নিজস্ব প্রতিবেদক :
২৮ তারিখ লাল কার্ড খেয়ে বিএনপি বিদায় নিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে জনগণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রা মঞ্চ থেকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপি লাল কার্ড খেয়ে বিদায় নিয়েছে। বিএনপি ভুয়া। তাদের নেতা নেই নির্বাচন ও আন্দোলন করবেন কাকে দিয়ে? ৭০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে। ১৮৯৬ জন ফাইনাল খেলায় অংশ নিচ্ছে। ৭ জানুয়ারি তারা খেলবে নাশকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেদিন খেলা হবে, ফাইনাল খেলা হবে।
১৮৯৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ও ২৭টি দল আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাহলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না যারা বলে, তারা ভুয়া। টিআইবি ভুয়া, ইফতেখার ভুয়া, সুজন ভুয়া, বদিউজ্জামান ভুয়া। এগুলো সব ভুয়া। এগুলো সব বিএনপির দোসর। ২৮ তারিখে লাল কার্ড খেয়ে বিএনপি বিদায় নিয়েছে। বিএনপি ভুয়া, ধানের শীষ ভুয়া।
ভোটকেন্দ্রে আসতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান ভুয়া। তার কথায় আর আন্দোলন হবে না। ৭০ শতাংশ লোক শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে, এটা বিদেশি সমীক্ষায় এসেছে। তাই যারা ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা দিবে, ভোট দিতে বাধা দিবে, তাদের প্রতিহত করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারেক রহমানের সাহস নেই। থাকলে এখানে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিত, জেলে যেত। যে জেলে যেতে ভয় পায়, তার নেতৃত্বে আন্দোলন হবে না
বিএনপি নেতারা অন্ধকারে থেকে বক্তব্য দেয়, ছবি তোলে মন্তব্য করে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, কুয়াশার মধ্যে ১০-১২ জন নিয়ে মিছিল করে। এটা বুঝি আন্দোলন? বিএনপির আন্দোলন ভুয়া।
তিনি বলেন, আগামী বছর আবার আন্দোলন হবে। বিএনপি এই বছর আর পারলো না। আগামী বছর আন্দোলন শুরু হবে। রোজার ঈদ, কোরবানির ঈদ করে পাঁচ বছর কেটে যাবে। পাঁচ বছরের শেষে গিয়ে আবারও আন্দোলন। তারেক রহমান লন্ডনে আছে। তারেকের সাহস নেই। এলে এখানেই মোকাবিলা করতো। রাজপথে থাকতো, জেলে যেতো। জেলে যেতে যার ভয়, সে তো ভুয়া। তারেক রহমান ভুয়া, তার কথা ভুয়া। আন্দোলন আর হবে না।
বিএনপির ২১ হাজার নেতাকর্মী জেলে নেই দাবি করে তিনি আরও বলেন, তারা বলে ২১ হাজার নাকি জেলে, মিথ্যা কথা বলে। আমি খবর নিয়েছি জেলে আছে ১১ হাজার। আজ জামিনে বেরিয়েছে ২ হাজার। ২১ হাজারের তথ্য ভুয়া।
এ সময় ঢাকা জেলা ও মহানগরের ১৯টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে বাধা দেবে, তাদের প্রতিহত করে শেখ হাসিনাকে পঞ্চমবারের মতো বিজয়ের বন্দরে নিয়ে পৌঁছাব। সামনে আসছে ভালো দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।
ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনাকে ইসরাইলের হামলার সঙ্গে তুলনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইসরাইলীদের যে গণহত্যা ও শিশুহত্যা চলছে, সেই একই দৃশ্য আজ আমরা দেখেছি।
তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে স্বার্থের রক্ষক। যারা ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ করে না, তারা ভোট নিয়ে ধর্মের কথা বলে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ফিলিস্তিনের ঘটনার যারা প্রতিবাদ করে না তারা খাঁটি মুসলমান না। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি হামলার শেখ হাসিনাই প্রথম প্রতিবাদ করেন। বিএনপি-জামায়াত প্রতিবাদ করেনি। তারা সমমনা। তারা এলোমেলো জগাখিচুড়ি ঐক্য করেছে।
নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সামনে আছে ভালো দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কোরআন শরিফ পড়ে যিনি দিন শুরু করেন, তিনি হলেন শেখ হাসিনা। তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে বলেছেন- নারী হত্যা বন্ধ করো, শিশু হত্যা বন্ধ করো। বিএনপি কী বলেছে? কিছু না, জামায়াতও বলে নাই, ওরা সব ভুয়া।
পদ্মা সেতু নিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, দিন যায়, রাত যায়, স্পিড বোট আসে না। নদীর তীরে মা মারা গেছে। সে নদীর তীরে কত মায়ের প্রাণ চলে গেছে, সে সেতু কে তৈরি করেছে? শেখ হাসিনা। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কে পাঠিয়েছে? কাকে ভোট দেবেন?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজ মেয়েরা সুপ্রিম কোর্টের জাস্টিস, সচিবালয়ের সচিব। মেয়েরা যেখানেই যায় হয় ওসি, না হয় ইউএনও। সারা দেশের যেখানেই যান সেখানেই হয় ডিসি না হয় এসপি। নারীদের এ সম্মান কে দিয়েছে? শেখ হাসিনা। তাই বাংলার পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও জেগেছে। তাই যারা বলে ৭ তারিখ ভোটার আসবে না, তাদের বলে দিলাম সেদিন নারীদের চেয়ে পুরুষের উপস্থিতি বেশি হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা আজ মিছিলের শহর। ঢাকা আজ নৌকার শহর। এখন সবখানে নৌকার মিছিল। সারা দেশে এখন নৌকার মিছিল। খেলা হবে। ফাইনাল খেলা ৭ জানুয়ারি। বিএনপির একদফা ভুয়া, ২৮ দফা ভুয়া। যারা বলে ২৭ দল নির্বাচনে না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না তারা ভুয়া। টিআইবি ভুয়া। সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) ভুয়া। এরা বিএনপির দোসর।খেলার মাঠ বাংলাদেশ। খেলা হবে হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, মেট্রোরেল কে করেছে? এক্সপ্রেসওয়ে কে করেছে? পদ্মা সেতু কে করেছে? গ্রামে বিদ্যুৎ কে দিয়েছে? গ্রামকে শহর কে করেছে? বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা করেছেন। মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কে করেছে, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কে পাঠিয়েছে? মায়ের নামে সন্তানের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা কে করেছে। শেখ হাসিনা করেছেন। নারীদের ডিসি-এসপি-ইউএনও-জজ এসব পদে কে নিয়েছে? শেখ হাসিনা নিয়েছেন। ভোটও তাকেই দিতে হবে। নারীদের সম্মান কে দিয়েছে, শেখ হাসিনা দিয়েছেন।
‘যারা বলে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার আসবে না তাদের বলি- ৭ তারিখ নারীদের লাইন লম্বা থাকবে, পুরুষদের চেয়ে নারীদের উপস্থিতি বেশি হবে’- যোগ করেন তিনি।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিজয় শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের গেট থেকে শুরু হয়ে ধানমন্ডি ৩২ এর বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তারা ট্রাক, পিকআপসহ পায়ে হেঁটে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যান।