Dhaka সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৫ মাসের শিশুকে গলা কেটে হত্যা করলেন মা

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

ঘুম ভাঙার আগেই ভোরবেলায় ছোট্ট কন্যাশিশুর কান্নায় মুখর হয়ে উঠেছিল পলাশবাড়ির এক ঘর। সবাই ভেবেছিল, মায়ের কোলে গিয়ে দুধ খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে সে। কিন্তু সেই কান্নাই পরিণত হলো মৃত্যু-চিৎকারে। মানসিক অসুস্থতায় ভোগা মা তুলসী রানী নিজের পাঁচ মাস বয়সী কন্যাকে ঘরে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। এরপর রক্তাক্ত শিশুটিকে স্বামী বাবু লালের হাতে তুলে দেন।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টার দিকে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পলাশবাড়ি গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। স্থানীয়রা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে।

সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, শিশুটির মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোক নেমে এসেছে। বাবা-শাশুড়ি-আত্মীয়স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। অথচ খুন করা সেই মা তুলসী রানী নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকেন—চোখে নেই অশ্রু, মুখে নেই কোনো প্রতিক্রিয়া। স্থানীয়রা বলছেন, একজন মা, যিনি পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কথা সন্তানের জন্য, তিনি কীভাবে সন্তানকে গলা কেটে মারতে পারেন!

শিশুটির বাবা হোটেলশ্রমিক বাবু লাল বলেন, কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। মাসখানেক ধরে বউ অসুস্থ। বাচ্চাটা আমার মায়ের কাছে থাকত। আজ ভোরে দুধ খাওয়ার জন্য কান্না করছিল। এ জন্য ওরে মার কাছে দেয়। মেয়েটার কান্না থামল, কিন্তু এভাবে থামবে ভাবিনি কোনো দিন।

শাশুড়ি পাতানী রানী বলেন, ৫-৬ দিন ধরে নাতনি আমার কাছেই ছিল। সকালে কান্না করছিল, তাই বউকে দিই দুধ খাওয়াতে। কিছুক্ষণ পর দেখি ছেলে হাতে করে গলাকাটা বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। বউ শুধু চুপ করে আছে।

গ্রামের মানুষ জানেন, তুলসী রানী বেশ কিছুদিন ধরেই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসক দেখাতে নেওয়ার কথা ছিল আজই। কিন্তু তার আগেই ঘটল এই অমানবিক পরিণতি।

তুলসী রানীর জা মায়া রানী বলেন, দিদি অসুস্থ ছিল। ওর চোখে-মুখে অস্থিরতা দেখা যেত। সে জন্য বাচ্চাটা শাশুড়ির কাছে ছিল। আজ ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কে জানত এর আগেই এমন হবে।

তুলসী রানীর ভাই মানিক মিয়া অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, আমার বোন সন্তানদের খুব ভালোবাসে। কিন্তু অসুস্থ থাকলে মানুষ স্বাভাবিক থাকে না। সুস্থ থাকলে এ কাজ কোনো দিন করত না।

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, ওই নারীকে আটক করা হয়েছে। তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। স্বজনেরা জানিয়েছেন, তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

৫ মাসের শিশুকে গলা কেটে হত্যা করলেন মা

প্রকাশের সময় : ১২:২৫:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

ঘুম ভাঙার আগেই ভোরবেলায় ছোট্ট কন্যাশিশুর কান্নায় মুখর হয়ে উঠেছিল পলাশবাড়ির এক ঘর। সবাই ভেবেছিল, মায়ের কোলে গিয়ে দুধ খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে সে। কিন্তু সেই কান্নাই পরিণত হলো মৃত্যু-চিৎকারে। মানসিক অসুস্থতায় ভোগা মা তুলসী রানী নিজের পাঁচ মাস বয়সী কন্যাকে ঘরে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। এরপর রক্তাক্ত শিশুটিকে স্বামী বাবু লালের হাতে তুলে দেন।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টার দিকে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পলাশবাড়ি গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। স্থানীয়রা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে।

সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, শিশুটির মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোক নেমে এসেছে। বাবা-শাশুড়ি-আত্মীয়স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। অথচ খুন করা সেই মা তুলসী রানী নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকেন—চোখে নেই অশ্রু, মুখে নেই কোনো প্রতিক্রিয়া। স্থানীয়রা বলছেন, একজন মা, যিনি পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কথা সন্তানের জন্য, তিনি কীভাবে সন্তানকে গলা কেটে মারতে পারেন!

শিশুটির বাবা হোটেলশ্রমিক বাবু লাল বলেন, কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। মাসখানেক ধরে বউ অসুস্থ। বাচ্চাটা আমার মায়ের কাছে থাকত। আজ ভোরে দুধ খাওয়ার জন্য কান্না করছিল। এ জন্য ওরে মার কাছে দেয়। মেয়েটার কান্না থামল, কিন্তু এভাবে থামবে ভাবিনি কোনো দিন।

শাশুড়ি পাতানী রানী বলেন, ৫-৬ দিন ধরে নাতনি আমার কাছেই ছিল। সকালে কান্না করছিল, তাই বউকে দিই দুধ খাওয়াতে। কিছুক্ষণ পর দেখি ছেলে হাতে করে গলাকাটা বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। বউ শুধু চুপ করে আছে।

গ্রামের মানুষ জানেন, তুলসী রানী বেশ কিছুদিন ধরেই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসক দেখাতে নেওয়ার কথা ছিল আজই। কিন্তু তার আগেই ঘটল এই অমানবিক পরিণতি।

তুলসী রানীর জা মায়া রানী বলেন, দিদি অসুস্থ ছিল। ওর চোখে-মুখে অস্থিরতা দেখা যেত। সে জন্য বাচ্চাটা শাশুড়ির কাছে ছিল। আজ ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কে জানত এর আগেই এমন হবে।

তুলসী রানীর ভাই মানিক মিয়া অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, আমার বোন সন্তানদের খুব ভালোবাসে। কিন্তু অসুস্থ থাকলে মানুষ স্বাভাবিক থাকে না। সুস্থ থাকলে এ কাজ কোনো দিন করত না।

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, ওই নারীকে আটক করা হয়েছে। তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। স্বজনেরা জানিয়েছেন, তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন।