নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বাণিজ্য হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মানুষকে বিভক্ত করা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা নিয়ে বক্তব্য দিয়ে জাতিকে আর বিভক্ত করা যাবে না।
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রসঙ্গ ও জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা করে সিএইচটিআরএফ।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য ফ্যাসিস্ট বড় হুমকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভূখণ্ড নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে কোনো পরিকল্পনা যাতে সফল হতে না পারে, সেজন্য সশস্ত্রবাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী, বুদ্ধিজীবী মহল সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র যাতে সফল না হয় সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে। অখন্ড বাংলাদেশ ও সবাই বাংলাদেশি এই পরিচয়কে ধারণ করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সকল নৃ-গোষ্ঠী, উপজাতি, আধা উপজাতিসহ সকলকে বাংলাদেশি হতে হবে। ভাষা, একক সংস্কৃতি ও ধর্ম কোনো জাতিকে গঠন করে না। সকল ভাষাভাষী, ধর্মালম্বী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী মিলেই একটি জাতি গঠন হয়।
তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতে আনতে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। যাতে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে। এটি বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রয়েছে। আগামী ৫০-১০০ বছর পর তা হয়তো প্রয়োজন নাও হতে পাড়ে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিগত সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই জাতিকে বিভক্ত করার মানসিকতা দেখেছি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও পক্ষ-বিপক্ষের কথা বলে আমাদের বিভক্ত করা হয়েছে। যাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল বলে আলাদা করতে চাই তারাও বিজয়ের পর তা অস্বীকার করেনি। এ সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার কথাও বলেন তিনি।
তিনি বলেন, তাদের (ফ্যাসিস্ট শক্তি) গোড়া আরেক জায়গায়। তারা মরিয়া প্রমাণ করিলো তাদের গোড়া কোন জায়গায়। তারা (আওয়ামী লীগ) বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। তারা কোনোদিন বাংলাদেশিদের জন্য রাজনীতি করেনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের সবার পরিচয় হবে আমরা বাংলাদেশি। আমাদের জাতীয়তা বাংলাদেশি, আমরা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে সবাইকে যেন পরিচয় দেই এবং এটিকে যেন আমরা ধারণ করতে পারি। সেটাই হবে আমাদের মূল ভিত্তি, জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য মূল শক্তি।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে কথাগুলো আমরা বার বার বলি, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে শক্তি করে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএইচটিআরএফ চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ। তিনি তার বক্তব্যে ‘আদিবাসী’, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) ড. মো. নাঈম আশফাক চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাবু রুইথি কারবারী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেক ফজল, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।