Dhaka শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২০ বছর পর প্রধান শিক্ষকের পদ ফিরে পেলেন আকবর

পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি : 

পঞ্চগড়ে আদালতে দীর্ঘ ২০ বছর আইনি লড়াইয়ের পর আবারও প্রধান শিক্ষক হিসাবে বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন আকবর হোসেন। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে তিনি স্কুলে যোগ দিতে গেলে সাবেক সহকর্মী,ম্যানেজিং কমিটি, স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা আকবর আলীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।

১৯৯২ সালে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আকবর আলী।

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরে রেজিস্ট্রেশন হয় এবং আকবর আলীসহ শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হন। কয়েক বছর পর ষড়যন্ত্র করে বিদ্যালয় থেকে অনৈতিকভাবে বহিষ্কার করা হয় বলে দাবি করেন তিনি। এরপর মামলা, পাল্টা আপিল এভাবেই চলে গেছে তার জীবনের ২০টি বছর। দরিদ্রতা আর মামলার হয়রানিসহ প্রতিটি মূহুর্ত কেটেছে তার দুশ্চিন্তা আর হতাশার মধ্য দিয়ে। অবশেষে আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে দাবি করেন আকবর।

শিক্ষক আকবর আলীর বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের কাপরাঙ্গাপাড়া এলাকায়।

আকবর হোসেনের পরিবার জানায়, দীঘল গ্রামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৯২ সালে নয়নীবুরুজ দীঘল গ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন আকবর আলী। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। তার অনেক আগেই সভাপতি হাবিবুর রহমানের সাথে বনিবনা না হওয়ায় আকবর হোসেনকে হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হন। ২০০১ সালে তার স্ত্রীর সাথে বিরোধে একটি মামলা তিন মাস কারাগারে থাকতে হয় তাকে। পরে সমঝোতা হওয়ায় জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে কারাগার থেকে বের হওয়ার পরে বিদ্যালয়ের সভাপতি হাবিবর রহমান প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেনকে আর বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি। এভাবে কেটে যায় কয়েক বছর। ২০০৪ সালে আদালতে আদেশাত্মক নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন আকবর। পরে মামলায় আদালত আকবরকে স্বপদে বহাল ও তার বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেন। এদিকে আকবরকে সরিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্টরা সভাপতির ভাতিজার বউ আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়োগ প্রদান করেন।

এই মামলা গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। বেশ কয়েকবার আকবার আলী রায় পেলেও পাল্টা চলছে আপিল। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৮মে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন এবং আয়েশা সিদ্দিকার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া আয়েশা সিদ্দিকাকে বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে আকবরকে যোগদানের বিষয়ে টালবাহানা শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তারা তাকে ঘুরাতে থাকে মাসের পর মাস। উপায় না পেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে পঞ্চগড় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি জারি মামলা করেন তিনি।

এরপর আকবর আলীকে যোগদান করানোর নির্দেশ অমান্য করায় আদালত গত ২৯ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে মহাপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আকবর হোসেনকে যোগদান করিয়ে বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজম আলী প্রধান জানান, আমরা একসঙ্গে শিক্ষকতা শুরু করি এই বিদ্যালয়ের জন্য তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। আকবর হোসেন ২০ বছর আদালতে মামলা লড়িয়ে জয় লাভ করে আজ স্কুলে যোগদান করলেন। এতে আমরা অনেক আনন্দিত।

আকবর আলীর স্ত্রী জোসনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী নিজেই এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় এই এলাকায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে এই বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। দীর্ঘ ২০ বছর মামলা চালাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। বড় কথা হলো আমরা ন্যায় বিচার পেয়ছি। এটাই বড় আনন্দ আমাদের।

