গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইসমাইল হোসাইন।
তিনি বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সমগ্র জাতি। গত দুই সপ্তাহ ধরে সরকার, প্রশাসন, সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও হেফাজতে ইসলাম নিয়ে যে এক চতুর্মুখী সংঘর্ষ সমগ্র দেশে দেখা যাচ্ছে তা সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে।’
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পার্টির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা মো. ইসমাইল হোসাইন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গত ২৬ শে মার্চ দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পূর্তিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুম্মার নামাজের পর সাধারণ জনগণ ও পুলিশ বাহিনীর যে সংঘর্ষ হয় তা মূলত এর পরবর্তী ঘটনাগুলোর পটভূমি। যেকোনো প্রকার আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীকে দল-মত-নির্বিশেষে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখে পুলিশ।
সে দিন যদি জুম্মার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোন হেফাজত কর্মী অথবা সাধারণ জনগণ কোন প্রকার রাজনৈতিক উস্কানিমূলক অথবা অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ড করে থাকে তবে নিঃসন্দেহে পুলিশের ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেটাকে দমন করা উচিত ছিল।’
ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘পূর্বের যেকোনো সরকারের তুলনায় বর্তমান বাংলাদেশে পুলিশ যথেষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং ক্ষমতাধর। মাদক, চোরাচালান ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। গত ২৬ মার্চ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি মেহমানদের উপস্থিতিতে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্ব দরবারে ক্ষুন্ন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ভয়ানক অগ্নিসংযোগ ঘটায় মাদ্রাসার ছাত্ররা, সেটা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় বটে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু করে মোট ৩১টি সরকারি প্রশাসনিক ভবন, রেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগ ঘটায় মাদ্রাসার ছাত্ররা। হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় কর্মীদের থেকে যে বক্তব্য ছিল তা কিছুটা এমন যে, বায়তুল মোকাররম ও হাটহাজারীতে পুলিশের গুলি বর্ষণের ফলে ছাত্রদের নিহত হওয়ার প্রতিশোধ স্বরূপ এই অগ্নিসংযোগ। মাদ্রাসার ছাত্ররা এই বর্বরোচিত অগ্নিসংযোগে হেফাজতে ইসলামের কোন প্রকার ইন্ধন বা সরাসরি সহায়তা ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের কোন প্রকার উস্কানি বা ইন্ধন ছাড়া ছাত্ররা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করে ফেলতে পারে, তাহলে হেফাজত ইসলামের নেতৃবৃন্দের ভূমিকা কি? তাদের কর্মীরা কি তাদের নেতাদের দিকনির্দেশনার কোন তোয়াক্কা করে না? এটা কি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের চরম ব্যর্থতা নয়? নিছক দায় এড়ানোর ভাব করে এত বড় অগ্নিসংযোগের ঘটনার দায় কি হেফাজত ইসলাম অস্বীকার করতে পারবে?’
ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘কথায় কথায় তারা জিহাদের ডাক দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় কোন সাহসে? আবার নিহত ছাত্রদের শহীদের ফজিলত শুনিয়ে রাস্তায় নামায় কোন সাহসে? তারপর আবার নিহতদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করে, এতে কি তাদের ন্যূনতম লজ্জা হয় না? সাধারণ জনগণের কাছে কি তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই?’
তিনি বলেন, ‘২৬ মার্চের ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি। এই টাকা তো সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকা। এখানে তো সরকারের কোন লাভ বা ক্ষতি হচ্ছে না। জনগণের এই টাকা কি হেফাজতে ইসলাম ফেরত দেবে?’
সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব আল্লামা সাইখুল হাদিস প্রিন্সিপাল শাহাদাত হোসাইন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শাহ মো. ওমর ফারুক, হাফেজ মাওলানা মুফতী মোস্তফা চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল আবেদীন, হাফেজ মাওলানা মুফতী শহিদুল ইসলাম, মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক, খতিব আল্লামা হযরত মাওলানা তাহেরুল ইসলাম, হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহসেন চৌধুরী, হাফেজ মাওলানা আব্দুল আজিজ প্রমূখ।