Dhaka মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২৮ অক্টোবরের রক্তাক্ত তাণ্ডব দিয়ে হাসিনার ফ্যাসিবাদী যাত্রা শুরু হয় : রুহুল কবির রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেদিনের রক্তাক্ত তাণ্ডব গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করেছিল, যা ছিল বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের প্রথম প্রকাশ।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজিত ‘লগি-বৈঠার লাশতন্ত্র থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান : ২৮ অক্টোবর প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সেদিন খালেদা জিয়া পদত্যাগের প্রক্রিয়ায় ছিলেন, কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের কথা শুনছিল না। প্রশাসন তখন পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে। এই সুযোগেই শেখ হাসিনা ও তার দল ১৪ দলের কর্মীদের দিয়ে রক্তাক্ত হামলা চালায়। এটি ছিল ফ্যাসিবাদের প্রথম মঞ্চায়ন।

রিজভী বলেন, ছাত্রদলের সভাপতি শাহাবুদ্দিন লালটুকে যেভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছিল, তা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী রাজনীতির ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। ঠান্ডা মাথায়, নির্মম নিষ্ঠুরতায় একজন আহত মানুষকে ইট দিয়ে থ্যাঁতলানো এবং লাশের উপর উল্লাস করা–এমন নৃশংসতা বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২৮ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ ছিল পরিকল্পিত। শেখ হাসিনা তখন থেকেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক আনুগত্যে সাজাতে শুরু করেন যেভাবে হিটলার তার ‘আর্য রাষ্ট্র’ গড়েছিলেন। শেখ হাসিনা তার প্রশাসনেও একই কৌশল প্রয়োগ করেছেন।

বিএনপির সিনিয়র এই বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবও ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার তখন থেকেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র নির্মাণের পথে হাঁটছিল। তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা দলীয় আনুগত্যের বাইরে কেউ হলে স্থান পেত না।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ ছিল পরিকল্পিত। শেখ হাসিনা তখন থেকেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক আনুগত্যে সাজাতে শুরু করেন যেভাবে হিটলার তার ‘আর্য রাষ্ট্র’ গড়েছিলেন। শেখ হাসিনা তার প্রশাসনেও একই কৌশল প্রয়োগ করেছেন।

ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, হিটলারের মতো শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রপূজার বয়ান দাঁড় করিয়েছেন—যেখানে ‘রাষ্ট্র’ মানেই আওয়ামী লীগ। যে এই রাষ্ট্রচিন্তার বাইরে যাবে, সে দেশদ্রোহী।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গঠিত ফ্যাসিবাদ কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে প্রথিত। শেখ হাসিনার সময় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচারব্যবস্থা সবকিছু দলীয় আনুগত্যে পরিচালিত হয়েছে।

রিজভী ডাকসু নেতাদের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ডাকসু যেভাবে আজ মুক্ত আলোচনা আয়োজন করছে, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হতে হবে মুক্ত চিন্তা ও সত্য অনুসন্ধানের কেন্দ্র।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের বয়ান সবসময় একটি ‘চেতনা’কে বিকৃত করে হাজির হয়। শেখ হাসিনার ‘চেতনা’ও তাই, যেখানে বিরোধী কণ্ঠ মানেই রাষ্ট্রবিরোধিতা। আমাদের তরুণদের এই বয়ানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সত্য ও স্বাধীনতার চর্চা করতে হবে।

রিজভী বলেন, আমরা যারা দীর্ঘ ১৫–১৬ বছর ধরে নিপীড়নের মধ্যে থেকেও গণতন্ত্রের জন্য লড়েছি, তাদের সংগ্রাম বৃথা যায়নি। আজকের তরুণ প্রজন্ম সেই গণতান্ত্রিক স্পিরিট পুনরুদ্ধার করছে–এটাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় জবাব।

তিনি বলেন, আমরা তখন এই ঘটনা শুনছি, পল্টনে অফিসে মিটিং চলছে। সামনে কী হবে, আমরা কিছু বুঝতে পারছি না। এমন সময় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পদত্যাগপত্র দিয়ে আমাদের কাছে এলেন। আমরা মিটিংয়ে বসলাম। তখন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামীর মিটিং শুরু হয়ে গেছে। আমরা টিয়ার গ্যাসের শব্দ শুনছি, বোমাবাজির শব্দ শুনছি। কে এগিয়ে যাবে, সেই প্রস্তুতিও নেই। তাণ্ডব যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন জামায়াতের পক্ষ থেকে তাকে (খালেদা জিয়া) খবর দেওয়া হলো যে, রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে নির্মমভাবে হত্যার পর লাশের ওপর নৃত্য করছে ১৪ দলীয় জোট। তিনি দেখলেন, পুলিশ-র‌্যাব কোনো কথা শুনছে না। তিনি তখন বিডিআরকে বললেন। বিডিআর তখন মুভ করে একটি দায়িত্ব পালন করল। এর মধ্যেই অনেক রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে গেছে।