প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করা আকবর হোসেন জানান,এই মামলার পেছনে আমার সবকিছু শেষ করে আজ পথে বসেছি। ছেলে দুইটাকে ভালো করে লেখাপড়া ও খাবার দিতে পারিনি। দীর্ঘ ২০ বছর পর আমি ন্যায় বিচার পেয়ে আজকে আমার প্রাণের বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। তৎকালীন সভাপতি হবিবর রহমান, এটিও আকবর আলী, জিন্নাত আলী ও টিইও রুস্তম আলী যোগসাজস্যে আমাকে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে আয়েশা সিদ্দিকা নামে এক মহিলাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছিল। ২০ বছর পরে আদালতের নির্দেশে আমাকে আমার পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাকে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোতে যেন আর হয়রানি না করা হয় সেই দাবি জানাই। এর সাথে আমি স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সহযোগিতা কামনা করছি। আমি যে স্বপ্ন নিয়ে এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেছি সেটা যেন করতে পারি। আমার কিছু নেই, আমার বিল বেতন যদি দ্রুত হয় তাহলে আমি অনেক উপকৃত হবো কারণ এখনও খেয়ে না খেয়ে আমার দিন কাটে পরিবার নিয়ে।

শিক্ষক আকবর হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বলেন, আকবর হোসেনের জারি মামলার আইনজীবী ছিলাম আমি। সংশ্লিষ্টরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানায় এই মামলা করা হয়। বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হলেও তারা কোনো জবাব না দেওয়ায় আদালতে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোনা জারি করেন। পরে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা কাগজপত্র যাচাই করে তাকে বিদ্যালয়ে যোগদান করান।

এ বিষয়ে নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহাজাহান শাহীন বলেন, এই বিদ্যালয়ের একসময়ের প্রধান শিক্ষককে আগের সভাপতি বহিষ্কার করেন। পরে ২০ বছর পর মামলার রায় পেয়ে আকবর আলী আজ বিদ্যালয়ে আসলে সবাই মিলে তাকে বরণ করে নিয়েছি। আমরা চাই তার হাত ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যেন আরও ভালো হয়।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোসলেম উদ্দিন শাহ বলেন, আদালতের রায়ের নির্দেশে আমরা আকবর আলীকে যোগদান করিয়ে তার বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করেছি। আমি নিজেকে গর্ববোধ মনে করি এমন একটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হলাম। আকবর আলীর বিল বেতন যেন দ্রুত হয় তার জন্য আমি সকল কাগজপত্র আমার সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করেছি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর চাকুরি সংক্রান্ত মামলা চলার পর আদালতের নির্দেশে আমরা আকবর হোসেনকে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার অনুমতি দিয়েছি। তিনি আজ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কারের ভবিষ্যৎ পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেব না : নাহিদ ইসলাম

২০ বছর পর প্রধান শিক্ষকের পদ ফিরে পেলেন আকবর

প্রকাশের সময় : ০২:৩৩:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩

পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি : 

পঞ্চগড়ে আদালতে দীর্ঘ ২০ বছর আইনি লড়াইয়ের পর আবারও প্রধান শিক্ষক হিসাবে বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন আকবর হোসেন। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে তিনি স্কুলে যোগ দিতে গেলে সাবেক সহকর্মী,ম্যানেজিং কমিটি, স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা আকবর আলীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।

১৯৯২ সালে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আকবর আলী।

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরে রেজিস্ট্রেশন হয় এবং আকবর আলীসহ শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হন। কয়েক বছর পর ষড়যন্ত্র করে বিদ্যালয় থেকে অনৈতিকভাবে বহিষ্কার করা হয় বলে দাবি করেন তিনি। এরপর মামলা, পাল্টা আপিল এভাবেই চলে গেছে তার জীবনের ২০টি বছর। দরিদ্রতা আর মামলার হয়রানিসহ প্রতিটি মূহুর্ত কেটেছে তার দুশ্চিন্তা আর হতাশার মধ্য দিয়ে। অবশেষে আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে দাবি করেন আকবর।

শিক্ষক আকবর আলীর বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের কাপরাঙ্গাপাড়া এলাকায়।

আকবর হোসেনের পরিবার জানায়, দীঘল গ্রামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৯২ সালে নয়নীবুরুজ দীঘল গ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন আকবর আলী। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। তার অনেক আগেই সভাপতি হাবিবুর রহমানের সাথে বনিবনা না হওয়ায় আকবর হোসেনকে হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হন। ২০০১ সালে তার স্ত্রীর সাথে বিরোধে একটি মামলা তিন মাস কারাগারে থাকতে হয় তাকে। পরে সমঝোতা হওয়ায় জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে কারাগার থেকে বের হওয়ার পরে বিদ্যালয়ের সভাপতি হাবিবর রহমান প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেনকে আর বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি। এভাবে কেটে যায় কয়েক বছর। ২০০৪ সালে আদালতে আদেশাত্মক নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন আকবর। পরে মামলায় আদালত আকবরকে স্বপদে বহাল ও তার বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেন। এদিকে আকবরকে সরিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্টরা সভাপতির ভাতিজার বউ আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়োগ প্রদান করেন।

