নিজস্ব প্রতিবেদক :
ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাতে দীর্ঘদিন ধরে করছাড় দেওয়ার সমালোচনা করে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৫০ বছর ধরে আমরা করছাড় দিয়ে শিশু লালনপালন করছি; আর কতকাল লালন করব? আমি উদাহরণ দিলাম। আপনারা অনেকেই বুঝতে পারবেন।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। আগারগাঁও এনবিআর ভবনে এ অনুষ্ঠান হয়।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে শিশুদের এত দিন ধরে লালনপালন করা হয়েছে, তারা এখন শারীরিকভাবে বড় হয়ে গেছে। তারা এখনো বলে, ‘আমাদের সুরক্ষা দিন’; কিন্তু সুরক্ষার দিন তো চলে গেছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কর দিলাম না, চালান দিলাম না, করছাড় চাইলাম- আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে সিম্পল বিষয় নয়। সার্বিক ভাবে এর ইমপ্যাক্ট পড়ে। এই কর নিয়ে আমরাও বিপদে পড়ব, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যেও বিপদে তৈরি করব। আমাদের ট্যাক্স জিডিপি খুবই কম, যা অন্য কারো সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রেও লজ্জার মধ্যে ফেলে দেয়।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বেরিয়ে আসবে। তখন এই সুবিধা থাকবে না। এ ধরনের সুযোগ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তা না হলে আমরা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারব না। এসব বিষয় মাথায় রেখে সবাইকে অনুরোধ করবো আপনারা কর দিন।
কর, মূসক ফাঁকি দিলে সার্বিক অর্থনীতিতে একটা প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দাতাসংস্থাগুলো ট্যাক্স, জিডিপি রেশিও কর অব্যাহতি নিয়ে প্রশ্ন করছে। বিদেশের বহু জায়গায় বাংলাদেশে ট্যাক্স রেভিনিউ, সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে বহু প্রশ্ন করা হয়।
কর্মকর্তাদের আরও বেশি বন্ধুসুলভ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এ উপদেষ্টা বলেন, একেবারে জোর করে আদায় করবেন। যদি অসুবিধা হয় শুনবেন। কমপ্লায়েন্স করতে একটু সহযোগিতা করবেন। বিশেষভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের বিষয় সরকার বিবেচনা করবে।
এই উপদেষ্টা আরও জানান, ব্যবসায়ীরা তার কাছে এনবিআরের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ নিয়ে আসে। যদিও এনবিআরের অনেক সীমাবদ্ধতা ও ম্যান্ডেট আছে বলে ব্যবসায়ীদের মনে করিয়ে দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা আমার কাছে গেলেই এনবিআর নিয়ে অভিযোগ করে। আমি যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ছিলাম তখনও তারা অভিযোগ করতো। আমাদের এটা করতে হবে, ওটা করছে না। এনবিআরের সীমাবদ্ধতা আছে। তাদের কতগুলো ম্যান্ডেট আছে। চাইলেই সব তো দিয়ে দেওয়া যাবে না। নাথিং ইজ ফ্রি ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। বিনা পয়সায় কোনো কিছু, পশ্চিমা দেশে বাবা-মাও সন্তান একটু বড় হলে টাকা-পয়সা দেয় না। বিনা পয়সায় কিছুই দেয় না।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলে প্রায়োরিটি খাতে খরচ কমানো হবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জের মুখে আছি। ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও, কর ও ভ্যাট বাড়ানোর কথা বলছি, খরচ কমানোর কথা বলছি। আবার ওইদিকে বলছি প্রায়োরিটি সেক্টরে খরচ কমাবো না। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যাতায়াতে খরচ কম হবে না। আমরা টাকা কোথায় পাবো। ওখানে বাড়াতে হলে আমাদের রাজস্ব আদায় করতে হবে তো। এটা আমাদের বিবেচনায় আছে। মানুষের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিও আছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আব্দুল হক প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী।