Dhaka বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হান্নান মাসউদের মুচলেকায় ছাড়া পাওয়া ‘সমন্বয়ক’ ফের চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির সময় সাবেক সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ (২৮) পাঁচজনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় তাদের আটক করা হয়। পরে চাঁদাবাজির মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এর আগে ‎ধানমন্ডি এলাকায় মব তৈরি করে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে ধানমন্ডি মডেল থানায় আটক হন রাব্বি। সে সময় তাকে থানা থেকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হান্নান মাসউদ।

আটককৃত অন্যরা হলেন- হাসিবুর রহমান ফরহাদ (৩১), আবদুর রহমান মানিক (৩৭), আবু সুফিয়ান (২৯) ও মো. শাহিন (৩৮)। তারা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মোহাম্মদপুর থানা শাখার পদধারী নেতা বলে জানা গেছে।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, আটককৃতদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম রাব্বি মোহাম্মদপুর থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলার চার নম্বর আসামি। দীর্ঘদিন তিনি পলাতক ছিলেন। তিনি মোহাম্মদপুর থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর তাকে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জানা গেছে, বসিলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে একটি শিশু মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে সেখানে চাঁদা দাবি করে একটি চক্র। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তাদের কয়েকজন এসে হাসপাতালের মালিকের কাছে চাঁদা চেয়ে মব তৈরি করে। হাসপাতালের মালিক সেনাবাহিনীকে ফোন করলে তারা এসে পাঁচজনকে আটক করে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের মালিক শিল্পী আক্তার বলেন, আমার হাসপাতালে একটি মৃত শিশু জন্ম নেওয়াকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যায় কয়েকজন চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়। কয়েক দফায় তারা আমার এবং আমার ছেলের কাছে চাঁদা চাইছিল। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আরও কয়েকজন সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানে যায়। আমি এ অবস্থা দেখে সেনাবাহিনীকে ফোন করলে তারা ঘটনাস্থলে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পাঁচজনকে নিয়ে যায়।

মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ (ডান থেকে দ্বিতীয় জন) পাঁচজনকে আটক করে সেনাবাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরে থানায় গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করেছেন বলেও জানান হাসপাতালের মালিক।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক।

‎তিনি বলেন, চাঁদাবাজির ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করে আমাদের কাছে সেনাবাহিনী হস্তান্তর করেছে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়েছেন একটি হাসপাতালের মালিক। আমরা সেটি যাচাই করে চাঁদাবাজির মামলা নেব। আটকদের মধ্যে রাব্বি নামে একজনের বিরুদ্ধে আমাদের থানায় আগের চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।’

আটককৃতদের মধ্যে রাব্বি নামে একজনের নামে চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে আদালতে পাঠাব।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে রাতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার বাসা ঘেরাও করে উত্তেজিত জনতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। জোর করে বাসার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তাঁরা। ৯৯৯-এ কল করে পরিস্থিতি জানিয়ে অভিযোগ করার পর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তারে চাপ ও পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন উপস্থিত কয়েকজন। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মোহাম্মদপুর থানার তৎকালীন সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ কয়েকজনকে হেফাজতে নেয় ধানমন্ডি থানা-পুলিশ। পরদিন ধানমন্ডি থানায় উপস্থিত হয়ে মুচলেকা দিয়ে সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ অন্যদের ছাড়িয়ে আনেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

হান্নান মাসউদের মুচলেকায় ছাড়া পাওয়া ‘সমন্বয়ক’ ফের চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক

প্রকাশের সময় : ১২:০৮:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির সময় সাবেক সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ (২৮) পাঁচজনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় তাদের আটক করা হয়। পরে চাঁদাবাজির মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এর আগে ‎ধানমন্ডি এলাকায় মব তৈরি করে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে ধানমন্ডি মডেল থানায় আটক হন রাব্বি। সে সময় তাকে থানা থেকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হান্নান মাসউদ।

আটককৃত অন্যরা হলেন- হাসিবুর রহমান ফরহাদ (৩১), আবদুর রহমান মানিক (৩৭), আবু সুফিয়ান (২৯) ও মো. শাহিন (৩৮)। তারা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মোহাম্মদপুর থানা শাখার পদধারী নেতা বলে জানা গেছে।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, আটককৃতদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম রাব্বি মোহাম্মদপুর থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলার চার নম্বর আসামি। দীর্ঘদিন তিনি পলাতক ছিলেন। তিনি মোহাম্মদপুর থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর তাকে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জানা গেছে, বসিলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে একটি শিশু মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে সেখানে চাঁদা দাবি করে একটি চক্র। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তাদের কয়েকজন এসে হাসপাতালের মালিকের কাছে চাঁদা চেয়ে মব তৈরি করে। হাসপাতালের মালিক সেনাবাহিনীকে ফোন করলে তারা এসে পাঁচজনকে আটক করে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের মালিক শিল্পী আক্তার বলেন, আমার হাসপাতালে একটি মৃত শিশু জন্ম নেওয়াকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যায় কয়েকজন চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়। কয়েক দফায় তারা আমার এবং আমার ছেলের কাছে চাঁদা চাইছিল। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আরও কয়েকজন সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানে যায়। আমি এ অবস্থা দেখে সেনাবাহিনীকে ফোন করলে তারা ঘটনাস্থলে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পাঁচজনকে নিয়ে যায়।

মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ (ডান থেকে দ্বিতীয় জন) পাঁচজনকে আটক করে সেনাবাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরে থানায় গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করেছেন বলেও জানান হাসপাতালের মালিক।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক।

‎তিনি বলেন, চাঁদাবাজির ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করে আমাদের কাছে সেনাবাহিনী হস্তান্তর করেছে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়েছেন একটি হাসপাতালের মালিক। আমরা সেটি যাচাই করে চাঁদাবাজির মামলা নেব। আটকদের মধ্যে রাব্বি নামে একজনের বিরুদ্ধে আমাদের থানায় আগের চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।’

আটককৃতদের মধ্যে রাব্বি নামে একজনের নামে চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে আদালতে পাঠাব।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে রাতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার বাসা ঘেরাও করে উত্তেজিত জনতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। জোর করে বাসার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তাঁরা। ৯৯৯-এ কল করে পরিস্থিতি জানিয়ে অভিযোগ করার পর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তারে চাপ ও পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন উপস্থিত কয়েকজন। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মোহাম্মদপুর থানার তৎকালীন সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ কয়েকজনকে হেফাজতে নেয় ধানমন্ডি থানা-পুলিশ। পরদিন ধানমন্ডি থানায় উপস্থিত হয়ে মুচলেকা দিয়ে সাইফুল ইসলাম রাব্বিসহ অন্যদের ছাড়িয়ে আনেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ।