Dhaka মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হজের তিন প্যাকেজ ঘোষণা, কমলো বিমান ভাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আগামী বছরের হজযাত্রীদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। হজযাত্রীদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিমান ভাড়া ১২ হাজার ৯৯০ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে সচিবালয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

এবারের হজ পালনের খরচ সামান্য কমছে। আগামী বছর হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা। এবার বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।

সরকারি হজ প্যাকেজ, প্যাকেজ ০১ (বিশেষ): ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা। প্যাকেজ ০২ (সুলভ): ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা, প্যাকেজ ০৩ (সাশ্রয়ী): ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, এ বছর হজযাত্রীদের সুবিধার্থে বিমান ভাড়া কমানো হয়েছে। গত বছর ভাড়া ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা, এবার তা কমিয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২৬ সালের হজে বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে বলে জানান ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, গত বছর বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। এবার তা কমিয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে হজযাত্রী প্রতি বিমান ভাড়া ১২ হাজার ৯৯০ টাকা কমলো। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ভাড়া আরও কমানোর চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান। এছাড়া, বিমান ভাড়া থেকে বাংলাদেশ পর্বের ভ্যাট ও ট্যাক্স হজযাত্রীদের জন্য বহির্ভূত রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ৭০ বা ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ হজে যেতে চাইলে ৫০ বছরের নিচে একজনকে সাথে নিতে হবে, সংক্রামক রোগ আক্রান্ত কেউ হজ পালন করতে যেতে পারবেন না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। হজযাত্রী প্রেরণের দিক থেকেও আমাদের অবস্থান চতুর্থ। গত বছর দেশ থেকে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজ পালন করেছেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কথা বিবেচনা করে আমরা ২০২৬ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণার এই সময়ে উপনীত হয়েছি।

হজ একটি দ্বি-রাষ্ট্রিক কার্যক্রম উল্লেখ করে খালিদ হোসেন বলেন, নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সৌদি সরকারের ভূমিকাই প্রধান। ২০২৬ সালের হজের জন্য সৌদি প্রান্তের চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়নি। তাই বিগত বছরের হিসাবের ভিত্তিতে সম্ভাব্য খরচ ধরে প্যাকেজ প্রণয়ন করা হয়েছে। সৌদি সরকার কর্তৃক কোন খরচ বাড়লে বা কমলে প্যাকেজ মূল্যও সেই অনুযায়ী সমন্বয় করা হবে। বাড়তি টাকা হজযাত্রীদের দিতে হবে, কমলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ২০২৫ সালের হজযাত্রীদেরকে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

হজের খরচ কমলো, তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা

তিনি প্যাকেজের ব্যয় সম্পর্কে বলেন, সৌদি আরব পর্বের ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে মক্কা-মদিনায় বাড়ি/হোটেল ভাড়া, পরিবহন, জমজম পানি, মিনা-আরাফায় সার্ভিস চার্জ, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য বীমা, ইলেক্ট্রনিক্স ফি, গ্রাউন্ড সার্ভিস ফি, মিনার তাঁবু ভাড়া, লাগেজ পরিবহন এবং নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ‘দমে শোকর’ খরচ।

বাংলাদেশ পর্বের ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে বিমান ভাড়া, হজযাত্রীদের কল্যাণ তহবিল, প্রশিক্ষণ ফি, হজ গাইড ও অন্যান্য সার্ভিস চার্জ। এই দুই পর্বের ব্যয় যোগ করেই প্যাকেজ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২৬ সালের হজে কিছু নতুন ও বাড়তি খরচের কথাও উল্লেখ করেন তিনি, সৌদি সরকার স্বাস্থ্য বীমার পরিমাণ বাড়িয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪,২৭০ টাকা। মিনা ও আরাফায় তাঁবু ভাড়া ৪.২ শতাংশ বেড়েছে। প্রথমবারের মতো ‘দমে শোকর’ বাবদ ৭২০ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩,৬৫২ টাকা) প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার বেড়েছে। গত বছর যেখানে ১ রিয়াল ছিল ৩২.৫০ টাকা, এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.৮৫ টাকায়।

হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ)

এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গন থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। অ্যাটাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ পাঁচজনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি+’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।

হজ প্যাকেজ-২

এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গন থেকে ১.২ কিলোমিটার থেকে ১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। অ্যাপাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা।

হজ প্যাকেজ-১ ও হজ প্যাকেজ-২ এ নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে মক্কা ও মদিনায় ২ ও ৩ সিটের রুম আপগ্রেডেশন ও শর্ট প্যাকেজ সুবিধা গ্রহণ করা যাবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরব অবস্থানকাল হবে সাধারণত ৩৫-৪৭ দিন। তবে শর্ট প্যাকেজে সৌদি আরবে অবস্থানকাল হবে ২২-৩০ দিন।

