স্পোর্টস ডেস্ক :
ম্যাচের টস যখন হচ্ছে, তখনও মাঠে শেষ সময়ের প্রস্তুতি দেখভাল করছিলেন মাহবুব আলি জাকি। কে জানত, তার জীবনের শেষ সময় চলছে তখন! একটু পরই মাঠে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। সহকারী কোচকে হাসপাতালে পাঠিয়ে ম্যাচ খেলতে নামলেন ঢাকা ক্যাপিটালসের ক্রিকেটাররা। একটু পরই জানা গেল, ক্রিকেট ও জীবনের সীমানা পেরিয়ে গেছেন মাহবুব। ম্যাচের মাঝবিরতিতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হলো। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে ঢাকা ক্যাপিটালস পরে জিতে নিল ম্যাচ।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রাজশাহী ওয়ারিয়র্সকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিপিএল অভিযান শুরু করে ঢাকা ক্যাপিটালস। ম্যাচ জিতে প্রয়াত কোচকে জয় উৎসর্গ করেন অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন।
ম্যাচটি হয়েছে আগের দিনের উইকেটেই, যেখানে ১৯১ রান তাড়ায় বড় ব্যবধানে জিতে আসর শুরু করেছিল রাজশাহী। কিন্তু সেই ২২ গজেই এবার নাজমুল হোসেন শান্তর দল থমকে যায় স্রেফ মাত্র ১৩২ রানে।
সহজ রান তাড়ায় নিজেদের কাজ কঠিন করে তুলেছিল ঢাকা। তবে শেষ পর্যন্ত জিতে যায় তারা ৭ বল বাকি রেখে।
১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ ঢাকার পাকিস্তানি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরে প্রায় তিন বছর পর বিপিএল খেলতে নামা নাসির হোসেন উইকেট নেন ২টি।
ঢাকার রান তাড়ায় ৩৯ বলে ৪৫ রান করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। শেষ দিকে ক্যামিও ইনিংস খেলেন সাব্বির রহমান।
ম্যাচের শুরুটা ছিল নাটকীয়। প্রথম বলেই ইমাদ ওয়াসিমের লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে স্টাম্পড হয়ে যান সাহিবজাদা ফারহান। তানজিদ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে আভাস ছিল ধাক্কা সামাল দেওয়ার। তবে দুজনের কেউই লম্বা সময় পারেননি দলকে ভরসা জোগাতে।
নাসিরকে তিন বলের মধ্যে দুটি বাউন্ডারি মারার পর ফ্লাইটেড ডেলিভারি কাভারে তুলে দেন তানজিদ (১৫ বলে ২০)। পরের ওভারে আফগান পেসার জিয়াউর রহমানকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন শান্ত। পাওয়ার প্লেতে ৫২ রান তোলে দল।
পাঁচে নামা ইয়াসির আলি কিছুক্ষণ ক্রিজে কাটিয়ে উইকেট উপহার দেন ইমাদকে। পাকিস্তানি এই বাঁহাতি স্পিনারের স্পেলের স্রেফ দুই বল বাকি থাকতে ছক্কার চেষ্টায় উইকেট হারান শান্ত। আগের দিনের সেঞ্চুরি এবার ফেরেন ২৮ বলে ৩৭ রানে।
আগের দিন ফিফটি করে শান্তর সঙ্গে ম্যাচ জেতানো জুটি গড়া মুশফিকও এ দিন পারেননি প্রত্যাশা মেটাতে (২৩ বলে ২৪)। শেষ দিকে বড় শট খেলার সামর্থ্য আছে যাদের, সেই আব্দুল গাফফার সাকলাইন ও তানজিম হাসান পারেননি ঝড় তুলতে। এক প্রান্তে পড়ে থেকে দলকে ১৩০ পার করার মোহাম্মদ নাওয়াজ (২৬ বলে ২৬*)।
নাওয়াজ পরে বল হাতেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে তিন উইকেট নেন। কিন্তু দলকে জেতাতে যা যথেষ্ট হয়নি।
ঢাকা ক্যাপিটালসের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন ইমাদ ওয়াসিম। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নেন সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট। এছাড়া নাসির হোসেন নেন দুটি উইকেট। বাকি তিনটি উইকেট ভাগ করে নেন আরও তিন বোলার।
ঢাকার রান তাড়ার শুরুটা যদিও ভালো হয়নি। প্রথম ওভারেই রান আউট থেকে রক্ষা পান উসমান খান। সাইফ হাসানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ক্রিজের মাঝপথে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। কিন্তু খুব কাছ থেকেও স্টাম্পে লাগাতে পারেননি তানজিম। পরের ওভারেই সেই তানজিমের দারুণ ডেলিভারিতে বাতাসে ডিগবাজি খায় সাইফ হাসানের স্টাম্প।
উসমান পরে আউট হন ১৫ বলে ১৮ করে। অধিনায়ক মিঠুন ১২ রানে উইকেট উপহার দেন সান্দিপ লামিছানেকে।
ঢাকার ইনিংস এগিয়ে নেন মূলত আব্দুল্লাহ আল মামুন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে আগের ১৮ ম্যাচে তার গড় ছিল ১৩.২৩, স্ট্রাইক রেট ৯৯.৫৫। কখনও ৩০ রান করতে না পারা তরুণ ক্রিকেটার এবার করেন ৩৯ বলে ৪৫।
নাসির ক্রিজে গিয়ে ধুঁকতে থাকেন বেশ কিছুক্ষণ। পরে একটি ছক্কা মারলেও আউট হয়ে যান পরের বলেই। কাজ কিছুটা কঠিন হয়ে যায় ঢাকার। তবে দুই ফিনিশার শামীম হোসেন ও সাব্বির রহমান কাজ শেষ করেন অনায়াসেই।
২১ বলে যখন প্রয়োজন ৩২ রান, লামিছানের গুগলিতে দারুণ শটে ছক্কা মেরে চাপ সরিয়ে দেন সাব্বির। ওই ওভারের শেষ বলে শামীমের বাউন্ডারিতে ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়।
পরের ওভারে তানজিমকে বাউন্ডারি মারেন দুজন। এরপর বিনুরা ফার্নান্দোকে ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করে দেন সাব্বির।
১৩ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন শামীম, সাতে নেমে ১০ বলে অপরাজিত ২১ সাব্বির।
রাজশাহীর বোলারদের মধ্যে মোহাম্মদ নাওয়াজ ছিলেন সবচেয়ে সফল। তিনি ২১ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট। এছাড়া তানজিম সাকিব ও সন্দীপ লামিচানে একটি করে উইকেট শিকার করেন।
স্পোর্টস ডেস্ক 
























