Dhaka সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশে পাকিস্তানি নারী

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন এক পাকিস্তানি নারী। তবে এবার প্রেমের টানে নয় স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে স্বামীর খোঁজে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে এসে পৌঁছেছেন তিনি।

মাহা বাজোয়ার (৩০) নামের ওই নারী পাকিস্তানের লাহোরের বাসিন্দা মকসুদ আহমেদের মেয়ে। মাহার স্বামীর নাম সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার (৩৫)। তিনি চুনারুঘাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বড়াইল এলাকার শফিউল্লা মজুমদারের ছেলে।

শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) স্বামীর খোঁজে বাংলাদেশে এসেছেন মাহা। বর্তমানে তিনি চুনারুঘাটে অবস্থান করছেন। এদিকে পাকিস্তানি বধূ আসার খবরে ওই এলাকায় ভিড় জমাচ্ছে উৎসুক জনতা।

ওই পাকিস্তানি নারী জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই থাকার সুবাদে সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ২০ লাখ টাকা রেজিস্ট্রারি কাবিনে পাকিস্তানে বিয়ে করেন। পরে সাজ্জাদ তাকে ২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট বাংলাদেশে নিয়া আসেন এবং তার চুনারুঘাটের বাসায় মাস দুয়েক ছিলেন। পরে ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে এলে পাকিস্তানে চলে যান তিনি। দুজনের পরিবারে ৯ বছরের একটি মেয়ে আছে।

বর্তমানে সাজ্জাদ দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এ নিয়ে দুজনের মাঝে পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন সাজ্জাদ। উপায়ন্তর না দেখে ওই নারী ভিসা নিয়ে গত ১৭ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে চুনারুঘাটের বড়াইল আসলে সাজ্জাদের পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে ওই নারী চুনারুঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৭ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে স্বামীর বাড়িতে আসেন। সেখানে স্বামী সাজ্জাদ ও তার স্বজনরা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন এবং ওই তরুণীকে মিথ্যা মোকদ্দমায় জড়িত করে ‘বাংলাদেশে আসার মজা শিখাইয়া দেবে’ বলে হুমকি দেয়। ঘটনা জানতে সরেজমিন সাজ্জাদের বাসায় গেলে তাকে পাওয়া জায়নি। তবে তার বোন ও ভগ্নিপতি, ২০২২ সালের ২৩ মে পাকিস্তানি নারীকে সাজ্জাদের তালাকের একটি এফিডেভিড দেখান। কিন্তু পাকিস্তানি নারী এ তালাক আইনসম্মত নয় এবং তিনি তালাক সংক্রান্ত কোনো নোটিস পাননি বলে জানিয়ে অবস্থান চালিয়ে যান।

পাকিস্তানি নারী মাহা বাজোয়া বলেন, সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার ওরফে হিরা দুবাই নাইটক্লাবে কাজ করত, সেই সুবাদে আমাদের পরিচয় হয়। চট্টগ্রামের সেলিম নামের একজনের মালিকানাধীন নাইটক্লাবে সাজ্জাদ হোসেন ওরফে হীরা কাজ করত। বছর খানেক আগে সেলিমের মালিকানাধীন নাইটক্লাবে দুবাইয়ের একজন স্থানীয় অতিরিক্ত নেশাগ্রস্ত হয়ে মারা যান। তখন সাজ্জাদের মালিক সেলিমকে দুবাই পুলিশ গ্রেফতার করে। তারপর সেলিমের স্ত্রী সোনিয়া ওরফে মুন্নীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে সাজ্জাদ। একপর্যায়ে সোনিয়া কারাবন্দি স্বামীকে রেখে তার জমানো অর্থকড়ি নিয়ে হিরাকে বিয়ে করে বাংলাদেশে চলে আসে। এরপর থেকে সাজ্জাদ আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তাই স্ত্রীর অধিকার আদায়ের জন্য অনশনে বসেছি। মরে গেলেও স্বামীর সঙ্গে দেখা না করে পাকিস্তান ফিরব না।

এ বিষয়ে সাজ্জাদের ভাই স্বপন মজুমদার বলেন, দুবাইয়ের একটি নাইট ক্লাবে সাজ্জাদ চাকরি করত। সেখানেই মাহার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তারা বিয়ে করেন। এক পর্যায়ে তাদের সংসারে ভাঙন ধরে। এ মুহূর্তে সাজ্জাদ বাড়িতে উপস্থিত নেই। তিনি এলে এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে বসে বিষয়টির সুরাহা করা হবে। পাকিস্তানের ওই নারী বর্তমানে তাদের আতিথেয়তায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

চুনারুঘাট থানা পুলিশের (ওসি) রাশেদুল হক বলেন, মাহা ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ এসেছেন। কিন্তু এদেশে অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি তিনি অনুসরণ করেননি। তিনি থানায় এসেছিলেন এবং পরে আবার আসবেন বলে চলে যান। ওই পাকিস্তানি নারী পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তাই ওই বিষয়টি এখন আর আমার জানা নেই।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি তরুণীর পা বিচ্ছিন্ন

স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশে পাকিস্তানি নারী

প্রকাশের সময় : ০৪:৫৮:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন এক পাকিস্তানি নারী। তবে এবার প্রেমের টানে নয় স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে স্বামীর খোঁজে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে এসে পৌঁছেছেন তিনি।

মাহা বাজোয়ার (৩০) নামের ওই নারী পাকিস্তানের লাহোরের বাসিন্দা মকসুদ আহমেদের মেয়ে। মাহার স্বামীর নাম সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার (৩৫)। তিনি চুনারুঘাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বড়াইল এলাকার শফিউল্লা মজুমদারের ছেলে।

শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) স্বামীর খোঁজে বাংলাদেশে এসেছেন মাহা। বর্তমানে তিনি চুনারুঘাটে অবস্থান করছেন। এদিকে পাকিস্তানি বধূ আসার খবরে ওই এলাকায় ভিড় জমাচ্ছে উৎসুক জনতা।

ওই পাকিস্তানি নারী জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই থাকার সুবাদে সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ২০ লাখ টাকা রেজিস্ট্রারি কাবিনে পাকিস্তানে বিয়ে করেন। পরে সাজ্জাদ তাকে ২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট বাংলাদেশে নিয়া আসেন এবং তার চুনারুঘাটের বাসায় মাস দুয়েক ছিলেন। পরে ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে এলে পাকিস্তানে চলে যান তিনি। দুজনের পরিবারে ৯ বছরের একটি মেয়ে আছে।

বর্তমানে সাজ্জাদ দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এ নিয়ে দুজনের মাঝে পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন সাজ্জাদ। উপায়ন্তর না দেখে ওই নারী ভিসা নিয়ে গত ১৭ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে চুনারুঘাটের বড়াইল আসলে সাজ্জাদের পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে ওই নারী চুনারুঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৭ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে স্বামীর বাড়িতে আসেন। সেখানে স্বামী সাজ্জাদ ও তার স্বজনরা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন এবং ওই তরুণীকে মিথ্যা মোকদ্দমায় জড়িত করে ‘বাংলাদেশে আসার মজা শিখাইয়া দেবে’ বলে হুমকি দেয়। ঘটনা জানতে সরেজমিন সাজ্জাদের বাসায় গেলে তাকে পাওয়া জায়নি। তবে তার বোন ও ভগ্নিপতি, ২০২২ সালের ২৩ মে পাকিস্তানি নারীকে সাজ্জাদের তালাকের একটি এফিডেভিড দেখান। কিন্তু পাকিস্তানি নারী এ তালাক আইনসম্মত নয় এবং তিনি তালাক সংক্রান্ত কোনো নোটিস পাননি বলে জানিয়ে অবস্থান চালিয়ে যান।

পাকিস্তানি নারী মাহা বাজোয়া বলেন, সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার ওরফে হিরা দুবাই নাইটক্লাবে কাজ করত, সেই সুবাদে আমাদের পরিচয় হয়। চট্টগ্রামের সেলিম নামের একজনের মালিকানাধীন নাইটক্লাবে সাজ্জাদ হোসেন ওরফে হীরা কাজ করত। বছর খানেক আগে সেলিমের মালিকানাধীন নাইটক্লাবে দুবাইয়ের একজন স্থানীয় অতিরিক্ত নেশাগ্রস্ত হয়ে মারা যান। তখন সাজ্জাদের মালিক সেলিমকে দুবাই পুলিশ গ্রেফতার করে। তারপর সেলিমের স্ত্রী সোনিয়া ওরফে মুন্নীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে সাজ্জাদ। একপর্যায়ে সোনিয়া কারাবন্দি স্বামীকে রেখে তার জমানো অর্থকড়ি নিয়ে হিরাকে বিয়ে করে বাংলাদেশে চলে আসে। এরপর থেকে সাজ্জাদ আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তাই স্ত্রীর অধিকার আদায়ের জন্য অনশনে বসেছি। মরে গেলেও স্বামীর সঙ্গে দেখা না করে পাকিস্তান ফিরব না।

এ বিষয়ে সাজ্জাদের ভাই স্বপন মজুমদার বলেন, দুবাইয়ের একটি নাইট ক্লাবে সাজ্জাদ চাকরি করত। সেখানেই মাহার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তারা বিয়ে করেন। এক পর্যায়ে তাদের সংসারে ভাঙন ধরে। এ মুহূর্তে সাজ্জাদ বাড়িতে উপস্থিত নেই। তিনি এলে এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে বসে বিষয়টির সুরাহা করা হবে। পাকিস্তানের ওই নারী বর্তমানে তাদের আতিথেয়তায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

চুনারুঘাট থানা পুলিশের (ওসি) রাশেদুল হক বলেন, মাহা ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ এসেছেন। কিন্তু এদেশে অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি তিনি অনুসরণ করেননি। তিনি থানায় এসেছিলেন এবং পরে আবার আসবেন বলে চলে যান। ওই পাকিস্তানি নারী পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তাই ওই বিষয়টি এখন আর আমার জানা নেই।