হজ প্যাকেজ-৩

এটি সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের আবাসন হবে মক্কায় আজিজিয়া এলাকায় এবং মদিনায় মারকাজিয়া এলাকার বাইরে। একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। হারাম শরীফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যাতায়াতের নিমিত্ত এসি বাসের বন্দোবস্ত থাকবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই প্যাকেজ সরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য নতুন সংযোজন। এর আগে কখনো সরকারি মাধ্যমের হাজীদের আজিজিয়া এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে সর্বোচ্চ হজযাত্রী প্রেরণকারী তিনটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার হজযাত্রীদের বহু বছর ধরে আজিজিয়া এলাকাতেই রাখা হয়।

এছাড়া, আমাদের দেশের হজযাত্রীদের দীর্ঘবছর যাবৎ যে এলাকায় রাখা হতো এই এলাকার হোটেল বা বাড়িগুলো সৌদি সরকার ভেঙে ফেলেছে। এ কারণে আগামীতে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের আজিজিয়া এলাকায়ই রাখতে হবে।

হজ এজেন্সিসমূহের জন্য ‘বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ’ শিরোনামে একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। সরকার অনুমোদিত এই প্যাকেজ গ্রহণ করে এজেন্সিসমূহ অতিরিক্ত দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।

প্রত্যেক হজযাত্রীর খাবার বাবদ প্রতিদিন ন্যূনতম ৩৫ সৌদি রিয়াল ব্যয় হতে পারে। এ হিসাব অনুসারে খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা হজযাত্রীদের সঙ্গে নিতে হবে এবং নিজ দায়িত্বে খাবার ক্রয় করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সনের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।

গত ২৭ জুলাই থেকে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে এবংসৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১২ অক্টোবর হজের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে।

১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি ২০২৬ সালের হজে গমন করতে পারবেন। তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজ মূল্যের সমুদয় অর্থ আবশ্যিকভাবে জমা প্রদান করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আগামী ৯ নভেম্বর হজচুক্তি সম্পাদিত হবে। ২০২৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজ ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হবে। আর হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

হজের তিন প্যাকেজ ঘোষণা, কমলো বিমান ভাড়া

প্রকাশের সময় : ০৬:২৬:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আগামী বছরের হজযাত্রীদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। হজযাত্রীদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিমান ভাড়া ১২ হাজার ৯৯০ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে সচিবালয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

এবারের হজ পালনের খরচ সামান্য কমছে। আগামী বছর হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা। এবার বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।

সরকারি হজ প্যাকেজ, প্যাকেজ ০১ (বিশেষ): ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা। প্যাকেজ ০২ (সুলভ): ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা, প্যাকেজ ০৩ (সাশ্রয়ী): ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, এ বছর হজযাত্রীদের সুবিধার্থে বিমান ভাড়া কমানো হয়েছে। গত বছর ভাড়া ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা, এবার তা কমিয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২৬ সালের হজে বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে বলে জানান ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, গত বছর বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। এবার তা কমিয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে হজযাত্রী প্রতি বিমান ভাড়া ১২ হাজার ৯৯০ টাকা কমলো। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ভাড়া আরও কমানোর চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান। এছাড়া, বিমান ভাড়া থেকে বাংলাদেশ পর্বের ভ্যাট ও ট্যাক্স হজযাত্রীদের জন্য বহির্ভূত রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ৭০ বা ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ হজে যেতে চাইলে ৫০ বছরের নিচে একজনকে সাথে নিতে হবে, সংক্রামক রোগ আক্রান্ত কেউ হজ পালন করতে যেতে পারবেন না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। হজযাত্রী প্রেরণের দিক থেকেও আমাদের অবস্থান চতুর্থ। গত বছর দেশ থেকে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজ পালন করেছেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কথা বিবেচনা করে আমরা ২০২৬ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণার এই সময়ে উপনীত হয়েছি।

হজ একটি দ্বি-রাষ্ট্রিক কার্যক্রম উল্লেখ করে খালিদ হোসেন বলেন, নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সৌদি সরকারের ভূমিকাই প্রধান। ২০২৬ সালের হজের জন্য সৌদি প্রান্তের চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়নি। তাই বিগত বছরের হিসাবের ভিত্তিতে সম্ভাব্য খরচ ধরে প্যাকেজ প্রণয়ন করা হয়েছে। সৌদি সরকার কর্তৃক কোন খরচ বাড়লে বা কমলে প্যাকেজ মূল্যও সেই অনুযায়ী সমন্বয় করা হবে। বাড়তি টাকা হজযাত্রীদের দিতে হবে, কমলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ২০২৫ সালের হজযাত্রীদেরকে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

