কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, যারা এই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল তাদেরসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করতে হবে। সেখানে অবশ্যই এই শহীদ এবং আহতদের স্বীকৃতি দিতে হবে। সেখানে অবশ্যই ১৯৪৭, ৭১ এবং ২০২৪-এর যে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা তার সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকতে হবে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লায় জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের লিফলেট বিতরণকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের ব্যবস্থা করা। সরকার থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। তাই আমরা এ বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে গিয়েছি। কিন্তু সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করার দায়িত্ব যখন সরকার নিয়েছে, তাই আমরা ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্রটি ঘোষণা করিনি। আমরা রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রাধান্য দিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো ৩১ ডিসেম্বরের পর এতদিন কেটে গেলেও সরকার এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহতদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এতদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমরা এখনও আহত এবং শহীদ পরিবারের আর্তনাদ শুনতে পাই। সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার আহত এবং শহীদ পরিবারদের সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি (প্রাধান্য) দেবে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে আমি বলতে চাই, ৫ আগস্টের পর যে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতরা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল। তবে, আমরা এখনও শুনছি জুলাই-আগস্টের আহত ও শহীদদের পরিবারের আর্তনাদ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দোহাই দিয়ে তাদের সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দোহাই আর চলবে না। জুলাই ও আগস্টের শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদেরকে টপ প্রায়োরিটি দেওয়া হোক। তাদের উপযুক্ত প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, মাঝেমধ্যে বলতে শুনি আপনারা বলেন সিন্ডিকেটের হাত বদল হয়েছে, চাঁদাবাজের হাত পরিবর্তন হয়েছে, টেন্ডারবাজের হাত পরিবর্তন হয়েছে। আপনাদেরকে তো আমরা দোহাই দেওয়ার জন্য এখানে আনিনি। আমরা আপনাদের এখানে এনেছি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। যে হাত চাঁদাবাজি করে, টেন্ডারবাজি করে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। আপনারা যদি মনে করেন এক্সকিউজ দেবেন তাহলে বলব এক্সকিউজ দেওয়ার সুযোগ আপনাদের নেই। আপনাদেরকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের জায়গা থেকে পূর্বে যেমন ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থান নিয়েছি, সেই অবস্থান আমাদের অব্যাহত থাকবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক বলেন, এই কুমিল্লা সব সময় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আবির্ভূত হয়েছে। হাসিনার নির্ঘুমের কারণ ছিল এই কুমিল্লা। কুমিল্লা থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ধ্বনি সব সময় উচ্চারিত হয়েছে। কুমিল্লা থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকবে। ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশের যে যাত্রা সেটি কুমিল্লা থেকেই প্রশস্ত হবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সমন্বয়ক পরিচয়ে কেউ যদি চাঁদা নিতে আসে, তাহলে তাকে বেঁধে রাখবেন।
এদিন দুপুর ২টা থেকে কুমিল্লা পুলিশ লাইনস থেকে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। পরে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, ঈদগাহসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক সাকিব হোসাইনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।