Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বৈরাচারের দোসররা অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলতে চাইছে : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর নানা ইস্যুতে অস্থিরতা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পালিয়ে যাওয়া সরকারের দোসররা দেশে অস্থিরতা করে বর্তমান সরকারকে বিপাকে ফেলতে চাইছে।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরে এখনো বসে আছে আওয়ামী লীগের দোসররা। ছাত্র-জনতা হত্যাকারীদের সরকারের বিভিন্ন স্তরে বসিয়ে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না। সরকার যাতে স্বস্তিতে কাজ করতে না পারে তার জন্য একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলছে স্বৈরাচারের দোসররা।

সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া নয় দাবি করে তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়গুলো দেশের মানুষের প্রত্যাশা থেকে পূরণ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সবার কাছ থেকে মতামত আশা উচিত।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা দায়িত্বেই থেকে গেছে। পুরোপুরি ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতনের পর বর্তমান সরকারের যে ল্যাকিং তা হলো সরকারে রাজনৈতিক মুখ নেই। নিঃসন্দেহে কিছু পলিটিক্যাল গ্যাপ তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশের মতো দেশে এই ধরনের পরিবর্তনের ফলে তখন তদবির অসংখ্যগুণ বেড়ে যায় বলে দাবি করেন মির্জা ফখরল। তিনি বলেন, তখন সবাই নতুন সরকারের কাছাকাছি যেতে চায়। ফলে, আমরা যদি আশা করি, এই সরকার এতো দ্রুত সবকিছু ম্যানেজ করবে—এটা আশা করা ঠিক হবে না।

ফখরুল বলেন, এখনও তাদের সরিয়ে পরিবর্তনের পক্ষের কিংবা নিরপেক্ষ লোক বসানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ কম হচ্ছে, সেই কারণে এখানে একটা শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। এই কারণে বিপ্লবের পর থেকে যে ঘটনাগুলো শুরু হয়েছে, তা কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রথমে আনসারদের ঘটনা ঘটানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। সরকারকে বিপদগ্রস্ত করার জন্য। এরপর বিভিন্ন ধরনের লোকজন তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্ঠা করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সর্বশেষ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের ঘটনা (ছাত্রদের হত্যা), সেটাকে আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি না।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে যে সংকট আছে, তা উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর বেশি-বেশি আলোচনা করা দরকার। সেটা হয়তো কোনো কারণে সম্ভব হচ্ছে না। অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা কিছুটা কম হচ্ছে।

এ সংকট শতভাগ রাজনৈতিক বলে মনে করনে মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পরিবর্তনটা রাজনৈতিক। এর দীর্ঘ আন্দোলনটা ছিল রাজনৈতিক। এখন সেই সেখানে রাজনৈতিক একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

ঢাবি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা ভালো হয়নি। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা সমাধান হতে পারে না। এসব সিদ্ধান্ত সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতি না থাকলে দেশে রাজনীতি টিকে থাকবে না।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করতে হয়। ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের একেবারে বিরোধিতা করি। হলে সিট দখল বন্ধ করতে হবে।

বর্তমান সরকারকে সহযোগিতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যতটুকু কাজ হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করি। মূল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বসতে হবে। কথা বলতে হবে। মানুষ প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন দেখতে চায় তা কথা বলে জানতে হবে। রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের দুটি জেলায় যে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইউনিভার্সিটিতে যেটা ঘটেছে সেটাও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এখানে বিরাজনীতিকরণের আভাস আছে। শেখ হাসিনা বিভিন্ন বক্তব্য প্রচার করছে, সে কারণে এখানে আরও উসকানি আছে। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের অভিজ্ঞতার সংকট এখানে একটা কারণ।

নির্বাচন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, যৌক্তিক সময় বলতে যত দেরি হবে ততই সমাজ ও দেশের ক্ষতি হবে। রাজনৈতিক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। গণহত্যার সহকারীদের রেখে কোনো পরিবর্তন টেকসই হবে না। ঘাড়ে ধাক্কা না দিলে দেশে কোনো পরিবর্তন হয় না। কারণ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হয়নি।

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ছয়টি কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ছয় কমিশন সংস্কারের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া উচিত। তারা যেটা করছেন সেটা সফল হোক আমরাও চাই, কিন্তু ব্যর্থ হবারও সুযোগ থেকে যাবে।

সংবিধান পরিবর্তনের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধান পরিবর্তনের আগে মানুষের মতামত নিয়ে তারপর পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আইনগত দিক দেখতে হবে। নির্বাচনের পর সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। এই সংবিধানের অধীনে শপথ না নিলে তারা সংবিধান পরিবর্তনের কথা বললে বেশি যৌক্তিক হতো।

বাসায় ফিরলেও ‘বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ নন’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, উনাকে ডাক্তাররা এখন পর্যন্ত ফিট টু ফ্লাইং, এটা মনে করছেন না। সেজন্য উনাকে বিদেশে নিতে বিলম্বটা হচ্ছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

