নিজস্ব প্রতিবেদক :
চার বছর আগেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বঙ্গবাজার ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যালয় নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
বঙ্গবাজারকে আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল জানিয়ে ফজলে নূর তাপস বলেন, এই মার্কেটটা ২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তারপরও ব্যবসা পরিচালনা করা হয়েছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এই অগ্নিকাণ্ডের পর বলব যে সমস্ত জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো যেন এখন থেকে আর ব্যবহার করা না হয়। আমরা ঝঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছি। যারা ব্যবহার করে তাদের দায়িত্ব। তাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায়, তারা যেন ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এই সব মার্কেটে কার্যক্রমগুলো না করে।
মেয়র বলেন, বঙ্গবাজারের এই মার্কেটে আমরা ১০ বার নোটিশ দিয়েছি। আমরা নতুন ভবন নির্মাণের কার্যক্রম নিয়েছিলাম। ব্যবসায়ীরা সেখানে হাইকোর্টে মামলা করে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছে। আমরা নোটিশ দিয়েছি। নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি, আমাদের কাজ করেছি। কিন্তু যারা ব্যবহার করে তাদের দায়িত্ব ছিল এটি ব্যবহার থেকে বিরত রাখা। আমরা জোরপূর্বক বন্ধ করতে পারিনি। কারণ হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, স্থগিতাদেশ থাকলে ভেঙে ফেলতে পারব না। সিটি করপোরেশন বা যে কোনো সংস্থা যখন কোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে তখন স্থপনা হিসেবে ঝুকিপূর্ণ নির্ধারণ করি। সেখান থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারায় ক্ষয়ক্ষতি সীমিত করা গেছে। এর চেয়েও বেশি ক্ষতি হতে পারত। আগুন আরও ব্যাপক হতে পারত, আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যেতে পারত। আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও অন্য সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করেছে বলেই দ্রুততার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
ডিএসিসিসি মেয়র বলেন, আমরা অত্যন্ত ব্যথিত ও সঙ্কিত। খুব সহসাই দেখছি, বারবার বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। এর আগে এরকম কোনো নজির দেখিনি, এত ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটা। ভোর ৬টায় অগ্নিকাণ্ডের পর সব সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন একত্রিত ও সমন্বিতভাবে সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নেমেছে। যার ফলশ্রুতে কোনো জানের ক্ষতি হয়নি। মালামালের ক্ষতিও সীমিত করা গেছে। অনেক মালামাল দ্রুত সরিয়ে নিয়ে গেছে।
শেখ তাপস বলেন, আগুন সীমারেখা মানে না। পুলিশ হেড কোয়ার্টারেও চলে এসেছিল। সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সীমিত ক্ষতি মাথায় রেখে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে এবং নির্বাপণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের আজকের দিনটা অর্জনের দিন ছিল। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল ছিল। সকাল থেকে আনন্দ উপভোগ করব, সেখানে এই অগ্নিকাণ্ড। আমরা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমাবেদনা জানাই। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষুদ্র বিনোয়োগকারীদের পুর্নবাসনের।
এর আগে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত হয়। বঙ্গবাজার থেকে আশপাশের আরও চারটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, ৬৫০ জন জনবল নিয়ে ৪৮টি ইউনিট বেশ কয়েক ঘণ্টা কাজ করে বঙ্গবাজার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজারের কয়েকটি মার্কেটের প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে দোকান মালিক সমিতি।
তারা বলছেন, এ ঘটনায় দুই হাজার কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। কয়েক হাজার ব্যবসায়ী সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
একইসঙ্গে ঈদের আগেই এসব মার্কেটে কর্মরত অর্ধ লাখ কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ার এবং বেতন না পাওয়ার শঙ্কা কাজ করছে।
বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা, আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।