তিনি বলেন, জামায়াতের অফিসিয়াল পেজে এই পুরো ঘটনার বিবরণ আছে। সেদিন এমন এক দিন ছিল যে, কে কার জন্য এগিয়ে আসবে, প্রশাসন কথা শুনছে না; শেখ হাসিনা সেই সুযোগ নিয়েছে। তার প্রথম ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ ২৮ অক্টোবরের ঘটনা। এর মর্মান্তিকতা ও নিষ্ঠুরতা গোটা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। ঠান্ডা মাথায় আঘাত করার পর মাটিতে শুয়ে থাকা লাশের ওপর চলেছিল নারকীয় নৃত্য। জাতিসংঘের মহাসচিবও এর প্রতিবাদ করেছিলেন।

রিজভী বলেন, আন্তর্জাতিক মাস্টারপ্ল্যান তো আগে থেকেই চলছিল। ২০০৫ সালে আমেরিকার অ্যাম্বাসেডর বলেছিলেন, সবকিছু ঠিকঠাক করুন, না হলে তৃতীয় পক্ষ আসবে। তিনি কীভাবে জানলেন তৃতীয় পক্ষ আসবে? কেন হঠাৎ করে জঙ্গিবাদের উত্থান শুরু হলো? ড. হুমায়ুন আজাদ আক্রান্ত হলেন, কোনো তদন্ত বা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া শুরু হলো। বিভিন্ন ইউরোপীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের নিয়ে এসে ‘বাংলা ভাই’-এর উদ্ভব দেখানো হলো। আমার মনে আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেরচন্ডিতে স্বয়ং বিদেশি কূটনীতিকরা বলেছিলেন যে, এখানেই জঙ্গিবাদের উৎপত্তি হচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক প্রচারকে উদ্ধুদ্ধ করেছিল সেই গোষ্ঠী, যারা এখানে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চেয়েছিল। এটা ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এক সিন্ডিকেশন।

তিনি বলেন, এই সিন্ডিকেশন অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। ২৮ অক্টোবর তার প্রথম বহিঃপ্রকাশ। তারা ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আঘাত করল বিএনপির নাটোর উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন বাবুকে। তার মাথা থেঁতলানো হলো এবং তার লাশের ওপরও তারা নৃত্য করেছিল। কীভাবে তারা হিমালয়ের চূড়ায় পৌঁছেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

রিজভী বলেন, হাসিনা যেদিন ক্ষমতা ছাড়বেন, সেদিন তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘পুলিশ তো প্রস্তুত আছে, আপনারা কেন দায়িত্ব নিচ্ছেন না এই আন্দোলন দমাতে?’ অর্থাৎ যে শিশু, তরুণ, কিশোররা রাস্তায় নেমেছে, তাদের অবলীলায় গুলি করে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। শেখ হাসিনার এই মনোভাবের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেকেই যুক্ত ছিলেন।

তিনি বলেন, পুলিশের আইজি আজ রাজসাক্ষী হয়েছেন বটে, কিন্তু তিনি তো শেখ হাসিনার ভাষ্য অনুযায়ী আন্দোলন দমাতে ব্যাপকভাবে গুলি চালানোর প্রস্তুতিতেই ছিলেন।

অভ্যুত্থানের সময়কার স্মৃতিচারণ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, যখন দেখলাম তারা এক দফার ঘোষণা দিয়েছে, আমরা খুবই আশান্বিত হলাম—এইবার আর শেখ হাসিনা টিকতে পারবেন না। ভেতরে পুলিশদের দেখলাম, আমাদের চা খাওয়াচ্ছে। সকালে উঠে জিজ্ঞেস করছে, ‘আপনাদের নাস্তা লাগবে কিনা।

ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণঅধিকার পরিষদ দলীয় মুখপাত্র ও সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, জাতীয় নাগরিক পার্টির রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সদস্যসচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের আহ্বায়ক অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