স্বৈরাচারের দোসররা অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলতে চাইছে : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০৩:২৭:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর নানা ইস্যুতে অস্থিরতা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পালিয়ে যাওয়া সরকারের দোসররা দেশে অস্থিরতা করে বর্তমান সরকারকে বিপাকে ফেলতে চাইছে।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরে এখনো বসে আছে আওয়ামী লীগের দোসররা। ছাত্র-জনতা হত্যাকারীদের সরকারের বিভিন্ন স্তরে বসিয়ে রেখে ভালো কিছু সম্ভব না। সরকার যাতে স্বস্তিতে কাজ করতে না পারে তার জন্য একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলছে স্বৈরাচারের দোসররা।

সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া নয় দাবি করে তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়গুলো দেশের মানুষের প্রত্যাশা থেকে পূরণ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সবার কাছ থেকে মতামত আশা উচিত।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা দায়িত্বেই থেকে গেছে। পুরোপুরি ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতনের পর বর্তমান সরকারের যে ল্যাকিং তা হলো সরকারে রাজনৈতিক মুখ নেই। নিঃসন্দেহে কিছু পলিটিক্যাল গ্যাপ তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশের মতো দেশে এই ধরনের পরিবর্তনের ফলে তখন তদবির অসংখ্যগুণ বেড়ে যায় বলে দাবি করেন মির্জা ফখরল। তিনি বলেন, তখন সবাই নতুন সরকারের কাছাকাছি যেতে চায়। ফলে, আমরা যদি আশা করি, এই সরকার এতো দ্রুত সবকিছু ম্যানেজ করবে—এটা আশা করা ঠিক হবে না।

ফখরুল বলেন, এখনও তাদের সরিয়ে পরিবর্তনের পক্ষের কিংবা নিরপেক্ষ লোক বসানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ কম হচ্ছে, সেই কারণে এখানে একটা শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। এই কারণে বিপ্লবের পর থেকে যে ঘটনাগুলো শুরু হয়েছে, তা কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রথমে আনসারদের ঘটনা ঘটানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। সরকারকে বিপদগ্রস্ত করার জন্য। এরপর বিভিন্ন ধরনের লোকজন তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্ঠা করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সর্বশেষ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের ঘটনা (ছাত্রদের হত্যা), সেটাকে আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি না।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে যে সংকট আছে, তা উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর বেশি-বেশি আলোচনা করা দরকার। সেটা হয়তো কোনো কারণে সম্ভব হচ্ছে না। অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা কিছুটা কম হচ্ছে।

এ সংকট শতভাগ রাজনৈতিক বলে মনে করনে মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পরিবর্তনটা রাজনৈতিক। এর দীর্ঘ আন্দোলনটা ছিল রাজনৈতিক। এখন সেই সেখানে রাজনৈতিক একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

ঢাবি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা ভালো হয়নি। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা সমাধান হতে পারে না। এসব সিদ্ধান্ত সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতি না থাকলে দেশে রাজনীতি টিকে থাকবে না।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করতে হয়। ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের একেবারে বিরোধিতা করি। হলে সিট দখল বন্ধ করতে হবে।

বর্তমান সরকারকে সহযোগিতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যতটুকু কাজ হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করি। মূল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বসতে হবে। কথা বলতে হবে। মানুষ প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন দেখতে চায় তা কথা বলে জানতে হবে। রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের দুটি জেলায় যে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইউনিভার্সিটিতে যেটা ঘটেছে সেটাও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এখানে বিরাজনীতিকরণের আভাস আছে। শেখ হাসিনা বিভিন্ন বক্তব্য প্রচার করছে, সে কারণে এখানে আরও উসকানি আছে। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের অভিজ্ঞতার সংকট এখানে একটা কারণ।

নির্বাচন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, যৌক্তিক সময় বলতে যত দেরি হবে ততই সমাজ ও দেশের ক্ষতি হবে। রাজনৈতিক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। গণহত্যার সহকারীদের রেখে কোনো পরিবর্তন টেকসই হবে না। ঘাড়ে ধাক্কা না দিলে দেশে কোনো পরিবর্তন হয় না। কারণ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হয়নি।

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ছয়টি কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ছয় কমিশন সংস্কারের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া উচিত। তারা যেটা করছেন সেটা সফল হোক আমরাও চাই, কিন্তু ব্যর্থ হবারও সুযোগ থেকে যাবে।

সংবিধান পরিবর্তনের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধান পরিবর্তনের আগে মানুষের মতামত নিয়ে তারপর পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আইনগত দিক দেখতে হবে। নির্বাচনের পর সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। এই সংবিধানের অধীনে শপথ না নিলে তারা সংবিধান পরিবর্তনের কথা বললে বেশি যৌক্তিক হতো।

বাসায় ফিরলেও ‘বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ নন’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, উনাকে ডাক্তাররা এখন পর্যন্ত ফিট টু ফ্লাইং, এটা মনে করছেন না। সেজন্য উনাকে বিদেশে নিতে বিলম্বটা হচ্ছে।