হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত মোস্তাক মিয়া (২৪) পেশায় একজন শ্রমিক।
শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মোস্তাক গুলিবিদ্ধ হন।
নিহত মোস্তাক মিয়া (২৮) সিলেট জেলার টুকের বাজার এলাকার বাসিন্দা। তিনি হবিগঞ্জে পিডিবির ঠিকাদারের অধীনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে তাকে সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার মৃত্যু হয়।
মোস্তাকের সঙ্গে কাজ করেন মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, মোস্তাক এখানে জুতা কিনতে এসেছিল। এসে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। জানতে চাইলে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার বুকে-পিঠে গুলি লেগেছে।
নিহত মোস্তাক আহমেদের বয়স ২৬ বছর। তিনি পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিজিবি) ঠিকাদারের অধীনে লাইনম্যানের কাজ করতেন এবং তার বাড়ি সিলেটের টুকেরবাজার এলাকায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এর আগে হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহিরের বাসার গেট ভাঙচুর ও ১০টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও দেওয়া হয় আগুন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ এর অংশ হিসেবে জুমার নামাজের পর হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট মসজিদের সামনে অবস্থান নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় পূর্ব টাউন হল এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এক পর্যায়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় টাউন হল এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহিরের বাসায়ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং তার বাসার সামনে থাকা দশটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
পরে পুলিশ সেখানে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সহশ্রাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. খলিলুর রহমান বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপরই সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সহশ্রাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
সংসদ সদস্য আবু জাহির বলছেন, ছাত্র আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন প্রবেশ করে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন দেয়। এছাড়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে আমার বাসভবনে। বাসার সামনে থাকা ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল হক বলছেন, সংঘর্ষের সময় মোস্তাক আহমেদ শহরে জুতা কিনতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি গুলিবিদ্ধ হন বলে শুনেছি।