নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই আন্দোলনের অকুতোভয় যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে মানুষের ঢল নেমেছে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর সকাল সাড়ে ১০টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাত্র-জনতাকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়। এ সময় চীন থেকে আনা ৮টি আর্চওয়ে গেট দিয়ে সারিবদ্ধভাবে দক্ষিণ প্লাজায় প্রবেশ শুরু করে নানা বয়স ও শ্রেণির মানুষ। শেরে বাংলা নগর এলাকার অন্তত ৭টি স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করেছে পুলিশ। এই সকল চেকপোস্ট দিয়ে যারাই প্রবেশ করছেন তাদের তল্লাশি চালিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
মিছিল নিয়ে প্রবেশ করছেন অনেকেই। সবার মুখেই স্লোগান— ‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি’ ইত্যাদি স্লোগানও শোনা যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশ হ্যান্ড মাইকে ব্লেড, চাকু, গ্যাস লাইট, ড্রোন ও এই সংক্রান্ত কোনো যন্ত্রপাতি বহন করতে নিষেধ করছে। এ দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ আশেপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি এক হাজার পুলিশ সদস্যকে বডি-ওর্ন-ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তার দায়িত্বরর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাদির জানাজা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হতে পারে সে দিকে পুলিশ সজাগ দৃষ্টি রাখছে।
রাজধানীর ধোলাইখাল থেকে এসেছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি পেশায় খাবার হোটেলের কর্মচারী। আনোয়ার বলেন, ওসমান হাদিকে দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষ পছন্দ করতেন। তার দেশপ্রেম সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার মনে হয়েছে আপন ভাই মারা গেছেন। তাই হোটেল মালিক থেকে ছুটি নিয়ে তার জানাজায় আসছি।
গাজীপুরের কোনাবাড়ি থেকে আসা শাহজালাল নামের একজন বলেন, হাদি আমার ভাই। তার এমন মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমার পরিবারের সবাই তার মৃত্যুতে কান্না করেছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তাকে জান্নাত নসিব করেন।
নেত্রকোনা থেকে আসা কলেজশিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ রনি বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে বাড়ি থেকে এসেছি শুধুমাত্র হাদি ভাইয়ের জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করতে। তিনি বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর ছিলেন। তিনি আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক। তার জানাজায় যদি অংশগ্রহণ করতে না পারতাম তাহলে নিজের মধ্যে একটি অপরাধবোধ কাজ করতো। তাই কষ্ট করে হলেও নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় এসেছি।
চট্টগ্রাম থেকে শরীফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে আসা মো. ইশা বলেন, ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে আমি চট্টগ্রাম থেকে এসেছি। তিনি ভারতীয় আধিপত্যবাদের জন্য জীবন দিয়েছেন। তার জন্য দোয়া করি, মহান আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করুন।
নোয়াখালী থেকে আসা নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমি নোয়াখালী থেকে গতকাল রাতে ঢাকায় এসেছি। শুধুমাত্র জুলাই যোদ্ধা হাদি ভাইয়ের জানাজা নামাজে অংশ নিতে। আমাদের দাবি, যারা হাদি ভাইকে হত্যা করেছে তাদেরকে অতি দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক হাদির জানাজায় অংশ নিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের হাদির জানাজায় অংশ নিতে সকালেই এসেছি। তাকে গুলি করার পর থেকেই রাতে ঘুমাতে পারছি না। আল্লাহর কাছে তার জন্য সবসময় দোয়া করি। তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুক।
কথা হয় ঢাকার বাইরে থেকে আসা অয়ন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, হাদির আগে আল্লাহ আমাকে নিল না কেন? এ দেশে তার মতো মানুষের প্রয়োজন ছিল অনেক।
এদিকে, ওসমান হাদি নিহত হওয়ার ঘটনায় আজ শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনি প্রচারের সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন ওসমান হাদি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাতে তিনি মারা যান। তার মরদেহ বহনকারী বিমান শুক্রবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবতরণ করে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 
























