স্পোর্টস ডেস্ক :
ম্যাচটা যেন ভুল আর ভুলের প্রায়শ্চিত্তের। প্রথমার্ধে পেনাল্টি মিস করলেন আর্লিং হলান্ড, গোলবঞ্চিত হলো সিটি। দ্বিতীয়ার্ধে এই হলান্ডই দারুণ হেডে গোল করে এগিয়ে দিলেন দলকে। আবার শেষ দিকে রদ্রির পায়ে লেগে বল দিক পাল্টানোয় গোল হজম করল সিটি। তিন মিনিট পরই জোরালো শটে গোল এনে দিলেন তিনি।
ভুল আর ভুলের প্রায়শ্চিত্তের ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত শেফিল্ড ইউনাইটেডকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। মৌসুমে এটি সিটির তৃতীয় জয়। এ জয়ের সুবাদে লিগ পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও উঠে গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। প্রথম তিন ম্যাচ থেকে আর কারও ৯ পয়েন্ট তোলার সুযোগ না থাকায় সপ্তাহটা শীর্ষে থেকেই করবে সিটি।
প্রিমিয়ার লিগে এর আগেও ১৯৯টা জয় পেয়েছেন পেপ গার্দিওলা। এর চেয়ে রোমাঞ্চ ছড়ানো জয়ও অনেক পেয়েছেন। তবে শেফিল্ড ইউনাইটেডের মাঠে আজ শেষ দিকে নাটক ছড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির ২-১ গোলের জয়টা গার্দিওলাকে অন্যরকম একটা তৃপ্তি দিয়ে যাবে। সেটি এই যে, তাঁর সিটি পরিস্থিতির দাবি মেটানো ফুটবল খেলতে শিখে গেছে!
এ জয়ে একটা রেকর্ডও হয়েছে গার্দিওলার। তাঁর চেয়ে দ্রুতগতিতে ২০০ জয় পাওয়া কোচ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে তো নয়ই, ইংল্যান্ডের শীর্ষস্তরের ইতিহাসেই নেই।
ফুটবলের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান অপটা প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই জানাল ম্যানচেস্টার সিটির একটা ‘কীর্তি’র কথা। সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার কপালে তা চিন্তার ভাঁজ না ফেলে পারে না। ‘কীর্তি’টা যে পেনাল্টিতে সিটির ব্যর্থতার। প্রথমার্ধে পেনাল্টি পেলেও তা থেকে গোল করতে পারলেন না সিটির ‘গোলমেশিন’ আর্লিং হলান্ড। অপটা জানাচ্ছে, গার্দিওলার অধীনে ৬১টি পেনাল্টির ১৮টিই মিস করেছে সিটি। সাফল্যের হাত ৭০ ভাগ। এ সময়ে অন্তত ৩০টি পেনাল্টি পেয়েছে – এমন দলগুলোর মধ্যে সিটিরই সাফল্যের হার সবচেয়ে কম।
পিঠে অস্ত্রোপচার করার কারণে এই ম্যাচে সিটির ডাগআউটে ছিলেন না কোচ পেপ গার্দিওলা। ব্র্যামাল লেনে ম্যাচের ১২ মিনিটে গোলের সুযোগ হারান হালান্ড। ২০ মিনিটে অবশ্য নাথান আকের হেডে জালের দেখা পায় সফরকারীরা। কিন্তু রদ্রি অফসাইডে থাকায় বাতিল হয় সেই গোল।
৩৫ মিনিটে হুলিয়ান আলভারেসের শট বক্সের ভেতরে থাকা শেফিল্ড ফুটবলার এগানের হাতে লাগলে পেনাল্টি পায় সিটি। কিন্তু স্পটকিক থেকে গোলের সহজ সুযোগ মিস করে বসেন হালান্ড। হতাশার প্রথমার্ধের পর হালান্ডের হাত ধরেই এগিয়ে যায় সিটি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ম্যাচটাকে সিটির ‘অ্যাটাক ভার্সেস ডিফেন্স’ অনুশীলন বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু আক্রমণের পর আক্রমণ করেও বক্সে ছয়জনের সামনে আরও চারজন ফেলে গড়া শেফিল্ডের রক্ষণব্যুহ ভাঙা হচ্ছিল না সিটির। অবশেষে স্বস্তি এল ৬৩ মিনিটে। বাঁ দিক থেকে জ্যাক গ্রিলিশের বাতাসে ভাসানো ক্রসে শেফিল্ড রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ালেন কে? হলান্ড! শাপমোচন!
কিন্তু এই গোল ধরে রেখেই সিটি আরও গোল বের করার চেষ্টা যখন চালিয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে নিজেদেরই ভুলে সর্বনাশের শঙ্কা। বক্সে প্রতিপক্ষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে বল দখলে নিয়েও টাচলাইনের বাইরে বেরিয়ে যেতে থাকা অবস্থায় কী মনে করে ব্যাক হিল করলেন সিটির ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকার – নিজেদের বক্সের ভেতরেই! তা থেকে বল পেয়ে গেলেন শেফিল্ডের ফরোয়ার্ড, এরপর এ পা-ও পা ঘুরে বল জেইডেন বোগোলের পায়ে। তাঁর শট জড়িয়ে গেল জালে।
ম্যাচের বাকি তখন আর ৭ মিনিট। সিটি বুঝি পয়েন্ট হারাচ্ছে, এ-ই তখন সিটি সমর্থকদের শঙ্কা। হলান্ড পেনাল্টি মিসের পর গোল করেছেন, রদ্রির গোল হয়ে থেকেছে সিটির জয়সূচক।
কিন্তু গত মৌসুমে নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ট্রেবলের ইতিহাস গড়া এই সিটির মনের জোর তো এত সহজে হাল ছাড়তে দেয়নি! আরও তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে উঠেছে গার্দিওলার দল। ফলও পেয়ে গেছে হাতেনাতে ৮৭ মিনিটে।
এবার ভুল শেফিল্ড লেফটব্যাক ইয়াসের লারুচির, নিজেদের বক্সের বাঁ দিকের টাচলাইনে বল ক্লিয়ার করার সুযোগ থাকলেও তা না করে কাটাতে গিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে বল কেড়ে নিলেন কে? ওয়াকার। তাঁর পাস গেল ফোডেনের কাছে, ফোডেন বল ধরতে পারলেন না। কিন্তু ভাগ্য ভালো সিটির, বক্সেই বলটা গেল রদ্রির পায়ে। গত জুনে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে সিটিকে জেতানো গোলটি করা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আজও সিটির উদ্ধারকর্তা। তাঁর শট জড়িয়ে গেল জালে।
সিটি পেল জয়, গার্দিওলার হলো রেকর্ড। ২০০ জয় পেতে প্রিমিয়ার লিগে যে সিটির ডাগআউটে মাত্র ২৬৯ ম্যাচই বসতে হলো গার্দিওলাকে।
২০১৬-১৭ সালের পর এই প্রথম মৌসুমের শুরুর তিন ম্যাচই জিতল সিটি। প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ ১২ মৌসুমে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের টানা তিন জয়ে শুরুর একটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে ২০২০-২১ মৌসুমে তিন জয়ে শুরু করতে পেরেছিল লিভারপুল।