খুলনায় জোড়া খুনের মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

২৮ অক্টোবরের রক্তাক্ত তাণ্ডব দিয়ে হাসিনার ফ্যাসিবাদী যাত্রা শুরু হয় : রুহুল কবির রিজভী

প্রকাশের সময় : ০৮:৫২:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেদিনের রক্তাক্ত তাণ্ডব গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করেছিল, যা ছিল বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের প্রথম প্রকাশ।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজিত ‘লগি-বৈঠার লাশতন্ত্র থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান : ২৮ অক্টোবর প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সেদিন খালেদা জিয়া পদত্যাগের প্রক্রিয়ায় ছিলেন, কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের কথা শুনছিল না। প্রশাসন তখন পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে। এই সুযোগেই শেখ হাসিনা ও তার দল ১৪ দলের কর্মীদের দিয়ে রক্তাক্ত হামলা চালায়। এটি ছিল ফ্যাসিবাদের প্রথম মঞ্চায়ন।

রিজভী বলেন, ছাত্রদলের সভাপতি শাহাবুদ্দিন লালটুকে যেভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছিল, তা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী রাজনীতির ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। ঠান্ডা মাথায়, নির্মম নিষ্ঠুরতায় একজন আহত মানুষকে ইট দিয়ে থ্যাঁতলানো এবং লাশের উপর উল্লাস করা–এমন নৃশংসতা বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২৮ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ ছিল পরিকল্পিত। শেখ হাসিনা তখন থেকেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক আনুগত্যে সাজাতে শুরু করেন যেভাবে হিটলার তার ‘আর্য রাষ্ট্র’ গড়েছিলেন। শেখ হাসিনা তার প্রশাসনেও একই কৌশল প্রয়োগ করেছেন।

বিএনপির সিনিয়র এই বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবও ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার তখন থেকেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র নির্মাণের পথে হাঁটছিল। তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা দলীয় আনুগত্যের বাইরে কেউ হলে স্থান পেত না।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ ছিল পরিকল্পিত। শেখ হাসিনা তখন থেকেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক আনুগত্যে সাজাতে শুরু করেন যেভাবে হিটলার তার ‘আর্য রাষ্ট্র’ গড়েছিলেন। শেখ হাসিনা তার প্রশাসনেও একই কৌশল প্রয়োগ করেছেন।

ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, হিটলারের মতো শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রপূজার বয়ান দাঁড় করিয়েছেন—যেখানে ‘রাষ্ট্র’ মানেই আওয়ামী লীগ। যে এই রাষ্ট্রচিন্তার বাইরে যাবে, সে দেশদ্রোহী।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গঠিত ফ্যাসিবাদ কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে প্রথিত। শেখ হাসিনার সময় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচারব্যবস্থা সবকিছু দলীয় আনুগত্যে পরিচালিত হয়েছে।

রিজভী ডাকসু নেতাদের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ডাকসু যেভাবে আজ মুক্ত আলোচনা আয়োজন করছে, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হতে হবে মুক্ত চিন্তা ও সত্য অনুসন্ধানের কেন্দ্র।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের বয়ান সবসময় একটি ‘চেতনা’কে বিকৃত করে হাজির হয়। শেখ হাসিনার ‘চেতনা’ও তাই, যেখানে বিরোধী কণ্ঠ মানেই রাষ্ট্রবিরোধিতা। আমাদের তরুণদের এই বয়ানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সত্য ও স্বাধীনতার চর্চা করতে হবে।

রিজভী বলেন, আমরা যারা দীর্ঘ ১৫–১৬ বছর ধরে নিপীড়নের মধ্যে থেকেও গণতন্ত্রের জন্য লড়েছি, তাদের সংগ্রাম বৃথা যায়নি। আজকের তরুণ প্রজন্ম সেই গণতান্ত্রিক স্পিরিট পুনরুদ্ধার করছে–এটাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় জবাব।

তিনি বলেন, আমরা তখন এই ঘটনা শুনছি, পল্টনে অফিসে মিটিং চলছে। সামনে কী হবে, আমরা কিছু বুঝতে পারছি না। এমন সময় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পদত্যাগপত্র দিয়ে আমাদের কাছে এলেন। আমরা মিটিংয়ে বসলাম। তখন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামীর মিটিং শুরু হয়ে গেছে। আমরা টিয়ার গ্যাসের শব্দ শুনছি, বোমাবাজির শব্দ শুনছি। কে এগিয়ে যাবে, সেই প্রস্তুতিও নেই। তাণ্ডব যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন জামায়াতের পক্ষ থেকে তাকে (খালেদা জিয়া) খবর দেওয়া হলো যে, রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে নির্মমভাবে হত্যার পর লাশের ওপর নৃত্য করছে ১৪ দলীয় জোট। তিনি দেখলেন, পুলিশ-র‌্যাব কোনো কথা শুনছে না। তিনি তখন বিডিআরকে বললেন। বিডিআর তখন মুভ করে একটি দায়িত্ব পালন করল। এর মধ্যেই অনেক রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে গেছে।