এই মামলা গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। বেশ কয়েকবার আকবার আলী রায় পেলেও পাল্টা চলছে আপিল। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৮মে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন এবং আয়েশা সিদ্দিকার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া আয়েশা সিদ্দিকাকে বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে আকবরকে যোগদানের বিষয়ে টালবাহানা শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তারা তাকে ঘুরাতে থাকে মাসের পর মাস। উপায় না পেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে পঞ্চগড় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি জারি মামলা করেন তিনি।

এরপর আকবর আলীকে যোগদান করানোর নির্দেশ অমান্য করায় আদালত গত ২৯ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে মহাপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আকবর হোসেনকে যোগদান করিয়ে বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজম আলী প্রধান জানান, আমরা একসঙ্গে শিক্ষকতা শুরু করি এই বিদ্যালয়ের জন্য তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। আকবর হোসেন ২০ বছর আদালতে মামলা লড়িয়ে জয় লাভ করে আজ স্কুলে যোগদান করলেন। এতে আমরা অনেক আনন্দিত।

আকবর আলীর স্ত্রী জোসনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী নিজেই এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় এই এলাকায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে এই বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। দীর্ঘ ২০ বছর মামলা চালাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। বড় কথা হলো আমরা ন্যায় বিচার পেয়ছি। এটাই বড় আনন্দ আমাদের।

প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করা আকবর হোসেন জানান,এই মামলার পেছনে আমার সবকিছু শেষ করে আজ পথে বসেছি। ছেলে দুইটাকে ভালো করে লেখাপড়া ও খাবার দিতে পারিনি। দীর্ঘ ২০ বছর পর আমি ন্যায় বিচার পেয়ে আজকে আমার প্রাণের বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। তৎকালীন সভাপতি হবিবর রহমান, এটিও আকবর আলী, জিন্নাত আলী ও টিইও রুস্তম আলী যোগসাজস্যে আমাকে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে আয়েশা সিদ্দিকা নামে এক মহিলাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছিল। ২০ বছর পরে আদালতের নির্দেশে আমাকে আমার পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাকে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোতে যেন আর হয়রানি না করা হয় সেই দাবি জানাই। এর সাথে আমি স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সহযোগিতা কামনা করছি। আমি যে স্বপ্ন নিয়ে এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেছি সেটা যেন করতে পারি। আমার কিছু নেই, আমার বিল বেতন যদি দ্রুত হয় তাহলে আমি অনেক উপকৃত হবো কারণ এখনও খেয়ে না খেয়ে আমার দিন কাটে পরিবার নিয়ে।

শিক্ষক আকবর হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বলেন, আকবর হোসেনের জারি মামলার আইনজীবী ছিলাম আমি। সংশ্লিষ্টরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানায় এই মামলা করা হয়। বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হলেও তারা কোনো জবাব না দেওয়ায় আদালতে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোনা জারি করেন। পরে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা কাগজপত্র যাচাই করে তাকে বিদ্যালয়ে যোগদান করান।

এ বিষয়ে নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহাজাহান শাহীন বলেন, এই বিদ্যালয়ের একসময়ের প্রধান শিক্ষককে আগের সভাপতি বহিষ্কার করেন। পরে ২০ বছর পর মামলার রায় পেয়ে আকবর আলী আজ বিদ্যালয়ে আসলে সবাই মিলে তাকে বরণ করে নিয়েছি। আমরা চাই তার হাত ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যেন আরও ভালো হয়।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোসলেম উদ্দিন শাহ বলেন, আদালতের রায়ের নির্দেশে আমরা আকবর আলীকে যোগদান করিয়ে তার বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করেছি। আমি নিজেকে গর্ববোধ মনে করি এমন একটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হলাম। আকবর আলীর বিল বেতন যেন দ্রুত হয় তার জন্য আমি সকল কাগজপত্র আমার সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করেছি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর চাকুরি সংক্রান্ত মামলা চলার পর আদালতের নির্দেশে আমরা আকবর হোসেনকে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার অনুমতি দিয়েছি। তিনি আজ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন।