নিজস্ব প্রতিবেদক :
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ২১ বছর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে পারেননি বলে মন্তব্য করে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক বলেন, যখন স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় ছিল, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট লুকিয়ে রাখতে হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধার কথা বললে চাকরি দেওয়া হতো না। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলার পর হামলা হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড আয়োজিত আলোচনা সভা ও জেলা কনভেনশনে এসব কথা বলেন তিনি। এতে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নই আমাদের অঙ্গীকার’ স্লোগানে চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সরকার গঠনে মুক্তিযুদ্ধের ধারা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
আবারও স্বাধীনতা বিরোধীরা সংগঠিত হচ্ছে জানিয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক বলেন, যেসব দেশ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, স্বাধীনতা বিরোধীরা তাদের সঙ্গে আবার হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আবারও শেখ হাসিনাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা এখন যুবক, তাদের এ ষড়য়ন্ত্র নামক রাজনৈতিক যুদ্ধ করতে হবে। কারণ আমাদের বয়স হয়েছে। এ রাজনৈতিক যুদ্ধে যদি সফল না হন তবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কোনো দাবি আদায় হবে না। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে। জেলায় জেলায় এ ধরনের আয়োজন করতে হবে।
পাটমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের প্রথম সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক দিন। পঁচাত্তরের আগস্টে আমরা তাকে হারিয়েছি। দীর্ঘদিন পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আলোর মুখ দেখতে পেলাম।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হলে দেশ মৌলবাদী, সন্ত্রাসী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের হাত থেকে রক্ষা পাবে। স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে হটাতে চেষ্টা করছেন। আর বঙ্গবন্ধুর কন্যা যদি না থাকে তাহলে কেউ থাকতে পারবো না।
গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধীরা আবার সংঘটিত হচ্ছে। দেশি-বিদেশি চক্ররাও সংগঠিত হচ্ছে। যেসব বিদেশিরা মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন করে নাই, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
মুক্তিযুদ্ধ সন্তান কমান্ডের সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে অস্ত্রের যুদ্ধ করেছি, এখন আপনাদের রাজনৈতিক যুদ্ধ করতে হবে। আর এই রাজনৈতিক যুদ্ধে যদি আপনারা সফল না হন, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ সন্তান কমান্ড কোনও দাবি আদায় তো দূরের কথা, কোনও কিছুই পাবে না। রাজনৈতিক যুদ্ধ করতে হলে মুক্তিযুদ্ধ সন্তান কমান্ডের সদস্যদের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। সমস্ত জেলায় আরও বড় করে এ ধরনের প্রোগ্রাম করতে হবে।
পাটমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৯৭৪ সালের রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিযুদ্ধ সংসদের যে সম্মেলন করেছিলাম সেখানে মুক্তিযোদ্ধাসহ তিন থেকে চার লাখ লোক হয়েছিল। সেই ধরনের একটি শক্তিশালী সম্মেলন রেসকোর্স ময়দানে আপনাদের আবার করতে হবে। এমন শক্তি প্রদর্শন ছাড়া রাজনৈতিক অধিকার আদায় করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দিয়ে সারাবাংলার মানুষকে একত্রিত করেছিলেন। সেই ডাকে সারা দিয়ে আমরা গিয়েছিলাম। এরপর ক্ষমতা না পেয়ে আবার বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। তারপর মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে ঘরে ফিরছিলাম।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে হটাতে চেষ্টা করছে। আর বঙ্গবন্ধুর কন্যা যদি না থাকে তাহলে আপনারাও নাই হয়ে যাবেন, আমরাও। কেউ থাকতে পারবো না। তাই শেখ হাসিনাকে আবার আগামী নির্বাচনে জয়ী করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিদের সংগঠিত হয়ে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হলে আপনাদের দাবিগুলো পূরণ হবে বলে বিশ্বাস করি।
‘যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছিলাম, আজকে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরও সেভাবে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে সমর্থন দিতে হবে। তাকে (শেখ হাসিনা) যদি আবার প্রধানমন্ত্রী করে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এই দেশ মৌলবাদী, সন্ত্রাসী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের হাত থেকে রক্ষা পাবে’— মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠা সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী।
পাটমন্ত্রী আরও বলেন, দেশি ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র আর নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধি পথে এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করি।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম রেজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী সিকদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল প্রমুখ।