তিনি বলেন, জামায়াতের অফিসিয়াল পেজে এই পুরো ঘটনার বিবরণ আছে। সেদিন এমন এক দিন ছিল যে, কে কার জন্য এগিয়ে আসবে, প্রশাসন কথা শুনছে না; শেখ হাসিনা সেই সুযোগ নিয়েছে। তার প্রথম ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ ২৮ অক্টোবরের ঘটনা। এর মর্মান্তিকতা ও নিষ্ঠুরতা গোটা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। ঠান্ডা মাথায় আঘাত করার পর মাটিতে শুয়ে থাকা লাশের ওপর চলেছিল নারকীয় নৃত্য। জাতিসংঘের মহাসচিবও এর প্রতিবাদ করেছিলেন।

রিজভী বলেন, আন্তর্জাতিক মাস্টারপ্ল্যান তো আগে থেকেই চলছিল। ২০০৫ সালে আমেরিকার অ্যাম্বাসেডর বলেছিলেন, সবকিছু ঠিকঠাক করুন, না হলে তৃতীয় পক্ষ আসবে। তিনি কীভাবে জানলেন তৃতীয় পক্ষ আসবে? কেন হঠাৎ করে জঙ্গিবাদের উত্থান শুরু হলো? ড. হুমায়ুন আজাদ আক্রান্ত হলেন, কোনো তদন্ত বা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া শুরু হলো। বিভিন্ন ইউরোপীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের নিয়ে এসে ‘বাংলা ভাই’-এর উদ্ভব দেখানো হলো। আমার মনে আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেরচন্ডিতে স্বয়ং বিদেশি কূটনীতিকরা বলেছিলেন যে, এখানেই জঙ্গিবাদের উৎপত্তি হচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক প্রচারকে উদ্ধুদ্ধ করেছিল সেই গোষ্ঠী, যারা এখানে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চেয়েছিল। এটা ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এক সিন্ডিকেশন।

তিনি বলেন, এই সিন্ডিকেশন অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। ২৮ অক্টোবর তার প্রথম বহিঃপ্রকাশ। তারা ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আঘাত করল বিএনপির নাটোর উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন বাবুকে। তার মাথা থেঁতলানো হলো এবং তার লাশের ওপরও তারা নৃত্য করেছিল। কীভাবে তারা হিমালয়ের চূড়ায় পৌঁছেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

রিজভী বলেন, হাসিনা যেদিন ক্ষমতা ছাড়বেন, সেদিন তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘পুলিশ তো প্রস্তুত আছে, আপনারা কেন দায়িত্ব নিচ্ছেন না এই আন্দোলন দমাতে?’ অর্থাৎ যে শিশু, তরুণ, কিশোররা রাস্তায় নেমেছে, তাদের অবলীলায় গুলি করে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। শেখ হাসিনার এই মনোভাবের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেকেই যুক্ত ছিলেন।

তিনি বলেন, পুলিশের আইজি আজ রাজসাক্ষী হয়েছেন বটে, কিন্তু তিনি তো শেখ হাসিনার ভাষ্য অনুযায়ী আন্দোলন দমাতে ব্যাপকভাবে গুলি চালানোর প্রস্তুতিতেই ছিলেন।

অভ্যুত্থানের সময়কার স্মৃতিচারণ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, যখন দেখলাম তারা এক দফার ঘোষণা দিয়েছে, আমরা খুবই আশান্বিত হলাম—এইবার আর শেখ হাসিনা টিকতে পারবেন না। ভেতরে পুলিশদের দেখলাম, আমাদের চা খাওয়াচ্ছে। সকালে উঠে জিজ্ঞেস করছে, ‘আপনাদের নাস্তা লাগবে কিনা।

ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণঅধিকার পরিষদ দলীয় মুখপাত্র ও সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, জাতীয় নাগরিক পার্টির রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সদস্যসচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের আহ্বায়ক অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস প্রমুখ।