নিজস্ব প্রতিবেদক :
টানা ৩২ বছর কারাগারে থাকা আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া (৭৩) অবশেষে মুক্তি পেলেন। দীর্ঘ সময়ে ২৬ জনের ফাঁসি দিয়েছেন তিনি।
রোববার (১৮ জুন) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ চন্দ্র ঘোষ।
তিনি জানান, শাহজাহান ভূঁইয়ার মোট সাজা হয়েছিল ৪২ বছর। তার মধ্যে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিন রেয়াত পেয়েছেন। প্রায় ৩২ বছরের সাজা শেষে তিনি মুক্তি পেলেন। জল্লাদ শাহজাহান ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসি দিয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, চারজন যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি নেতা বাংলাভাইসহ দুজন জেএমবি সদস্য এবং আরও ১৪ জন অন্য আলোচিত মামলার আসামির ফাঁসি কার্যকর করেছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, শাহজাহানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জরিমানার ১০ হাজার টাকা কারা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করেছে।
শাহজাহান ভূঁইয়ার বাড়ি নরসিংদীর পলাশ থানার ইছামতী গ্রামে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ। মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।
জানা গেছে, সাজার মেয়াদ কমানোর বাসনায় কয়েদি থেকে জল্লাদ বনেছিলেন শাহজাহান। জল্লাদ শাহজাহান দেশের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসির প্রধান জল্লাদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৯১ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় শাহজাহানের ১৪৩ বছরের সাজা হয়। পরে ৮৭ বছরের সাজা মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাজা ৪৩ বছরে এসে নামে। দুটি মামলায় পাঁচ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস করে অতিরিক্ত এক বছর জেল খেটে ৩২ বছর পর ১৮ জুন মুক্ত আকাশে শ্বাস ফেলার সুযোগ পাবেন জল্লাদ শাহজাহান।
সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে শাহজাহান তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করেন। এরপর কারাগারে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় আসলেই ডাক পড়তো তার। টানা আট বছর এই কাজ করার পর কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের স্বীকৃতি দেন।
এদিকে, সকাল থেকেই শাহজাহানের মুক্তির খবর সংগ্রহের অপেক্ষায় জেল গেটের ভিতরে অবস্থান করছিল সাংবাদিকরা। এ সংবাদ লেখার সময় সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত জল্লাদ শাহজাহানের কোনো স্বজনদের দেখা পাওয়া যায়নি।