স্পোর্টস ডেস্ক :
এক ইনিংসে অপরাজিত ৪০০। ব্রায়ান লারার সেই রেকর্ড এখনও ভাঙতে পারেননি কেউ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন নজির কেউ গড়তে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে আছে বেশ কয়েকটি। তবে বাংলাদেশের স্বীকৃত ক্রিকেটে এর আগে কেউ ছিলেন না।
ইতিহাস গড়লেন মুস্তাকিম হাওলাদার। চলছে দশম প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেট। ঢাকা বিভাগের গ্রুপ পর্বের এক ম্যাচে একাই চারশ করেছেন ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের মুস্তাকিম।
১৭০ বলে ৫০ চার, ২২ ছক্কায় ৪০৪ রান করে অপরাজিত! তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মুস্তাকিম। বাংলাদেশের স্বীকৃত ক্রিকেটে কোনো ব্যাটারের এটাই প্রথম ৪০০ রানের ঘটনা।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ঢাকা বিভাগের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল। আগে ব্যাটিং করতে নেমে মুস্তাকিমের অপরাজিত চারশ রানের ইনিংসে ক্যামব্রিয়ান স্কুল নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে তোলে ৭৭০ রান।
৭২ রানে দুই উইকেট পতনের পর মুস্তাকিম ও আরেক ব্যাটার সোয়াদ পারভেজ মিলে গড়েন ৬৯৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি! পারভেজ খেলেন ২৫৬ রানের ইনিংস।
সব পর্যায় বিবেচনায় দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে চারশো রানের কীর্তি গড়লেন মোস্তাকিম। ওপেনিং নামা এই ব্যাটার শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে খেলেন ১৭০টি বল। যার মধ্যে চারের মারের হাফসেঞ্চুরি করেছেন তিনি। তবে ৫০টি চারের সঙ্গে ছক্কাও মেরেছেন ২২টি।
তার সঙ্গী অধিনায়ক সাদও কম যাননি। খেলেছেন ২৫৬ রানের হার না মানা এক ইনিংস। যেখানে তিনি ৩২ চার ও ১৩টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। এরপর বল হাতেও ছিলেন দুর্দান্ত ৫.৪ ওভার বল করে ১৬ রানের খরচায় নেন ৪টি উইকেট। ১১ রানের বিনিময়ে বাকি ছয়টি উইকেট তুলে নেন হাসান হৃদয়। তাতে মাত্র ৩২ রানে গুটিয়ে যায় সেইন্ট গ্রেগরিস।
৭৭১ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গ্রেগরী হাইস্কুল অলআউট হয়েছে মাত্র ৩২ রানে। ফলে ৭৩৮ রানের বিশাল জয় লাভ করে ক্যামব্রিয়ান স্কুল। রানের হিসেবে স্কুল ক্রিকেটে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়।
ক্যামব্রিয়ান স্কুলের বোলারদের মধ্যে হাসান হৃদয় ১১ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৬ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া ব্যাট হাতে ২৫৬ রানের ইনিংস খেলা সোয়াদ পারভেজ বল হাতে নেন ৪টি উইকেট।
ম্যাচ শেষে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসেন মুস্তাকিম ও পারভেজ। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে চারশ রানের ইনিংস খেলার পথে সঙ্গীর সমর্থন পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান মুস্তাকিম।
তিনি বলেন, দুজনেরই আজকে ভালো ব্যাটে লাগছিল বল। তাই দুজন মিলেই শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। পঞ্চাশ রানে (আসলে ৭১) ২ উইকেট পড়ার পর একটু ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলাম। তখন এক দিকে আমি মেরে খেলছিলাম। আর ওকে বলেছিলাম ধরে খেলতে। ও (সাদ পারভেজ) আর আমি অনেক ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে খেলছি। ও আমাকে অনেক সহায়তা করেছে। শেষ দিকে তো ওভার কম ছিল। ও আমাকে স্ট্রাইক দিয়ে দিয়ে রানটা বেশি করাতে সাহায্য করেছিল। তাই ওকে ধন্যবাদ।
এরই মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগীয় পর্যায়ে খেলেছেন মুস্তাকিম। চলতি তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগে তেজকুনিপাড়া ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলছেন তিনি। এবার স্কুল ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার পর তিনি মুস্তাকিম বললেন, বড় কিছু করার বিশ্বাস ছিল তার। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল আজকে কিছু একটা করার। ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ করার চেষ্টা করছিলাম। পরে দেখলাম যে ভালো লাগছে, তখন মনে হচ্ছিল পারব। আগে অনেক জায়গায়, অনেক টুর্নামেন্টে এমন বড় বড় ইনিংস খেলেছি। তাই বিশ্বাস ছিল যে পারব।