Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৭ সন্তানই প্রতিষ্ঠিত, তবুও বাড়ি ছাড়তে হলো বৃদ্ধ বাবা-মাকে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় কৌশলে অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে বৃদ্ধ মা শেরিনা বেগম (৮৫) ও বাবা দাহারুল ইসলাম (৯০) বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন সন্তানরা। নিরুপায় হয়ে উপজেলার পুকুরিয়া এলাকায় বাল্যকালের বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। খবর পেয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত।

বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাত ১০টার দিকে উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামে দাহারুল ইসলামের বন্ধু আমিনুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজ নেন ইউএনও।

এর আগে বুধবার (৩ মে) উপজেলার শ্যামপুর শ্যামপুর ইউনিয়নের কামাটোলা বাবুপুর গ্রামে তার নিজ বাড়ি থেকে তাদের বের করে দেন সন্তানরা।

বৃদ্ধ দাহারুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে-মেয়েরা আমাদের ভরণপোষণ ও দেখাশোনা না করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী এখন অসহায় জীবনযাপন করছি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমাদের সাত ছেলে-মেয়ে। তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত। দুইজন শিক্ষক ও একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু সবাই আমাদের বের করে দিয়েছে। এখন আমার বাল্যকালের বন্ধু আমিনুল ইসলামের বাড়িতে আশ্রয়ে আছি।

বৃদ্ধা শেরিনা বেগম বলেন, বড় ছেলে রায়নুল হক ঢাকায় ব্র্যাকে চাকরি করে। মেজো ছেলে বাগির আলম ভারতের বাসিন্দা। সেজো ছেলে ইমরান আলি শাহবাজপুর সোনামসজিদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। ছোট ছেলে সাইদুর রহমান শিবগঞ্জের বড় ব্যবসায়ী। মেজো মেয়ে পারচৌকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর এক মেয়ের স্বামী তারাপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দুইজনের ১৩ বিঘা জমি ও ৪০ লাখ টাকা ছিল। সেই সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পর ছেলেমেয়েরা কেউ আশ্রয় না দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এমনকি আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দুটিও তাদের কাছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা জানান, এলাকার কয়েকটি প্রভাবশালী পরিবারগুলোর মধ্যে দাহারুল-শেরিনার পরিবার অন্যতম। ছেলে-মেয়ে বেশি হওয়ায় মা-বাবার দায়িত্ব কেউ নিতে চায় না। সন্তানরা সবাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার কারণেই বুধবার (৩ মে) বৃদ্ধ দম্পতি বাড়ি ছাড়া হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাহারুলের বড় ছেলে রায়নুল হক বলেন, তারা আমার বাবা-মা। কিন্তু এভাবে আপনাকে এসব কথা বলবো না। আর আপনি আমার মোবাইল নম্বর কোথায় পেয়েছেন? আপনার যা জানার আছে আমার অন্য ভাইয়ের কাছে জেনে নেন।

তবে দাহারুল-শেরিনার সেজ ছেলে ও শাহবাজপুর সোনামসজিদ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বাবা-মা তাদের সম্পত্তি সব ছেলেমেয়েদের ভাগ করে দিয়েছেন। সর্বশেষ চার বছর আগে বাগান বিক্রির ৮৫ লাখ টাকা ভাগের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা পেয়েছি। চার বছর ধরে আমি মা-বাবার দেখভাল করি। অন্য ভাইবোনরা কেউ তাদের খোঁজ নেন না। সম্প্রতি পারিবারিক ঝামেলার কারণে ভাইবোনদেরকে কিছু দিনের জন্য মা-বাবার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানালেও সাড়া পায়নি। এতে বাবা-মা ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন।

বৃদ্ধ দম্পতির দুই ছেলে রায়নুল ও সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোনে ব্যক্তিগত কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান। তারা বলেন, আপনারা আমাদের সাত ভাইবোনকে একত্রিত করেন, তারপর যা বলার বলব।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, দাহারুল-শেরিনার সন্তানদের উচিত হবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নৈতিকতার সঙ্গে জন্মদাতা ও গর্ভধারিণী মা-বাবাকে আশ্রয় দিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৃহস্পতিবার (৪ মে) তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তা দেখে জেলা প্রশাসক স্যার এই দম্পতির বিষয়ে খোঁজখবর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এরই প্রেক্ষিতে রাতেই তাদের কাছে ছুটে যাই এবং খোঁজখবর নিই।

তিনি আরও আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদেরকে কিছু ফলমূল, খাবার ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের সকল দায়িত্ব নেবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি। এই ঘটনার আর যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই লক্ষ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজের সুফল পাচ্ছে না সাত গ্রামের মানুষ

