ধানমণ্ডিতে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানের বাইককে ধাক্কা দেওয়া হাজী সেলিমের সেই ল্যান্ড রোভার গাড়িটির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। বিআরটিএ সূত্র জানায়, ১০ বছর ধরে ওই গাড়ির ট্যাক্সটোকেন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট আপডেট করা হয়নি। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে এই গাড়িটির ফিটনেস সনদ নেই। বছরের পর বছর চলে গেলেও বাধ্যতামূলক ফিটনেস পরীক্ষার ধার ধারেননি তারা। যদিও নিয়ম রয়েছে প্রতি বছর গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করে ছাড়পত্র নিতে হবে।
আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করেই গত ১০ বছর ধরে রাজপথে চালানো হচ্ছিল গাড়িটি। বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও ট্রাফিক পুলিশের কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুসারে ফিটনেস সনদ ছাড়া গাড়ি চালানো হলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে। গাড়ির ট্যাক্স টোকেন না থাকলে জরিমানা দিতে হবে ১০ হাজার টাকা।
এই গাড়ির মালিকের কাছে বিআরটিএ’র পাওনা হয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা। প্রতিটি যানবাহনকে ফিটনেস ছাড়পত্র নেয়ার সময় রোড ট্যাক্স এবং অগ্রিম আয়কর জমা দিতে হয়। এই গাড়ির মালিককে প্রতি বছর রোড ট্যাক্স সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং এর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতি বছর অগ্রিম আয়কর হিসাবে ৭৫ হাজার টাকা দেয়ার কথা। ২০১০ সাল থেকে কাগজপত্র নবায়ন না করায় পাঁচ লাখের বেশি টাকা গাড়ির মালিক পরিশোধ করেননি। সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো গাড়িটি ব্যবহার করছিলেন হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিম।
আরও পড়ুন : হাজী সেলিমের ছেলে গ্রেফতার: বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধার
উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যার হুমকির ঘটনায় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমসহ তার দেহরক্ষী জাহিদুল ইসলাম, গাড়িচালক মিজানুর রহমান, মদীনা গ্রুপের প্রটোকল কর্মকর্তা এবি সিদ্দিক দিপু ও অজ্ঞাতনামা তিন জনসহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী লেফট্যানেন্ট ওয়াসিফ আহমদ খান। ওই রাতেই হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ২৬ অক্টোবর দুপুরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুরান ঢাকার চকবাজারে চান সরদার দাদা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইরফানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
অভিযানে অবৈধ দুইটি অস্ত্র, মদ, বিয়ার, ৩৮টি ওয়াকিটকি ও ভিএইএফ ডিভাইসযুক্ত ওয়াকিটকি বেজ স্টেশন জব্দ করা হয়। এরপর মদ্যপান ও বেআইনিভাবে ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ইরফানকে ১৮ মাসের সাজা দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তার দেহরক্ষী জাহিদুলকে বেআইনি ওয়াকিটকি ব্যবহারের জন্য ছয় মাসের করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।