Dhaka মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হোমনা-মুরাদনগর সড়কের ১৪ কি.মি. খানাখন্দে বেহাল দশা

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : 

কুমিল্লার হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলার সংযোগকারী প্রায় ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ আঞ্চলিক সড়কের হোমনা উপজেলা সদর থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার এলাকা খানাখন্দে ভরে গেছে। এসব খানাখন্দ চরম দুর্ভোগ ও মানুষের জীবন-মরণের ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচ ও কংক্রিট উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। ভারী বর্ষণের ফলে এসব গর্তে পানি জমে থাকায় নিয়মিত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সড়কটি দেশের রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহর কুমিল্লায় যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম।

সড়কটি হোমনা উপজেলা সদর থেকে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ সড়কে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই চলছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা ও মোটরসাইকেল। এসব যানবাহন ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে। সড়কের এ বেহাল দশায় ভোগান্তিতে রয়েছেন হোমনা, তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। গত কয়েক বছরে সংস্কার না হওয়ায় বেহাল হয়ে পড়েছে সড়কটি। রাস্তার এই বেহাল দশার কারণে পরিবহনে যাত্রীদেরও দিতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া।

সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক গর্তে পানি জমে আছে। অনেক জায়গায় গর্তের কারণে সংকুচিত হয়ে গেছে সড়ক। বিশেষ করে হোমনা চৌরাস্তার ২০০ মিটারের বেশি জায়গাসহ মীরশিকারি, শ্রীপুর, ঘাড়মোরা, কৃষ্ণপুর, কাশিপুর, ওমরাবাদ ও রঘুনাথপুর এলাকায় রাস্তার বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। এ কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তা ভাঙাচোরা থাকায় যানবাহনের চালকরা গতি কমিয়ে যাতায়াত করছেন।

সিএনজিচালক মো. সবুজ মিয়া বলেন, আমার বাড়ি হোমনা পৌরসভার শ্রীমদ্দি গ্রামে। অনেক বছর যাবত হোমনা চৌরাস্তা থেকে হোমনা-মুরাদনগর সড়কের কাশিপুর রাস্তায় সিএনজি চালাই। রাস্তাটি ভাঙাচোড়ার কারণে আমরা গাড়ি চালাতে পারি না। প্রায় ৮ বছর যাবত রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। চলতে গিয়ে যাত্রী নিয়ে অনেকবার রাস্তায় সিএনজি, অটোরিক্সা উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছি। গাড়ি ভেঙেছে অনেকবার। যাত্রীরাও আহত হয়েছেন। অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখনও হচ্ছে।

রিক্সাচালক আলা উদ্দিন বলেন, আমাদের অবস্থা তো খুবই খারাপ। উঁচা-নিচা ভাঙা রাস্তা, বড় বড় গর্ত, তিন চাকার রিক্সা নিয়া রাস্তার নামি। কিন্তু পেসেঞ্জার উঠতে চায় না। রিক্সাই আমার আয় রোজগারের একমাত্র সম্বল। ঠিকমতো পেসেঞ্জার টানতে পারিনা বলে কষ্টে কোনো রকমে জীবন চলে। রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করাা দরকার।

ঘাড়মোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মোল্লা বলেন, এ রাস্তাটি গত ২০১৬ সালে একবার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংস্কার করেছিল। এখন হোমনা থেকে কাশিপুর পর্যন্ত রাস্তাটি খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। কোনো যানবাহন এমনকি মানুষও ঠিকমতো চলতে ফিরতে পারে না। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়টি আমি ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু কিছুই হলো না। মাঝে একবার আমি ব্যক্তিগতভাবে ঘাড়মোড়া বাজার সংলগ্ন রাস্তাটি মাটি দিয়ে প্রাথমিকভাবে মেরামত করে দিয়েছিলাম।

হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, হোমনা কাশিপুর পর্যন্ত সড়কটি নিয়ে জেলা সমন্বয় সভায় একাধিকবার আলোচনা করেছি। বলার পর তারা বিভিন্ন সময় ছোটোখাটো মেরামত করে ঠিকই। কিন্তু এতে আমাদের হচ্ছে না। এ রাস্তায় জরুরী ভিত্তিতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ প্রয়োজন।

কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গৌরীপুর সড়ক উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ভুঞা বলেন, এ রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। এখন কার্যাদেশ প্রক্রিয়াধীন। খুব শিগগিরই পুরা রাস্তায় কাজ হবে। আর যেখানে চরম বিপর্যয়, গাড়ি চলতে সমস্যা হয় সেখানে ট্রাক পাঠাব।

কবে নাগাদ কাজ শুরু হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যাদেশটি শুরু হবে। তা হলে আগস্টের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্থপতি, তবে শেখ পরিবারের সবাই চোর-ডাকাত : শামীম সাঈদী

