নিজস্ব প্রতিবেদক :
অন্তর্বর্তী সরকারের ৪ থেকে ৫ জন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, তারা জনপ্রশাসনকে দলীয় সরকারে পরিণত করার চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিকে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটসহ ৫ দফা দাবিতে মৎস্য ভবন এলাকায় আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।
নায়েবে আমীর বলেন, উপদেষ্টাদের কণ্ঠ রেকর্ড আছে। সংশোধনের সুযোগ করে দিতে চাই। সময়মতো সাবধান না হলে জনসম্মুখে নাম প্রকাশ করা হবে। জনগণ যদি জানে তারা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে বেইমানি করছেন, তাহলে তাদের অবস্থা পতিত ফ্যাসিবাদের চেয়েও খারাপ হবে। নীলনকশার নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা চলছে। ২০১৮ ও ১৪ এর মতো নির্বাচন হলে জনগণ মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির পছন্দের ভোটে কার্যকরী সংসদ গঠন হবে। অথচ, প্রশাসনকে আবারও দলীয়করণের চেষ্টা চলছে। একটি দল কথায় কথায় সংস্কার চায়। আবার ঐকমত্যের কথায় তাদের পাওয়া যায় না। জুলাই সনদ বাস্তাবায়নের জন্য যেভাবে মাঠে নামতে হবে, সেভাবেই মাঠে নামবো আমরা।
কোনো একটি দলের পরামর্শে প্রশাসনকে আবারও দলীয়করণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই দলীয়করণ করা সরকার দিয়ে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। নীলনকশার নির্বাচন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমন নির্বাচনে দেশের মানুষ অংশ নেবে না, তেমনি মানবেও না। পূর্বের মতো বিতর্কিত নির্বাচন করলে দেশের মানুষ তা গ্রহণ করবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের ভেতরে ষড়যন্ত্র ঠেকাতে হবে। এখানে আরও মনোযোগ দিতে হবে। এটি করতে না পারলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। যেসব উপদেষ্টা একটি দলকে বিশেষ সুযোগ করে দিচ্ছেন, তাদের প্রত্যাহার করুন। নভেম্বরে গণভোট দিন। পিআর দাবি মেনে নিন। খুনিদের বিচার করুন। সুষ্ঠু ও ন্যায়পরায়ণ বিচার করুন। যেনতেন বিচার জামায়াত চায় না।
জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে গণভোটের বিকল্প নেই মন্তব্য করে নায়েবে আমীর বলেন, স্বদিচ্ছা থাকলে ২১ দিনেও গণভোট করা সম্ভব। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে নির্বাচন সংক্রান্ত ত্রুটি ধরা পড়বে।
তিনি বলেন, ৫ দফা দাবি আদায়ের জন্য যা যা দরকার সব করবো পর্যায়ক্রমে। তাওয়া গরম করছি এখন থেকে। জামায়াত দখলবাজি করে না, চাঁদাবাজি করে না। জামায়াত জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কৃষকের সব ঋণের সার্টিফিকেট মামলা তুলে ফেলা হবে।
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ২৪-এর আন্দোলন এ দেশের রাজপথের শেষ আন্দোলন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনের চেতনাকে কোনো কোনো দল ছুড়ে ফেলে দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য পাতানো নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে।
তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকার ও কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হয়। কিন্তু আমরা দেখছি তা হচ্ছে না তাদের পক্ষ থেকে। একদলীয় নির্বাচনের জন্য মহাষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
ডা. তাহের বলেন, কোনো একটি দলের আদর্শগত পুলিশ-প্রশাসন এবং সিভিল প্রশাসনের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সেই নির্বাচনে জনগণ অংশ নেবে না। যারা জুলাই শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছেন, আপনাদের পরিণতিও শেখ হাসিনার থেকে করুণ হবে।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, একটি দল মুখে বলে সংস্কার চায়, আবার সংস্কার বাস্তবায়ন করতে গেলে তখন প্যাঁচ লাগায়। যদি সংস্কার না হয় তাহলে জনগণকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করে দাবি আদায়ে বাধ্য করবো।
গণভোটে রাজি হওয়ায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, গণভোটে অনেক সংস্কারের বিষয় রয়েছে। যেটাতে নির্বাচনের প্যাটার্ন অনেক চেঞ্জ হবে। এই কারণে আগে গণভোট জরুরি।
ডা. তাহের বলেন, ধারাবাহিকভাবে কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে চাই না, যদি সহজেই দাবি আদায় হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, মহানগর দক্ষিণ সহকারী সেক্রেটারি শামসুর রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সেক্রেটারি জেনারেল ড. রেজাউল করিম।