হজের খরচ কমলো, তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা

তিনি প্যাকেজের ব্যয় সম্পর্কে বলেন, সৌদি আরব পর্বের ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে মক্কা-মদিনায় বাড়ি/হোটেল ভাড়া, পরিবহন, জমজম পানি, মিনা-আরাফায় সার্ভিস চার্জ, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য বীমা, ইলেক্ট্রনিক্স ফি, গ্রাউন্ড সার্ভিস ফি, মিনার তাঁবু ভাড়া, লাগেজ পরিবহন এবং নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ‘দমে শোকর’ খরচ।

বাংলাদেশ পর্বের ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে বিমান ভাড়া, হজযাত্রীদের কল্যাণ তহবিল, প্রশিক্ষণ ফি, হজ গাইড ও অন্যান্য সার্ভিস চার্জ। এই দুই পর্বের ব্যয় যোগ করেই প্যাকেজ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২৬ সালের হজে কিছু নতুন ও বাড়তি খরচের কথাও উল্লেখ করেন তিনি, সৌদি সরকার স্বাস্থ্য বীমার পরিমাণ বাড়িয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪,২৭০ টাকা। মিনা ও আরাফায় তাঁবু ভাড়া ৪.২ শতাংশ বেড়েছে। প্রথমবারের মতো ‘দমে শোকর’ বাবদ ৭২০ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩,৬৫২ টাকা) প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার বেড়েছে। গত বছর যেখানে ১ রিয়াল ছিল ৩২.৫০ টাকা, এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.৮৫ টাকায়।

হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ)

এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গন থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। অ্যাটাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ পাঁচজনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি+’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।

হজ প্যাকেজ-২

এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গন থেকে ১.২ কিলোমিটার থেকে ১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। অ্যাপাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা।

হজ প্যাকেজ-১ ও হজ প্যাকেজ-২ এ নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে মক্কা ও মদিনায় ২ ও ৩ সিটের রুম আপগ্রেডেশন ও শর্ট প্যাকেজ সুবিধা গ্রহণ করা যাবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরব অবস্থানকাল হবে সাধারণত ৩৫-৪৭ দিন। তবে শর্ট প্যাকেজে সৌদি আরবে অবস্থানকাল হবে ২২-৩০ দিন।

হজ প্যাকেজ-৩

এটি সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের আবাসন হবে মক্কায় আজিজিয়া এলাকায় এবং মদিনায় মারকাজিয়া এলাকার বাইরে। একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। হারাম শরীফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যাতায়াতের নিমিত্ত এসি বাসের বন্দোবস্ত থাকবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই প্যাকেজ সরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য নতুন সংযোজন। এর আগে কখনো সরকারি মাধ্যমের হাজীদের আজিজিয়া এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে সর্বোচ্চ হজযাত্রী প্রেরণকারী তিনটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার হজযাত্রীদের বহু বছর ধরে আজিজিয়া এলাকাতেই রাখা হয়।

এছাড়া, আমাদের দেশের হজযাত্রীদের দীর্ঘবছর যাবৎ যে এলাকায় রাখা হতো এই এলাকার হোটেল বা বাড়িগুলো সৌদি সরকার ভেঙে ফেলেছে। এ কারণে আগামীতে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের আজিজিয়া এলাকায়ই রাখতে হবে।

হজ এজেন্সিসমূহের জন্য ‘বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ’ শিরোনামে একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। সরকার অনুমোদিত এই প্যাকেজ গ্রহণ করে এজেন্সিসমূহ অতিরিক্ত দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।

প্রত্যেক হজযাত্রীর খাবার বাবদ প্রতিদিন ন্যূনতম ৩৫ সৌদি রিয়াল ব্যয় হতে পারে। এ হিসাব অনুসারে খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা হজযাত্রীদের সঙ্গে নিতে হবে এবং নিজ দায়িত্বে খাবার ক্রয় করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সনের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।

গত ২৭ জুলাই থেকে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে এবংসৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১২ অক্টোবর হজের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে।

১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি ২০২৬ সালের হজে গমন করতে পারবেন। তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজ মূল্যের সমুদয় অর্থ আবশ্যিকভাবে জমা প্রদান করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আগামী ৯ নভেম্বর হজচুক্তি সম্পাদিত হবে। ২০২৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজ ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হবে। আর হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।