নিজস্ব প্রতিবেদক :
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার সীমানাঘেষা ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া-মোল্লাবাজার সেতু। সেতুটির উত্তর পাড়ে কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ থানার মোল্লারহাট। অপর পাড়ে কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের সামান্য অংশ। এরপর থেকেই শুরু মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানের বালুচর ইউনিয়নের চরসাংহারদি (চসিমদ্দিন চর)।
সেতুটি নির্মাণ হলে এই পথে নিয়মিত চলাচলকারী কয়েক লাখ মানুষের ঢাকায় যাতায়াতে সময় কমবে। এতে যেমন দুর্ভোগ কমবে পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দুইপারের মানুষ।
সেতুটি ২০১৮ সালের ৬ জুলাই নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তিনবার মেয়াদ বৃদ্ধি করে সেতু নির্মাণ শুরুর প্রায় পৌনে ৫ বছর পর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার জানান কাজ চলছে। ৮টি পিলারের ওপর ৭টি স্প্যান বসিয়ে ২৫২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটি ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে ঢাকার সুরমা এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছেন।
সেতুটি নির্মাণ হলে মুন্সীগঞ্জ জেলা সদর, টঙ্গীবাড়ি বা লৌহজং উপজেলার মানুষ বেতকা হয়ে ঢাকার পোস্তগোলা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার পথ ৩০ মিনিটে যেতে পারবে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বা মোক্তারপুর হয়ে ঢাকায় পৌঁছতে সময় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। কেরানীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী কাজী মাহমুদুল্লাহ জানান, সেতুটি নির্মাণকাজে এখন গতি এসেছে। আজও ঢালাই চলছে। আশা করছি চলতি অর্থবছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে।
সেতুর ৭টি স্প্যানের মধ্যে ৩নং স্প্যান বসানোর কাজ চলছে আর ৮টি পিয়ারের মধ্যে ৫টি পিয়ার নির্মাণ সম্পন্ন বাকিগুলোর মধ্যে নদীর ২টি, পশ্চিম পাড়ের ১টিসহ মোট ৩টির কাজ বাকি। সেতুর পশ্চিম পাশে অ্যাপ্রোচ, সংযোগ সড়কের কাজ শুরুই হয়নি। তবে পূর্ব পাশে ১ বছর পূর্বে সামান্য বালি ফেলার পর এখন সেখানে কাজ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল হাসান মোল্লা জানান, মূলত প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বে ১ থেকে দেড় মাস সেতুর কাজের গতি আসে। বাকি সময় ৪-৫ জন শ্রমিক টুকুর টাকুর কাজ করে তো করে না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. শাকিল বলেন, সেতুটি নির্মাণ হলে মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী হয়ে ৪৫ মিনিটের কম সময়ে ঢাকা যাওয়া যাবে। এই পথে যাতায়াতে যানজটেও পড়তে হবে না। অথচ সেতুর কাজ শেষ না করে ফেলে রাখা হয়েছে। সেতু নির্মাণে সরকারি টাকায় কেনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম খোলা আকাশের নিচে অযত্নে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। অনেক মালামাল চুরি হয়ে গিয়েছে। এরপরও কতৃপক্ষের টনক নড়ছে না। দ্রুত কাজ শেষ করায় তাদের আগ্রহ একেবারেই নেই। এর পেছনে কি রহস্য থাকতে পারে তাও আমাদের মত সাধারণ মানুষের জানা সম্ভব হচ্ছে না।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর এলাকার বাসিন্দা রোকসানা আক্তার জানান, মুন্সিগঞ্জ সদর হয়ে বা অন্য পথে ঢাকায় যাওয়ার চেয়ে এই পথে আমরা খুব সহজে ও কমসময়ে ঢাকায় যেতে পারি। মোল্লাবাজার সেতুটি হলে আমরা নদীতে না নেমে আরও সহজে যাতায়াত করতে পারতাম। এখন আমাদের নদীতে ফেরির মত দেখতে ছোট নৌযান দিয়ে টাকার বিনিময়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। অনেকসময় রাতে জরুরী রোগী নিয়ে এই পথে যাওয়াটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিলো ৪বছর আগে। এখনো কেন কাজ শেষ হচ্ছে না তা আমরা খালি চোখে দেখে বুঝতে পারিনা। সংশ্লিষ্টদের উচিৎ দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, সেতুর পশ্চিম পাশে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি, করোনাকালীন কাজের গতি কমে যাওয়াসহ ঠিকাদারের গাফিলতিতে সেতু নির্মাণকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
আর ঠিকাদার সুরমা এন্টারপ্রাইজের আইয়ুব আলীকে সেতু এলাকায় পাওয়া যায়নি তার মুঠোফোনও বন্ধ। কর্মরত হেড রড মিস্ত্রি জানান, নক্সা বার বার পরিবর্তন হওয়ায় বিলম্বিত হয়েছে কাজ। এখনো পশ্চিম পাড়ে দ্বিতল ভবন রয়েছে সেতু নির্মাণের স্থানে তার কোনো সুরাহা হয়নি। সেতু নির্মাণস্থল মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা সংলগ্ন কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের মোল্লার হাট গিয়ে দেখা যায়, নদীর পূর্ব পাশে তিনটি পিলারের ওপর ২টি স্প্যান নির্মাণ করা হয়েছে।
নদীতে দুটি পিলার নির্মাণ ঢিলেঢালা চলছে। পশ্চিম পাশে ৩টি পিলার নির্মাণ হয়েছে ১টি স্প্যানের নির্মাণকাজ শেষের দিকে। আর ব্রিজের পশ্চিম পাশের শেষ স্প্যান সেখানে বসানো হবে তার নিচেই দ্বিতল একটি ভবনের অংশ রয়েছে। যা না ভাঙলে ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্ন হবে না। নির্মাণাধীন সেতুর সামান্য দক্ষিণ পাশ দিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গীবাড়ি, লৌহজং ও সিরাজদিখান উপজেলার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করে স্থানীয়ভাবে তৈরি ১টি ফেরি ও ২টি ট্রলারের মাধ্যমে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই সেতু নির্মাণ এলাকার দুই পাড়েই দেশের শীর্ঘস্থানীয় একাধিক হাউসিং। তারা কম দামে জমি ক্রয়ের জন্য সেতু নির্মাণকাজে ষড়যন্ত্র করছে। আর ছোট একটি নদী দিয়ে লাখো মানুষ, পণ্য সামগ্রী ও যানবাহন পারাপারে রয়েছে টাকার ছড়াছড়ি।
উপজেলা প্রকৌশলী আরও জানান, ব্রিজের পশ্চিম পাশের শেষ স্প্যানের নিচে থাকা দ্বিতল দালানটি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। ব্রিজের নিচ দিয়ে মোল্লা হাটে যাতায়াতের জন্য একটি সড়ক ও থাকবে।