নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশ ধর-পাকড়ে নেমেছে। বিএনপির মহাসমাবেশ ব্যর্থ করতে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে কোনো কিছুতে জনস্রোত থামানো যাবে না।
শনিবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। দেশের সাধারণ মানুষ রাজপথের আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে।
রিজভী বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ উপলক্ষে বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা ও জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার দলীয় নেতামন্ত্রীরা বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে নানামুখী হুমকি দিচ্ছে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে সরাসরি বলেছেন যে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করব না, মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে দিয়ে ঠান্ডা করে দেবো। আরেকজন মন্ত্রী বিএনপি নেতাদের বলেছেন যে কেউ হুমকি দিলে কী করতে হবে আওয়ামী লীগ সেটা জানে।
তিনি বলেন, একদিকে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে, আবার অন্যদিকে দিচ্ছে সহিংসতার হুমকি। বিএনপির কর্মসূচি মোকাবেলার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তারা আওয়াজ তুলছে। এই সমস্ত হুমকি কী সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বলক্ষণ? পাশাপাশি প্রশাসন বলছে যে ২৮ অক্টোবর সহিংতা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। বিএনপির সমাবেশের আগে প্রশাসনের এই হুঁশিয়ারী আবারো প্রমাণ করে যে সরকারের হাতে লালিত-পালিত পুলিশ বাহিনী গণতন্ত্র, সুশাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন তথা জনগণের বিপজ্জনক প্রতিপক্ষ। আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছি, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন কিভাবে বিএনপির কর্মসূচিকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা যায়। ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের হিড়িক থামছে না, আরো জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই দলবাজ প্রশাসনের মনোরঞ্জনের জন্য জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের উৎকোচ দেয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিসি ও ইউএনওদের ২৬১টি বিলাসবহুল গাড়ি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, ৬১টি ডিসিদের জন্য এবং বাকিগুলো ইউএনওদের জন্য। ডলার সঙ্কট ও প্রচণ্ড রিজার্ভ ঘাটতির মধ্যে গাড়ি কেনার উদ্যোগ বর্তমান সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করার এক মোক্ষম ঘুষ হিসেবে দেখছে জনগণ।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, একটি দেশের সরকারি কর্মচারীদের স্বরূপ দেখলেই ওই রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য বুঝা যায়। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রশাসনের নির্লজ্জ দলবাজ কর্মকর্তাদের ভূমিকাতেই সুষ্পষ্ট হয় যে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের মাত্রা কত ভয়াবহ। আওয়ামী নেতারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন গণতন্ত্রকামী মানুষদের বিরুদ্ধে। এদের কেউ কেউ বলেছেন, কর্মসূচির নামে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি পুলিশ অফিসারদের বলতে চাই, ৭ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে বিএনপি কী সহিংসতা করেছিল? এর কোনো প্রমাণ আছে কি? তাহলে কেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রক্তাক্ত প্রান্তর বানিয়েছেন? কেন ওই দিন দারুস সালাম থানা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করলেন? কার্যালয়ে হানা দিয়ে ৪৭০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করলেন? ওই দিনই আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ওয়ারী থানা যুবদল নেতা ফয়সল মেহবুব মিজুর বাবা মিল্লাত হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করে। ওই হত্যার জন্য কি আপনারা দায়ী নন?
তিনি বলেন, তবে আপনাদেরকে বলে রাখি, এবার জনগণ আর হারবে না। যারা জনগণ প্রদত্ত খাজনার টাকায় বেতন এবং অস্ত্র নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন তারা প্রতি মুহূর্তে জনগণের কাছে কালো তালিকাভূক্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশের মানুষ কারো কাছে প্রজা হয়ে থাকবে না। জনগণ এবার তার মালিকানা ছিনিয়ে নেবে।