হোমনা-মুরাদনগর সড়কের ১৪ কি.মি. খানাখন্দে বেহাল দশা

প্রকাশের সময় : ০৪:০৬:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : 

কুমিল্লার হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলার সংযোগকারী প্রায় ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ আঞ্চলিক সড়কের হোমনা উপজেলা সদর থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার এলাকা খানাখন্দে ভরে গেছে। এসব খানাখন্দ চরম দুর্ভোগ ও মানুষের জীবন-মরণের ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচ ও কংক্রিট উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। ভারী বর্ষণের ফলে এসব গর্তে পানি জমে থাকায় নিয়মিত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সড়কটি দেশের রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহর কুমিল্লায় যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম।

সড়কটি হোমনা উপজেলা সদর থেকে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ সড়কে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই চলছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা ও মোটরসাইকেল। এসব যানবাহন ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে। সড়কের এ বেহাল দশায় ভোগান্তিতে রয়েছেন হোমনা, তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। গত কয়েক বছরে সংস্কার না হওয়ায় বেহাল হয়ে পড়েছে সড়কটি। রাস্তার এই বেহাল দশার কারণে পরিবহনে যাত্রীদেরও দিতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া।

সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক গর্তে পানি জমে আছে। অনেক জায়গায় গর্তের কারণে সংকুচিত হয়ে গেছে সড়ক। বিশেষ করে হোমনা চৌরাস্তার ২০০ মিটারের বেশি জায়গাসহ মীরশিকারি, শ্রীপুর, ঘাড়মোরা, কৃষ্ণপুর, কাশিপুর, ওমরাবাদ ও রঘুনাথপুর এলাকায় রাস্তার বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। এ কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তা ভাঙাচোরা থাকায় যানবাহনের চালকরা গতি কমিয়ে যাতায়াত করছেন।

সিএনজিচালক মো. সবুজ মিয়া বলেন, আমার বাড়ি হোমনা পৌরসভার শ্রীমদ্দি গ্রামে। অনেক বছর যাবত হোমনা চৌরাস্তা থেকে হোমনা-মুরাদনগর সড়কের কাশিপুর রাস্তায় সিএনজি চালাই। রাস্তাটি ভাঙাচোড়ার কারণে আমরা গাড়ি চালাতে পারি না। প্রায় ৮ বছর যাবত রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। চলতে গিয়ে যাত্রী নিয়ে অনেকবার রাস্তায় সিএনজি, অটোরিক্সা উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছি। গাড়ি ভেঙেছে অনেকবার। যাত্রীরাও আহত হয়েছেন। অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখনও হচ্ছে।

রিক্সাচালক আলা উদ্দিন বলেন, আমাদের অবস্থা তো খুবই খারাপ। উঁচা-নিচা ভাঙা রাস্তা, বড় বড় গর্ত, তিন চাকার রিক্সা নিয়া রাস্তার নামি। কিন্তু পেসেঞ্জার উঠতে চায় না। রিক্সাই আমার আয় রোজগারের একমাত্র সম্বল। ঠিকমতো পেসেঞ্জার টানতে পারিনা বলে কষ্টে কোনো রকমে জীবন চলে। রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করাা দরকার।

ঘাড়মোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মোল্লা বলেন, এ রাস্তাটি গত ২০১৬ সালে একবার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংস্কার করেছিল। এখন হোমনা থেকে কাশিপুর পর্যন্ত রাস্তাটি খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। কোনো যানবাহন এমনকি মানুষও ঠিকমতো চলতে ফিরতে পারে না। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়টি আমি ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু কিছুই হলো না। মাঝে একবার আমি ব্যক্তিগতভাবে ঘাড়মোড়া বাজার সংলগ্ন রাস্তাটি মাটি দিয়ে প্রাথমিকভাবে মেরামত করে দিয়েছিলাম।

হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, হোমনা কাশিপুর পর্যন্ত সড়কটি নিয়ে জেলা সমন্বয় সভায় একাধিকবার আলোচনা করেছি। বলার পর তারা বিভিন্ন সময় ছোটোখাটো মেরামত করে ঠিকই। কিন্তু এতে আমাদের হচ্ছে না। এ রাস্তায় জরুরী ভিত্তিতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ প্রয়োজন।

কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গৌরীপুর সড়ক উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ভুঞা বলেন, এ রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। এখন কার্যাদেশ প্রক্রিয়াধীন। খুব শিগগিরই পুরা রাস্তায় কাজ হবে। আর যেখানে চরম বিপর্যয়, গাড়ি চলতে সমস্যা হয় সেখানে ট্রাক পাঠাব।

কবে নাগাদ কাজ শুরু হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যাদেশটি শুরু হবে। তা হলে আগস্টের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।