Dhaka রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর স্বামী-সন্তানের দুধ দিয়ে গোসল

গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :

স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় এক যুগের দাম্পত্যজীবনের ইতি টেনেছেন সাইফুল ইসলাম (৪৫)। শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল ৯টায় ছেলেকে নিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে তিনি এটি উদ্যাপন করেছেন। তবে স্থানীয়রা বলেছেন, দাম্পত্যজীবনের কলহ এভাবে প্রকাশ্যে আসা দুঃখজনক। তালাক-পরবর্তী এমন ব্যতিক্রমী আচরণ এলাকায় কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী ইউনিয়নের বাটিকামারী দরগাপাড়া গ্রামে। সাইফুল ওই গ্রামের বিল্লাল শেখের ছেলে। তিনি বাটিকামারী বাজারে সিমেন্ট, বালুসহ স্যানিটারির ব্যবসা করেন। আর স্ত্রী রোজিনা বেগম গৃহিণী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম ২০১৪ সালে ১০ অক্টোবর ভাঙ্গা উপজেলার ছোট মুসকুন্নি গ্রামের আদম আলী শেখের মেয়ে রোজিনা বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের দুই বছর পর ২০১৬ সালে এ দম্পতি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। দীর্ঘ প্রায় এক যুগের দাম্পত্যজীবনে তাঁদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। পারিবারিক অশান্তিতে তাঁদের মধ্যে তিক্ততা বাড়তেই থাকে। এর মাত্রা চরম আকার ধারণ করলে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি তাঁর ছেলে মিনহাজ শেখকে (১০) নিয়ে গ্রামে প্রকাশ্যে দুধ দিয়ে গোসল করেন।

স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সাইফুল বলেন, আমার দুই বোন ও মা-বাবা আছে। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্ত্রী আমার ছেলেকে প্রায়ই মারপিট করত। বিয়ের পর থেকে আমি তার অত্যাচার-নির্যাতনে তটস্থ থাকতাম। ৮ মাস আগে স্ত্রীর চাপে আমি মা-বাবার থেকে আলাদা হয়ে যাই। তাঁদের কাছে গেলে আমার স্ত্রী আমাকে ও আমার ছেলেকে অত্যাচার, নির্যাতন করত। অশান্তির মধ্যে আমরা বাবা-ছেলে ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলাম। তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠি। সংসার থেকে শান্তি নির্বাসনে চলে যায়। আমরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছিলাম।

সাইফুল বলেন, গত ৩১ জুলাই স্ত্রী আমাকে মারপিট করে। ওই দিন সে উল্টো আমি, আমার মা ও দুই বোন তাকে মারপিট করেছি বলে মুকসুদপুর থানায় মিথ্যা অভিযোগ দেয়। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান মুকসুদপুর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ। তিনি ৪ আগস্ট আমাদের দুই পক্ষের কথা শোনেন। ১৫ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের জন্য দুই পক্ষ সময় চায়। ১৫ আগস্ট পুলিশ ব্যস্ত ছিল, তাই মুকসুদপুরের একটি হোটেলে দুই পক্ষের লোকজন বসেন। ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এ-সংক্রান্ত আপস মীমাংসার কাগজ ওই এসআইয়ের কাছে শুক্রবার রোজিনা জমা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এক যুগের সংসারজীবনের বিভীষিকাময় একটি অধ্যায়ের অবসান হয়েছে। মুক্তির আনন্দে শনিবার (১৬ আগস্ট) ছেলেকে নিয়ে আমি দুধে গোসল করেছি।

জানতে চাইলে স্ত্রী রোজিনা বেগম গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। বাটিকামারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইবাদত মাতুব্বর বলেন, স্বামী-স্ত্রীর ছাড়াছাড়ির কথা আমি শুনেছি। দুধে গোসল করে দাম্পত্যজীবনের কলহ এভাবে প্রকাশ্যে আসা দুঃখজনক। আমি এটিকে ধিক্কার জানাই। বিষয়টি খারাপ হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পছন্দ করি না।

এ বিষয়ে মুকসুদপুর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোজিনা বেগম মারপিটের অভিযোগ আনেন স্বামী, শাশুড়ি ও দুই ননদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে শুক্রবার দুই পক্ষ বসে আপস মীমাংসা করেছে। আপস মীমাংসার কাগজ আমার কাছে ওই নারী জমা দিয়েছে। তবে সেখানে কী লিখেছে, তা আমি এখনো পড়ে দেখিনি। অবসর সময়ে দেখব।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বিদেশে-অনলাইনে পরে থাকতে হবে : তারেককে ইঙ্গিত করে পাটওয়ারী

