সাদিকুল হক ও তার স্ত্রী সুমাইয়া তাহমিদ যাফরিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসান শাহাদাত এই আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিন মেজর সাদিককে ভাটারা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এবং তার স্ত্রী যাফরিনকে গুলশান থানার মামলায় আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানায় ডিবি পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের গুলশান বিভাগের ইন্সপেক্টর মো. জেহাদ হোসেন গত ১৫ ডিসেম্বর মেজর সাদিককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। আদালত গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য ২৪ ডিসেম্বর ধার্য করেন। তবে ওইদিন সাদিককে আদালতে হাজির না করায় শুনানি হয়নি।
ওইদিনই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মেজর সাদিকের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আদালত গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি ও রিমান্ড বিষয়ে শুনানির জন্য এদিন ঠিক করেন।
এদিকে গত ২১ ডিসেম্বর জাফরিনের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন ডিবি পুলশের গুলশান জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর মোজাম্মেল হক মামুন। আদালত রিমান্ড বিষয়ে শুনানির দিন সোমবার রাখেন।
সকালে শুনানিতে মেজর সাদিক ও তার স্ত্রীকে আদালতে হাজির করা হয়।
প্রথমে মেজর সাদিককে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
আসামিদের পক্ষে এইচ এম আল আমিন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন প্রার্থনা করেন।
মেজর সাদিকের রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সামরিক আদালত থেকে গত ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে চাকুরিচ্যুত করে মেজর সাদিককে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে ঢাকা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করেছেন মর্মে জানা যায়। তিনি এ মামলার জড়িত সন্দেহভাজন আসামি। সেনাবাহিনীতে চাকরি করা অবস্থায় গত ৩ জুলাই এবং ৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দিনব্যাপী ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন কেবি কনভেনশন হলের ভেতর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যার কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একত্রিত হয়ে একটি গোপন সভা অনুষ্ঠিত করে তাদের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও সমর্থকদের উৎসাহিত এবং দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি বিষয়ক আলোচনা এবং প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছিল।
“মেজর সাদিক প্রধান প্রশিক্ষক এবং কানেক্টরের ভূমিকায় থেকে রুপগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচল সি-সেল নামক রিসোর্ট, পূর্বাচল নামক রিসোর্টে, কাটাবনের একটি রেস্টুরেন্ট, মিরপুর ডিওএইচএস সহ উত্তরায় ১২ নং নম্বর সেক্টর, আঞ্চলিক পাসপোর্টের বিপরীতে প্রিয়াংকা সিটিতে ২ নং গেইট সংলগ্ন তার স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনসহ তার ফ্ল্যাট বাসায় একাধিকবার এ ধরনের গোপন প্রশিক্ষণ/ওয়ার্কশপ করেছিল।”
আবেদনে আরও বলা হয়, “মেজর সাদিক অপারেশন ঢাকা ব্লকেডেরর কানেক্টরের ভূমিকায় ছিলেন। এ আসামি ওই সংগঠনের মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সংগ্রহ করে ডাটা এন্ট্রি, বিভিন্ন গোপন কোড তৈরিতে সহায়তা করে। তিনি অন্যান্য আসামিদের গোপন কোড এবং ওই কোডের অনুকূলে ছদ্মনাম প্রদানসহ অনলাইন সিগন্যাল অ্যাপ ও হোয়াটসঅ্যাপ এবং গুগলের মাধ্যমে ওই সংগঠনকে একত্রিত করার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে নিযুক্ত ছিল।
“কেবি কনভেনশন হলে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। তিনি গত ৩ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার ঘটনাস্থলে সশরীরে উপস্থিত থেকে সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগ যার কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০০/৪০০ জন নেতাকর্মীসহ প্রশিক্ষণ প্রদান এবং অনুষ্ঠানে প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মর্মে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। গ্রেপ্তার কয়েকজন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।”
গ্রুপের মাস্টারমাইন্ডদের শনাক্ত, ঘটনার সাথে জড়িত বিদেশে অবস্থান করা ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্তসহ ৮ কারণ দেখিয়ে তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিনের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, “এ মামলার গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের জবানবন্দি এবং স্থানীয়ভাবে তদন্তে জানা যায়, কারাগারে সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিন এ ঘটনায় মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের দেশের সার্বভৌমত্ব ও দেশের মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানো ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি প্রয়াসে একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের অর্থযোগানদাতা, পরামর্শদাতা ও নির্দেশদাতা হিসেবে সক্রিয়ভাবে দেশ বিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে। আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়। তিনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপের সাথে জড়িত সদস্যদের অর্থ যোগান দিয়ে থাকেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও আসামি ঘনিষ্ঠ লোকজন যারা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের প্রভাবশালী নেতাকর্মী তাদের সাথে আসামির নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ আসামি সারা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মীদের সুসংগঠিত করে দেশের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।”
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে, মামলার সাথে জড়িত ষড়যন্ত্রকারী ও অর্থ যোগানের উৎস খুঁজে পাওয়াসহ সাত কারণে তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্তকর্তা।
মেজর সাদিকের সন্ত্রাসবিরোধী মামলার বিবরণীতে বলা হয়, “গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন।
“তারা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তারা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন।”
এ ঘটনায় ১৩ জুলাই ভাটারা থানার এসআই জ্যোতির্ময় মন্ডল সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিনের মামলার বিবরণীতে বলা হয়, “গত ২২ এপ্রিল সকালে গুলশান-১ এর জব্বার টাওয়ারের পাশে ৩০ থেকে ৩৫ জন সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করে। আসামিরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। তারা দেশবিরোধী স্লোগান দেয়।
“পুলিশ সেখানে গিয়ে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। কয়েকজন পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ ওইদিনই গুলশান থানায় মামলা করে।”
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















