নিজস্ব প্রতিবেদক :
শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা প্রয়োজনমতো চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফোনে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন এসব কথা জানান।
এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়ার মতো তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি এখনো হয়নি। তাঁকে আরও কত দিন হাসপাতালে থাকতে হবে, সে ব্যাপারে মেডিকেল বোর্ড এ মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না।
তিনি বলেন, ম্যাডাম নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ডাক্তাররা, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা প্রতিদিন দুই-তিনবার দেখছেন। প্রয়োজনমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাচ্ছেন। সেই অনুযায়ী যেসব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেগুলো নিচ্ছেন তারা।
এদিকে রোববার (০৩ সেপ্টেম্বর) রাতে মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার (খালেদা জিয়া) শরীরে খনিজের অসমতা দেখা দিয়েছে। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পেটে পানি বেড়েছে। ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স দেখা দিয়েছে। এ কারণে ঘুম হচ্ছে না। কয়েকদিন ধরেই তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। বোর্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার লিভারের সমস্যা জটিল হচ্ছে। আসলে এর শতভাগ চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু একাধিক জটিলতা থাকায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ জন্য তাকে বার বার উন্নত সেন্টারে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ স্বাস্থ্যের প্রায় সব প্যারামিটারই ওঠানামা করছে। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে। গত দুদিনে অনেক টেস্ট করা হয়েছে। বোর্ড কয়েকটির রেজাল্ট দেখে উদ্বিগ্ন।
গত ৯ আগস্ট থেকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা কার্যক্রম তদারকি করছে।
এর আগেও গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন।
গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার অ্যানজিওগ্রাম করা হলে তাঁর হৃদ্যন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান সব সময় চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং মনিটরিং করছেন।
বোর্ডের একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন থাকলেও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি একেবারে ‘স্লো’। বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সার্বক্ষণিক তারা মনিটরিংয়ে রাখছেন।
খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, লিভারসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। একাধিকবার মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার যেসব জটিলতা রয়েছে, সেসবের চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। তাকে বিদেশে লিভার ট্রান্সপারেন্ট সুবিধা সংম্বলিত আধুনিক মাল্টিপারপাস অ্যাডভান্স সেন্টারে পাঠানো জরুরি। এসব সুপারিশের পর সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে।
এদিকে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর তিনি হাসপাতালে বেগম জিয়ার কেবিনে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।