৭ সন্তানই প্রতিষ্ঠিত, তবুও বাড়ি ছাড়তে হলো বৃদ্ধ বাবা-মাকে

প্রকাশের সময় : ০৩:০৩:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ মে ২০২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় কৌশলে অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে বৃদ্ধ মা শেরিনা বেগম (৮৫) ও বাবা দাহারুল ইসলাম (৯০) বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন সন্তানরা। নিরুপায় হয়ে উপজেলার পুকুরিয়া এলাকায় বাল্যকালের বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। খবর পেয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত।

বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাত ১০টার দিকে উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামে দাহারুল ইসলামের বন্ধু আমিনুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজ নেন ইউএনও।

এর আগে বুধবার (৩ মে) উপজেলার শ্যামপুর শ্যামপুর ইউনিয়নের কামাটোলা বাবুপুর গ্রামে তার নিজ বাড়ি থেকে তাদের বের করে দেন সন্তানরা।

বৃদ্ধ দাহারুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে-মেয়েরা আমাদের ভরণপোষণ ও দেখাশোনা না করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী এখন অসহায় জীবনযাপন করছি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমাদের সাত ছেলে-মেয়ে। তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত। দুইজন শিক্ষক ও একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু সবাই আমাদের বের করে দিয়েছে। এখন আমার বাল্যকালের বন্ধু আমিনুল ইসলামের বাড়িতে আশ্রয়ে আছি।

বৃদ্ধা শেরিনা বেগম বলেন, বড় ছেলে রায়নুল হক ঢাকায় ব্র্যাকে চাকরি করে। মেজো ছেলে বাগির আলম ভারতের বাসিন্দা। সেজো ছেলে ইমরান আলি শাহবাজপুর সোনামসজিদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। ছোট ছেলে সাইদুর রহমান শিবগঞ্জের বড় ব্যবসায়ী। মেজো মেয়ে পারচৌকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর এক মেয়ের স্বামী তারাপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দুইজনের ১৩ বিঘা জমি ও ৪০ লাখ টাকা ছিল। সেই সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পর ছেলেমেয়েরা কেউ আশ্রয় না দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এমনকি আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দুটিও তাদের কাছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা জানান, এলাকার কয়েকটি প্রভাবশালী পরিবারগুলোর মধ্যে দাহারুল-শেরিনার পরিবার অন্যতম। ছেলে-মেয়ে বেশি হওয়ায় মা-বাবার দায়িত্ব কেউ নিতে চায় না। সন্তানরা সবাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার কারণেই বুধবার (৩ মে) বৃদ্ধ দম্পতি বাড়ি ছাড়া হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাহারুলের বড় ছেলে রায়নুল হক বলেন, তারা আমার বাবা-মা। কিন্তু এভাবে আপনাকে এসব কথা বলবো না। আর আপনি আমার মোবাইল নম্বর কোথায় পেয়েছেন? আপনার যা জানার আছে আমার অন্য ভাইয়ের কাছে জেনে নেন।

তবে দাহারুল-শেরিনার সেজ ছেলে ও শাহবাজপুর সোনামসজিদ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বাবা-মা তাদের সম্পত্তি সব ছেলেমেয়েদের ভাগ করে দিয়েছেন। সর্বশেষ চার বছর আগে বাগান বিক্রির ৮৫ লাখ টাকা ভাগের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা পেয়েছি। চার বছর ধরে আমি মা-বাবার দেখভাল করি। অন্য ভাইবোনরা কেউ তাদের খোঁজ নেন না। সম্প্রতি পারিবারিক ঝামেলার কারণে ভাইবোনদেরকে কিছু দিনের জন্য মা-বাবার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানালেও সাড়া পায়নি। এতে বাবা-মা ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন।

বৃদ্ধ দম্পতির দুই ছেলে রায়নুল ও সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোনে ব্যক্তিগত কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান। তারা বলেন, আপনারা আমাদের সাত ভাইবোনকে একত্রিত করেন, তারপর যা বলার বলব।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, দাহারুল-শেরিনার সন্তানদের উচিত হবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নৈতিকতার সঙ্গে জন্মদাতা ও গর্ভধারিণী মা-বাবাকে আশ্রয় দিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৃহস্পতিবার (৪ মে) তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তা দেখে জেলা প্রশাসক স্যার এই দম্পতির বিষয়ে খোঁজখবর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এরই প্রেক্ষিতে রাতেই তাদের কাছে ছুটে যাই এবং খোঁজখবর নিই।

তিনি আরও আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদেরকে কিছু ফলমূল, খাবার ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের সকল দায়িত্ব নেবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি। এই ঘটনার আর যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই লক্ষ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।