Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৫ মাস পর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো কালুরঘাট সেতু

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর লাখো মানুষের দৈনন্দিন দুঃখ-দুর্দশার লাঘব হলো অবশেষে। সংস্কার কাজ শেষ হওয়ায় কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত কালুরঘাট সেতু দিয়ে প্রায় ১৫ মাস পর রোববার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে নগর থেকে ছুটছে গাড়ি। এতে ওই অঞ্চলের মানুষের মুখে ফুটেছে হাসি।

সেতু খুলে দেওয়া হলেও ভারি যানবাহন চলাচলে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে ৮ ফুটের বেশি উচ্চতার কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।

তবে সেতুটি একমুখী হওয়ায় যানচলাচলে ভোগান্তি থেকে মুক্তি চান বোয়ালখালীবাসী। তাদের দাবি, একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন পাওয়া নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হোক।

এদিকে, কালুরটঘাট সেতুতে সংস্কারের পর প্রথমবারের মতো ওয়াকওয়ে তৈরি করায় সবার মাঝে কৌতূহল বেড়েছে। সেতু দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়ার মানুষ চট্টগ্রাম শহরে আসা-যাওয়া করেন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতু দিয়ে বড় ট্রাক ও বাস চলাচল করতে পারবে না। টোল ছাড়াই আপাতত যানবাহন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ভূ-সম্পত্তি বিভাগ শিগগিরই রেলসেতু দিয়ে চলা যানবাহন থেকে টোল আদায়ে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, কালুরঘাট সেতুর নতুন সংযোজন হলো দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। সেতুর পাটাতনের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। আগে সেতুতে পানি জমে থাকায় ঢালাই নষ্ট হয়ে যেতো। কংক্রিটের ঢালাই দেওয়ায় এখন আর সেখানে পানি জমে থাকবে না।’

কর্ণফুলি নদীর উপর স্থাপিত একটি পুরাতন রেল ও সড়ক সেতু যা একসময় চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাংশকে দেশের অবশিষ্টাংশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচিত ছিল। ১৯৩০ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে জানালীহাট এবং গোমদন্ডী রেলস্টেশনের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে স্টিল কাঠামোর উপর নির্মিত একটি সাধারণ সেতু হিসেবে কালুরঘাট সেতুটি তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৩৯ মিটার।

চট্টগ্রাম ও দোহাজারী থানার মধ্যে ট্রেন চলাচলের উদ্দেশ্যে ১৯৩১ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের একত্রিশ বছর পর ১৯৬২ সালে জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনা করে সেতুটিতে পাটাতন স্থাপন ও কার্পেটিং করে এটিকে রেলসেতুর পাশাপাশি একটি সড়ক সেতুতে রূপান্তর করা হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের জন্য সেতুতে বড় ধরনের সংস্কারকাজের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। কাজ শুরু হয় গত বছরের ১ আগস্ট। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে ৪৩ কোটি টাকার চুক্তি করে রেলওয়ে।

চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থ ছাড়ে জটিলতা, বৃষ্টিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় সেতুর সংস্কারকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। এরপর ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে বন্ধ থাকে অন্যান্য যান চলাচল।

অবশেষে কারিগরি সব দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আজ রোববার সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

কালুরঘাট সেতু দিয়ে বর্তমানে কক্সবাজার পর্যন্ত দৈনিক তিন জোড়া ট্রেন ও দোহাজারী পাওয়ার প্ল্যান্টের জ্বালানীবাহী ট্রেন চলাচল করে। তবে কালুরঘাট সেতু সংস্কার ও কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণের পর এই রুটে দৈনিক ২৩ জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে চালু হওয়া রেলওয়ের ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে কক্সবাজার পর্যন্ত আপাতত আরও কয়েকটি ট্রেন যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

১৫ মাস পর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো কালুরঘাট সেতু

প্রকাশের সময় : ০১:১৮:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর লাখো মানুষের দৈনন্দিন দুঃখ-দুর্দশার লাঘব হলো অবশেষে। সংস্কার কাজ শেষ হওয়ায় কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত কালুরঘাট সেতু দিয়ে প্রায় ১৫ মাস পর রোববার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে নগর থেকে ছুটছে গাড়ি। এতে ওই অঞ্চলের মানুষের মুখে ফুটেছে হাসি।

সেতু খুলে দেওয়া হলেও ভারি যানবাহন চলাচলে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে ৮ ফুটের বেশি উচ্চতার কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।

তবে সেতুটি একমুখী হওয়ায় যানচলাচলে ভোগান্তি থেকে মুক্তি চান বোয়ালখালীবাসী। তাদের দাবি, একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন পাওয়া নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হোক।

এদিকে, কালুরটঘাট সেতুতে সংস্কারের পর প্রথমবারের মতো ওয়াকওয়ে তৈরি করায় সবার মাঝে কৌতূহল বেড়েছে। সেতু দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়ার মানুষ চট্টগ্রাম শহরে আসা-যাওয়া করেন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতু দিয়ে বড় ট্রাক ও বাস চলাচল করতে পারবে না। টোল ছাড়াই আপাতত যানবাহন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ভূ-সম্পত্তি বিভাগ শিগগিরই রেলসেতু দিয়ে চলা যানবাহন থেকে টোল আদায়ে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, কালুরঘাট সেতুর নতুন সংযোজন হলো দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। সেতুর পাটাতনের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। আগে সেতুতে পানি জমে থাকায় ঢালাই নষ্ট হয়ে যেতো। কংক্রিটের ঢালাই দেওয়ায় এখন আর সেখানে পানি জমে থাকবে না।’

কর্ণফুলি নদীর উপর স্থাপিত একটি পুরাতন রেল ও সড়ক সেতু যা একসময় চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাংশকে দেশের অবশিষ্টাংশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচিত ছিল। ১৯৩০ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে জানালীহাট এবং গোমদন্ডী রেলস্টেশনের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে স্টিল কাঠামোর উপর নির্মিত একটি সাধারণ সেতু হিসেবে কালুরঘাট সেতুটি তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৩৯ মিটার।

চট্টগ্রাম ও দোহাজারী থানার মধ্যে ট্রেন চলাচলের উদ্দেশ্যে ১৯৩১ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের একত্রিশ বছর পর ১৯৬২ সালে জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনা করে সেতুটিতে পাটাতন স্থাপন ও কার্পেটিং করে এটিকে রেলসেতুর পাশাপাশি একটি সড়ক সেতুতে রূপান্তর করা হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের জন্য সেতুতে বড় ধরনের সংস্কারকাজের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। কাজ শুরু হয় গত বছরের ১ আগস্ট। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে ৪৩ কোটি টাকার চুক্তি করে রেলওয়ে।

চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থ ছাড়ে জটিলতা, বৃষ্টিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় সেতুর সংস্কারকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। এরপর ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে বন্ধ থাকে অন্যান্য যান চলাচল।

অবশেষে কারিগরি সব দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আজ রোববার সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

কালুরঘাট সেতু দিয়ে বর্তমানে কক্সবাজার পর্যন্ত দৈনিক তিন জোড়া ট্রেন ও দোহাজারী পাওয়ার প্ল্যান্টের জ্বালানীবাহী ট্রেন চলাচল করে। তবে কালুরঘাট সেতু সংস্কার ও কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণের পর এই রুটে দৈনিক ২৩ জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে চালু হওয়া রেলওয়ের ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে কক্সবাজার পর্যন্ত আপাতত আরও কয়েকটি ট্রেন যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।