স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর স্বামী-সন্তানের দুধ দিয়ে গোসল

প্রকাশের সময় : ০৮:২৮:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :

স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় এক যুগের দাম্পত্যজীবনের ইতি টেনেছেন সাইফুল ইসলাম (৪৫)। শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল ৯টায় ছেলেকে নিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে তিনি এটি উদ্যাপন করেছেন। তবে স্থানীয়রা বলেছেন, দাম্পত্যজীবনের কলহ এভাবে প্রকাশ্যে আসা দুঃখজনক। তালাক-পরবর্তী এমন ব্যতিক্রমী আচরণ এলাকায় কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী ইউনিয়নের বাটিকামারী দরগাপাড়া গ্রামে। সাইফুল ওই গ্রামের বিল্লাল শেখের ছেলে। তিনি বাটিকামারী বাজারে সিমেন্ট, বালুসহ স্যানিটারির ব্যবসা করেন। আর স্ত্রী রোজিনা বেগম গৃহিণী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম ২০১৪ সালে ১০ অক্টোবর ভাঙ্গা উপজেলার ছোট মুসকুন্নি গ্রামের আদম আলী শেখের মেয়ে রোজিনা বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের দুই বছর পর ২০১৬ সালে এ দম্পতি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। দীর্ঘ প্রায় এক যুগের দাম্পত্যজীবনে তাঁদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। পারিবারিক অশান্তিতে তাঁদের মধ্যে তিক্ততা বাড়তেই থাকে। এর মাত্রা চরম আকার ধারণ করলে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি তাঁর ছেলে মিনহাজ শেখকে (১০) নিয়ে গ্রামে প্রকাশ্যে দুধ দিয়ে গোসল করেন।

স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সাইফুল বলেন, আমার দুই বোন ও মা-বাবা আছে। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্ত্রী আমার ছেলেকে প্রায়ই মারপিট করত। বিয়ের পর থেকে আমি তার অত্যাচার-নির্যাতনে তটস্থ থাকতাম। ৮ মাস আগে স্ত্রীর চাপে আমি মা-বাবার থেকে আলাদা হয়ে যাই। তাঁদের কাছে গেলে আমার স্ত্রী আমাকে ও আমার ছেলেকে অত্যাচার, নির্যাতন করত। অশান্তির মধ্যে আমরা বাবা-ছেলে ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলাম। তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠি। সংসার থেকে শান্তি নির্বাসনে চলে যায়। আমরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছিলাম।

সাইফুল বলেন, গত ৩১ জুলাই স্ত্রী আমাকে মারপিট করে। ওই দিন সে উল্টো আমি, আমার মা ও দুই বোন তাকে মারপিট করেছি বলে মুকসুদপুর থানায় মিথ্যা অভিযোগ দেয়। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান মুকসুদপুর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ। তিনি ৪ আগস্ট আমাদের দুই পক্ষের কথা শোনেন। ১৫ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের জন্য দুই পক্ষ সময় চায়। ১৫ আগস্ট পুলিশ ব্যস্ত ছিল, তাই মুকসুদপুরের একটি হোটেলে দুই পক্ষের লোকজন বসেন। ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এ-সংক্রান্ত আপস মীমাংসার কাগজ ওই এসআইয়ের কাছে শুক্রবার রোজিনা জমা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এক যুগের সংসারজীবনের বিভীষিকাময় একটি অধ্যায়ের অবসান হয়েছে। মুক্তির আনন্দে শনিবার (১৬ আগস্ট) ছেলেকে নিয়ে আমি দুধে গোসল করেছি।

জানতে চাইলে স্ত্রী রোজিনা বেগম গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। বাটিকামারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইবাদত মাতুব্বর বলেন, স্বামী-স্ত্রীর ছাড়াছাড়ির কথা আমি শুনেছি। দুধে গোসল করে দাম্পত্যজীবনের কলহ এভাবে প্রকাশ্যে আসা দুঃখজনক। আমি এটিকে ধিক্কার জানাই। বিষয়টি খারাপ হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পছন্দ করি না।

এ বিষয়ে মুকসুদপুর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোজিনা বেগম মারপিটের অভিযোগ আনেন স্বামী, শাশুড়ি ও দুই ননদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে শুক্রবার দুই পক্ষ বসে আপস মীমাংসা করেছে। আপস মীমাংসার কাগজ আমার কাছে ওই নারী জমা দিয়েছে। তবে সেখানে কী লিখেছে, তা আমি এখনো পড়ে দেখিনি। অবসর সময়ে দেখব।