Dhaka রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে যমুনা ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি রাশেদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলারকারীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় না আনলে যমুনা ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিকেলে নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন তিন এমন হুঁশিয়ারি দেন।

রাশেদ খান বলেন, যারা অন্যায় করেছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের আইনের আওতায় না আনলে আমরা যমুনা ও সচিবালয় ঘেরাও করব। আর হামলাকারীদের গ্রেফতারে ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত।

তিনি বলেন, এতদিন পার হলেও স্পষ্ট সিসিটিভি ও ভিডিও থাকার পরেও হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। আমরা সন্দিহান যে, তাদের গ্রেফতার করা হবে কি না। তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও আমাদের কাছে তদন্ত করতে এখনও আসেনি।

রাশেদ খাঁন বলেন, ১৭ দিন ধরে নুরুল হক নূর হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। আজ তিনি রিলিজ নিতে চেয়েছিলেন। এর কারণ হলো এত দীর্ঘ সময় হাসপাতলে থাকা একজন জাতীয় নেতার জন্য অনেক বেদনাদায়ক। কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নুরের এখনো রিলিজ নেওয়ার সময় হয়নি। এখন পর্যন্ত তার নাকের হাড় ভাঙা, চোয়াল ভাঙা, মাড়িতে আঘাত লাগার কারণে তিনি শক্ত কোনো খাবার খেতে পারছেন না, তার মাথায়ও আঘাত লেগেছে।

গণঅধিকার পরিষদের (জিওসি) মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ১৭ দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ফারুক হাসান বলেন, আমরা আজ স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিচ্ছি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার যদি অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো অ্যাকশন না নেয়, তাহলে ৪৮ ঘণ্টা পর আমরা রাজপথে কঠোর কর্মসূচির দিকে ধাবিত হব। সেই কর্মসূচি কী ধরনের হবে, সময়মতো সবাই বুঝতে পারবেন এবং সরকারও টের পাবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার নূরের ওপর হামলার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। ওই কমিশনের কার্যকাল ৩০ কার্যদিবস নির্ধারণ করেছে, যা মূলত প্রতারণামূলক একটি পদক্ষেপ। দিনের আলোর মতো পরিষ্কার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সরকার দীর্ঘ সময় তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করছে। গণমাধ্যমের ভিডিওতে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য ও পুলিশের উপস্থিতিতে নূরকে রক্তাক্ত করা হয়েছে—এমন ফুটেজও রয়েছে। তারপরও আজ পর্যন্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার নূরকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা থাকলেও নতুন কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ফারুক হাসান বলেন, ‘গতকাল রাতে হঠাৎ করে নূরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নতুন জটিলতা ধরা পড়েছে। তার নাসায় হাড় ভাঙার জটিলতা বেড়েছে, ম্যান্ডিবল (চোয়াল) অংশে ডিসপ্লেসমেন্ট হয়েছে, ফলে ডান পাশের চোয়াল আংশিক অবসরে আছে। তিনি এখন পর্যন্ত সলিড খাবার খেতে পারছেন না, ডাক্তাররা তাকে লিকুইড খাবারের উপর রেখেছেন। এছাড়া লিভারে আঘাতজনিত জটিলতাও ধরা পড়েছে। তাই ডাক্তাররা তাকে আরও কিছুদিন হাসপাতালে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ডা. মোহাম্মদ ইউনূস প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দ্রুত নুরকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু আমরা যথেষ্ট গড়িমসি লক্ষ্য করছি। শুরুতে সিঙ্গাপুর নেওয়ার কথা বলা হলেও পরে ভিন্ন ভিন্ন দেশের কথা বলা হচ্ছে। এতে সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি স্পষ্ট।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকারের এ ধরনের টালবাহানা প্রতারণামূলক। তাই সরকার ঘোষিত প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর না করে আমরা দলীয় ও পারিবারিকভাবে নুরকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। সরকারের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর আমরা নির্ভর করব না।’

গত শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় কাকরাইলে জাপা ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জাপার কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের একটি মিছিল যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। গুরুতর আহত নুরসহ ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলের মৃত্যুদণ্ড

৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে যমুনা ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি রাশেদের

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৫:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলারকারীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় না আনলে যমুনা ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিকেলে নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন তিন এমন হুঁশিয়ারি দেন।

রাশেদ খান বলেন, যারা অন্যায় করেছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের আইনের আওতায় না আনলে আমরা যমুনা ও সচিবালয় ঘেরাও করব। আর হামলাকারীদের গ্রেফতারে ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত।

তিনি বলেন, এতদিন পার হলেও স্পষ্ট সিসিটিভি ও ভিডিও থাকার পরেও হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। আমরা সন্দিহান যে, তাদের গ্রেফতার করা হবে কি না। তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও আমাদের কাছে তদন্ত করতে এখনও আসেনি।

রাশেদ খাঁন বলেন, ১৭ দিন ধরে নুরুল হক নূর হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। আজ তিনি রিলিজ নিতে চেয়েছিলেন। এর কারণ হলো এত দীর্ঘ সময় হাসপাতলে থাকা একজন জাতীয় নেতার জন্য অনেক বেদনাদায়ক। কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নুরের এখনো রিলিজ নেওয়ার সময় হয়নি। এখন পর্যন্ত তার নাকের হাড় ভাঙা, চোয়াল ভাঙা, মাড়িতে আঘাত লাগার কারণে তিনি শক্ত কোনো খাবার খেতে পারছেন না, তার মাথায়ও আঘাত লেগেছে।

গণঅধিকার পরিষদের (জিওসি) মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ১৭ দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ফারুক হাসান বলেন, আমরা আজ স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিচ্ছি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার যদি অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো অ্যাকশন না নেয়, তাহলে ৪৮ ঘণ্টা পর আমরা রাজপথে কঠোর কর্মসূচির দিকে ধাবিত হব। সেই কর্মসূচি কী ধরনের হবে, সময়মতো সবাই বুঝতে পারবেন এবং সরকারও টের পাবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার নূরের ওপর হামলার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। ওই কমিশনের কার্যকাল ৩০ কার্যদিবস নির্ধারণ করেছে, যা মূলত প্রতারণামূলক একটি পদক্ষেপ। দিনের আলোর মতো পরিষ্কার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সরকার দীর্ঘ সময় তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করছে। গণমাধ্যমের ভিডিওতে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য ও পুলিশের উপস্থিতিতে নূরকে রক্তাক্ত করা হয়েছে—এমন ফুটেজও রয়েছে। তারপরও আজ পর্যন্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার নূরকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা থাকলেও নতুন কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ফারুক হাসান বলেন, ‘গতকাল রাতে হঠাৎ করে নূরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নতুন জটিলতা ধরা পড়েছে। তার নাসায় হাড় ভাঙার জটিলতা বেড়েছে, ম্যান্ডিবল (চোয়াল) অংশে ডিসপ্লেসমেন্ট হয়েছে, ফলে ডান পাশের চোয়াল আংশিক অবসরে আছে। তিনি এখন পর্যন্ত সলিড খাবার খেতে পারছেন না, ডাক্তাররা তাকে লিকুইড খাবারের উপর রেখেছেন। এছাড়া লিভারে আঘাতজনিত জটিলতাও ধরা পড়েছে। তাই ডাক্তাররা তাকে আরও কিছুদিন হাসপাতালে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ডা. মোহাম্মদ ইউনূস প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দ্রুত নুরকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু আমরা যথেষ্ট গড়িমসি লক্ষ্য করছি। শুরুতে সিঙ্গাপুর নেওয়ার কথা বলা হলেও পরে ভিন্ন ভিন্ন দেশের কথা বলা হচ্ছে। এতে সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি স্পষ্ট।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকারের এ ধরনের টালবাহানা প্রতারণামূলক। তাই সরকার ঘোষিত প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর না করে আমরা দলীয় ও পারিবারিকভাবে নুরকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। সরকারের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর আমরা নির্ভর করব না।’

গত শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় কাকরাইলে জাপা ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জাপার কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের একটি মিছিল যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। গুরুতর আহত নুরসহ ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।