নিজস্ব প্রতিবেদক :
৭ জানুয়ারি নির্বাচনে এই সরকার পরাজিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, তাদের (সরকার) পায়ের নিচে মাটি নেই। অনেকে বলে, এই সরকার কি আরও পাঁচ বছর থাকবে? তখন বলি, স্বৈরাচার এরশাদ চলে যাওয়ার আগেও কি কেউ জেনেছিল তিনি চলে যাবেন? তিনিও গেছেন। আমি বলতে চাই, এই সরকার শূন্যের ওপর টিকে আছে। এদের পায়ের নিচে মাটি নেই। যে কোনো সময় সরকারের পতন হবে।
রোববার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, আমি তাদের উত্তরে বলি, ১৯৯০ সালে যেদিন এরশাদ সরকার এদেশ থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তার একদিন আগেও কি সেই সরকার জানতো যে এভাবে তাদের চলে যেতে হবে? জানতো না। আজকে আওয়ামী লীগ তাদেরৃ যেকথাটা বলছি, জনগণই হচ্ছে একটি এদেশের সরকারের ভিত্তি। সেই জনগণের ভিত্তি আস্তে সরে গিয়েছেৃ আজকে আওয়ামী লীগ শূন্যের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। যেকোনো মুহূর্তে এই সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হবে।
মঈন খান বলেন, আজকে আপনাদের উদ্দেশ্যে একটি কথা বলবো, হ্যাঁ আমরা রক্ত দিয়েছি, রক্ত আরও দিতে হবে। আমরা রাজপথে আন্দোলনে রয়েছি, আমাদের রাজপথে আন্দোলনে থাকতে হবে। তবে এই আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ শান্তিপ্রিয় এবং নিয়মতান্ত্রিক। আমরা বিশ্বাস করি, একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এদেশে ফিরিয়ে আনার আমাদের যে আন্দোলনের প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়া হবে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক। আমরা নিয়মনীতিতে বিশ্বাস করিৃ বিএনপি লগি-বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির এটাই হচ্ছে তফাৎ।
তিনি বলেন, সরকার কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দেয়। বাংলাদেশের সংবিধান স্পষ্টভাষায় বলে দিয়েছে, এই রাষ্ট্রের মালিক কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এই রাষ্ট্রের মালিক হচ্ছে জনগণ এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে অমোঘ বানী তিনি বলেছিলেন, জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণ তাদের সেই ক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচ বছরের জন্য কারো ওপরে তারা দেয়। কেননা ১৮ কোটি মানুষ তো দেশ শাসন করতে পারে না। সংসদে ৩০০ জন প্রতিনিধি থাকে, তারা একটি সরকার গঠন করে। সেই সরকার যদি ভুল করে যে, তারা চিরদিনের জন্য ক্ষমতা পেয়ে গেছে, যেটা আজকে সরকার করেছে, তাহলে কিন্তু তারা মারাত্মক ভুল করবে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, সংসদে যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি থাকে তারা একটি সরকার গঠন করে। সেই সরকার যদি ভুল করে যে, আমরা চিরদিনের জন্য ক্ষমতা পেয়ে গেছে সেটা আজকের সরকার মনে করছে। তাহলে কিন্তু তারা মারাত্মক ভুল করবে।
ক্ষমতার লোভ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছিল না জানিয়ে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, তিনি অত্যন্ত সরল জীবন যাপন করতেন। বিত্ত বৈভবের লোভ লালসা তিনি তার জীবনে কখনো দেখাননি। তিনি উৎপাদনের রাজনীতি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অর্থনীতির চালিকা শক্তি যদি আমরা সচল করতে না পারি, তাহলে স্বাধীনতার কোনো মূল্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে থাকবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির মঈন খান বলেন, আজকে দেশে দ্রব্যমূল্যের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। মানুষের জীবন ধারণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে চালের দাম, ডালের দাম কত হয়েছে দেখুন। এক রাতে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা হয়ে যায়। এগুলো কার অদৃশ্য খেলা? এই অবস্থা তো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় ছিল না। মুক্তবাজার অর্থনীতির কল্যাণে তিনি একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি বাংলাদেশে উপহার দিয়েছিলেন। এটাই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবনের অর্জন।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. ফজলুর রহমান, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।