আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভূমিধস জয়ে ৫৩৮ ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে মোট ২৭৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তিনি। এর ফলে ১২০ বছর আগে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের রেকর্ডে ভাগ বসালেন তিনি। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয় ভোটগণনা। শুরু থেকেই ইলেক্টোরাল ভোটের লড়াইয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জয় থেকে মাত্র ৩ ভোট দূরে থাকা ট্রাম্প সুইং স্টেট উইসকনসিনে জয় পেয়েছেন। এর মাধ্যমে তার ২৭৭টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত হয়েছে, যার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মাইলফলক অতিক্রম করে তার প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রকাশিত নির্বাচনী ফল অনুযায়ী, মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য ২৭০টির প্রয়োজন। আর এই ম্যাজিক ফিগার অতিক্রম করে ২৭৭ ভোটে পৌঁছে যান। মূলত দেশটির নির্বাচনে ফল নির্ধারণী ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্য খ্যাত জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, মেইন, পেনসিলভানিয়ায় লাল শিবিরের জয়ে হোয়াইট হাউসের মসনদ নিশ্চিত হয় ট্রাম্পের।
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় ভাষণের কিছুক্ষণ আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে কমালা হ্যারিসের নির্বাচনি রাতের পার্টির জায়গায় একদম ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে।
হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কমালা হ্যারিসের বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি বক্তৃতা দেবেন না জানানোর পর উপস্থিত সবাই পরিত্যক্ত চেয়ার আর পতাকা ফেলে রেখে বাড়ি ফিরে যান। শুধু ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটই বেশি পাননি ডোনাল্ড ট্রাম্প, বরং পপুলার ভোটও প্রায় ৫০ লাখ বেশি পুড়েছেন নিজের ঝুলিতে। এর আগে, ফ্লোরিডার পাম বিচ কাউন্টি কনভেনশন সেন্টারে লাল ঢেউয়ের গর্জনে মেতে ওঠা সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমেরিকা আমাদের এক অভূতপূর্ব ও শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে।’’
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় পরের বছরের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব চালান ট্রাম্পের কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে চালানো ওই সহিংসতার পর ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখেছিলেন অনেকে। কিন্তু সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে নিজ দলের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনী দৌড় থেকে দূরে সরিয়ে দেন তিনি।
এরপর মার্কিন অর্থনীতিতে জেঁকে বসা মুদ্রাস্ফীতি আর দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দশায় ভোটারদের উদ্বেগকে পুঁজি করে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি। ‘‘আমেরিকা ফার্স্ট’’ নীতির কথা জানিয়ে দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসনের অবসানের রূপকল্প তুলে ধরে ভোটারদের মন জয় করেন তিনি।
বিপরীতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসী পরিবারের সন্তান কমালা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রকে অভিবাসীদের জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে তুলবেন বলে ভোটারদের কাছে কমালার বিষোদগার করেন। শেষ পর্যন্ত মার্কিন রাজনীতির বিদ্বেষ আর বিভাজনের রূপরেখায় কমালা হ্যারিসকে হারিয়ে দিলেন রিপাবলিকান ট্রাম্প।
ভোটের পর বুধবার হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সমর্থকদের নিয়ে ইলেকশন নাইট পার্টিতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল কমালা হ্যারিসের। কিন্তু নির্বাচনের ফলে বিপর্যয়ের আভাস মেলায় সেই অনুষ্ঠান স্থলে যাননি তিনি। সেখানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে খালি চেয়ার আর জনশূন্য মঞ্চ। তবে হ্যারিসের নির্বাচনী প্রচার শিবিরের কো-চেয়ারম্যান সেড্রিক রিচমন্ড মধ্যরাতের পর জনতার উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বুধবার দিনের কোনও এক সময় জনসম্মুখে কথা বলবেন কমালা হ্যারিস।