নিজস্ব প্রতিবেদক :
সদ্য বিদায়ী সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো এক প্রকার বন্ধ রেখেছিলেন প্রবাসীরা। এতে হঠাৎ কমে যায় রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ। রেমিট্যান্স আসা থমকে যায়।
তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ আবার হু হু করে বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ২৮ দিনে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৭ কোটি (২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আগস্টের ২৮ দিনে বৈধ পথে ২০৭ কোটি ১০ লাখ (২.০৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৪ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। রেমিট্যান্সের এ অঙ্ক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি এসেছে। গত বছরের (২০২৩) আগস্টে ২৮ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এপ্রিল মাস থেকে টানা তিন মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এলেও জুলাই মাসে তা কমে যায় এবং দুই বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
তিনি বলেন, এখন প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। তাদের সচেতন করা হচ্ছে। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ বৈধপথে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগের মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এছাড়া এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আগস্ট মাসের রিজার্ভের এ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রোস বা মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৬৫ কোটি মার্কিন ডলার (২৫.৬৫ বিলিয়ন)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন দুই হাজার ৬০ কোটি ডলার ( ২০.৬০ বিলিয়ন)।
অন্যদিকে, গত ৩১ জুলাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (বিপিএম৬) অনুযায়ী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২১ আগস্টে এসেও তা একই অবস্থায় থাকে। তবে ২৮ আগস্ট তা কিছুটা বেড়ে ২০ দশমিক ৫৯ বিলিয়নে দাঁড়ায়।
আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে গতকাল বুধবার জানান, দেশের রিজার্ভ এখন কমবে না।