নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আদালতকে বলেছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল ডামি নির্বাচন। এটি ছিল প্রহসনের নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ার কারণেই ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে এ কথা বলেন তিনি।
এদিন ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। এদিন দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয় কাজী হাবিবুল আউয়ালকে। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে এজলাসে আসেন বিচারক।
রিমান্ড শুনানিতে সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আদালতের অনুমতি নিয়ে কিছু বলতে চান।
এসময় আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমি স্বীকার করেছি- ডামি নির্বাচন করেছি। রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবে একতরফা নির্বাচন হয়েছে। তবে এখানে আমাকে পয়সা দেওয়ার কোনো প্রশ্ন আসেনি। আমার জীবনে আমি অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতি করিনি।’
এসময় আদালত বলেন, ‘আপনার কাছে জাতির প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু বিতর্কমুক্ত নির্বাচন করতে পারেননি।’ এ প্রসঙ্গে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন বিতর্কিত হয়নি? ১৯৭২ এর ডিসেম্বরে সংবিধান রচনার তিন মাস পর ৭৩ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শেখ মুজিবের মতো নেতা নির্বাচনে কারচুপি করেছেন। ক্ষমতার যে লোভ এটা ভয়ানক। দেশে একহাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সেটা করার জন্য সংস্কার লাগবে।’
আদালত বলেন, ‘সাধারণত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হতো। কিন্তু এই নির্বাচনে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। এমনটি হওয়ার কারণ কী?’ তবে এ প্রশ্নের জবাবে নিজের দায় এড়িয়ে যান কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাতের বেলার ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন রাতের বেলায় ভোট হয়, তখন আমি গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন।’
‘বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (চরমোনাই) সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার প্রসঙ্গ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে উত্থাপন করা হলে আমি বলেছি- ‘তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন?’ আমার এ কথাটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
এ সময় মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী তাকে কথা বলতে বাধা দিলে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাকে কথা বলতে না দিলে একটা রিভলভার দিয়ে মেরে ফেলেন।
পরে পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, ‘এখানে সাধু সাজার সুযোগ নেই। আপনার নিজের অপরাধ ঢাকার সুযোগ নেই। অন্যরা অন্যায় করেছে এসব না বলে আপনি কী করেছেন সেটা বলেন।’ এসময় পাশ থেকে এক আইনজীবী বলে ওঠেন, ‘এতগুলো ছেলেমেয়ে মারা গেছে আপনার জন্য।’ এর উত্তরে হাবিবুল আউয়াল পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আমার জন্য এতগুলো ছেলেমেয়ে মারা গেছে?’
এদিন রিমান্ড শুনানিকালে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের আগে তিনি (আসামি) শেখ হাসিনাকে বলেন, সমস্যা নেই। আমি আপনাকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেবো। আর আপনি যে টাকা দেবেন, তা পকেটে ঢুকিয়ে নিবো।’
পিপি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের টাকা দেয় এই আসামি তার হিসাব দেয়নি। এছাড়া সে নির্বাচনী বরাদ্দের টাকার হিসাব পেশ করেনি এবং এ টাকাগুলো সে আত্মসাৎ করেছে। এ ধরনের ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে, যাতে আগামীতে আর এমন জঘন্য নির্বাচন কমিশনার এদেশে জন্মগ্রহণ না করে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘তিনি ৭০ বছর বয়স্ক লোক। ফ্যাসিস্ট হটাতে গিয়ে আমরা যেন ফ্যাসিস্ট না হয়ে যাই। আমি আসামির রিমান্ড বাতিল ও জামিন প্রার্থনা করছি।’ পরে আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তিনদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বিচারক।