Dhaka বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাদি হত্যাচেষ্টা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে নুরুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলায় নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদকে প্রাইভেটকারে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার পরবর্তী রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার পুলিশ পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী আদালতে তার রিমান্ড চেয়ে বলেন, ওসমান হাদিকে হত্যা চেষ্টা মামলায় ইতোমধ্যে ফয়সালের বাব-মাতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার সবাইকে জিজ্ঞেস করার পরে আজকের আসামিকেও ঘটনার মধ্যে পাওয়া গেছে। ওইদিন ফয়সাল তার বোনের বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় এ আসামি তাকে গাড়ি দিয়ে পালাতে সাহায্য করে। এ মামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এছাড়া প্রধান আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। এমনকি তার অবস্থান ও নিশ্চিত না। এজন্য আসামিকে রিমান্ডে নিলে সব বের হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শুনানিতে বলেন, আসামি নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল ফয়সালকে মাইক্রো বাসে পালানোর জন্য সুযোগ করে দেন। অস্ত্র কোথায় আছে এটা বের করার জন্য তার পাঁচ দিনের রিমান্ড চাচ্ছি।

মামলার আসামি নুরুজ্জামান নোমানী আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন, আমি গাড়ি ভাড়া দিয়ে বিপদে পরে গেছি। আমি হোয়াটসঅ্যাপে রেন্ট এ কারের ব্যবসা করি। এর জন্য ফয়সালের সঙ্গে নয় মাসের পরিচয়। তবে গত তিন মাস তার সাথে যোগাযোগ ছিল না। ওইদিন হটাৎ করে ফয়সাল আমাকে গাড়ি পাঠাতে বললে আমি পাঠাই। কারণ এটা আমার ব্যবসা। এখন সে গাড়ি নিয়ে কি করবে সেটা তো আমি জানিনা।

পরে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক জশিতা ইসলাম এ আসামিকে বলেন রিমান্ড মানে শাস্তি না, আপনি তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এ আসামিকে ফয়সাল করিম মাসুদের মা বাবাসহ কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। বর্তমানে এ মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভিন্ন বিচারকের আদালতে প্রধান অভিযুক্তের মা-বাবা জবানবন্দি দিচ্ছেন।

এর আগে হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, হত্যাচেষ্টা, বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহার করে স্বেচ্ছায় গুরুতর আঘাত, দুষ্কর্মে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদসহ (৩৭) অজ্ঞাতনামা আসামিরা তৎকালীন সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। তবে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণমানুষের অংশগ্রহণে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শরীফ ওসমান হাদি (৩৩) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তিনি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ গঠন করে এর মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। এ কারণে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের বিরোধিতার মুখে পড়েন এবং একাধিকবার হত্যার হুমকি পান।

এজাহারে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শরীফ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা শেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে পল্টন থানাধীন বক্স কালভার্ট রোডে তাকে বহনকারী অটোরিকশায় মোটরসাইকেলে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে শরীফ ওসমান হাদি মাথা ও ডান কানের নিচে গুরুতর আহত হন। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, হেলমেট পরিহিত দুই সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলে এসে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনার সময় একই অটোরিকশায় থাকা তার ভাই ওমর বিন হাদি (৩১) ও অন্যান্য সহকর্মীরা ফুটেজ দেখে আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদকে শনাক্ত করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা, প্রার্থীদের মনোবল দুর্বল করা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়। ঘটনার পর আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

হাদি হত্যাচেষ্টা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে নুরুজ্জামান

হাদি হত্যাচেষ্টা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে নুরুজ্জামান

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৩:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলায় নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদকে প্রাইভেটকারে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার পরবর্তী রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার পুলিশ পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী আদালতে তার রিমান্ড চেয়ে বলেন, ওসমান হাদিকে হত্যা চেষ্টা মামলায় ইতোমধ্যে ফয়সালের বাব-মাতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার সবাইকে জিজ্ঞেস করার পরে আজকের আসামিকেও ঘটনার মধ্যে পাওয়া গেছে। ওইদিন ফয়সাল তার বোনের বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় এ আসামি তাকে গাড়ি দিয়ে পালাতে সাহায্য করে। এ মামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এছাড়া প্রধান আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। এমনকি তার অবস্থান ও নিশ্চিত না। এজন্য আসামিকে রিমান্ডে নিলে সব বের হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শুনানিতে বলেন, আসামি নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল ফয়সালকে মাইক্রো বাসে পালানোর জন্য সুযোগ করে দেন। অস্ত্র কোথায় আছে এটা বের করার জন্য তার পাঁচ দিনের রিমান্ড চাচ্ছি।

মামলার আসামি নুরুজ্জামান নোমানী আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন, আমি গাড়ি ভাড়া দিয়ে বিপদে পরে গেছি। আমি হোয়াটসঅ্যাপে রেন্ট এ কারের ব্যবসা করি। এর জন্য ফয়সালের সঙ্গে নয় মাসের পরিচয়। তবে গত তিন মাস তার সাথে যোগাযোগ ছিল না। ওইদিন হটাৎ করে ফয়সাল আমাকে গাড়ি পাঠাতে বললে আমি পাঠাই। কারণ এটা আমার ব্যবসা। এখন সে গাড়ি নিয়ে কি করবে সেটা তো আমি জানিনা।

পরে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক জশিতা ইসলাম এ আসামিকে বলেন রিমান্ড মানে শাস্তি না, আপনি তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এ আসামিকে ফয়সাল করিম মাসুদের মা বাবাসহ কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। বর্তমানে এ মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভিন্ন বিচারকের আদালতে প্রধান অভিযুক্তের মা-বাবা জবানবন্দি দিচ্ছেন।

এর আগে হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, হত্যাচেষ্টা, বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহার করে স্বেচ্ছায় গুরুতর আঘাত, দুষ্কর্মে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদসহ (৩৭) অজ্ঞাতনামা আসামিরা তৎকালীন সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। তবে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণমানুষের অংশগ্রহণে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শরীফ ওসমান হাদি (৩৩) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তিনি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ গঠন করে এর মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। এ কারণে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের বিরোধিতার মুখে পড়েন এবং একাধিকবার হত্যার হুমকি পান।

এজাহারে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শরীফ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা শেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে পল্টন থানাধীন বক্স কালভার্ট রোডে তাকে বহনকারী অটোরিকশায় মোটরসাইকেলে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে শরীফ ওসমান হাদি মাথা ও ডান কানের নিচে গুরুতর আহত হন। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, হেলমেট পরিহিত দুই সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলে এসে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনার সময় একই অটোরিকশায় থাকা তার ভাই ওমর বিন হাদি (৩১) ও অন্যান্য সহকর্মীরা ফুটেজ দেখে আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদকে শনাক্ত করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা, প্রার্থীদের মনোবল দুর্বল করা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়। ঘটনার পর আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়।