স্পোর্টস ডেস্ক :
শুরুতে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলেন সৌম্য সরকার। ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংসে পেলেন অভিবাদনও। তার ইনিংস জায়গা করে নিল রেকর্ডবুকে। কিন্তু দলের বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতায় দলের রান তিনশ ছুঁতে পারেনি।
রান তাড়া পরে কখনোই কঠিন হয়নি নিউজিল্যান্ডের। দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরির আফসোস থাকলেও জয়টা ঠিকই পেয়েছে তারা। নেলসনের স্যাক্সটন ওভালে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
২৯২ রানের লক্ষ্য ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ভালো কিছুর দরকার ছিল কিউইদের জন্য। সেই ভালো শুরুটাই এনে দিলেন দুই কিউই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র এবং উইল ইয়াং। বাংলাদেশের পেসাররা যেন পিচের ফায়দা নিতেই ভুলে গেলেন। তিন পেসার শরীফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব আর হাসান মাহমুদের কেউই সুবিধা করতে পারেননি কিউই ওপেনারদের সামনে।
শুরুতে কিছুটা সাবধানী খেললেও যতই সময় গড়িয়েছে টাইগার পেসারদের ওপর ততই চড়াও হয়েছেন ইয়াং এবং রাচিন। আগের ম্যাচেই দুর্দান্ত শতক হাঁকিয়েছিলেন ইয়াং। সেটাই ধরে রাখলেন সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও। আর রাচিন তো বিশ্বকাপ থেকেই আছেন দুরন্ত ফর্মে।
পাওয়ারপ্লের দশ ওভারে কিউইদের সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ৬১। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ১১তম ওভারে এসে ভেঙেছে এই দুজনের জুটি। দলীয় ৭৬ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৪৫ রান করে আউট হন রাচিন।
তবে এই উইকেটের পরেই যেন বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে আরও অনেকটাই ছিটকে পড়ে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে হেনরি নিকোলসকে নিয়ে উইল ইয়াং। দুজন মিলে গড়েছেন ১২৮ রানের জুটি। স্পিন কিংবা পেস কোন বিভাগেই এই জুটির সামনে সুবিধা করতে পারেনি। সাদামাটা বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে মূলত রানই উপহার দিয়ে গিয়েছেন টাইগার বোলাররা।
উইল ইয়াং ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। ৮৯ রানে তার ইনিংসের লাগাম টানেন সেই হাসান মাহমুদই। এরপর আবারও একটা বড় জুটি দেখেছে নিউজিল্যান্ড। এদফায় নিকোলসকে সঙ্গ দিয়েছেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। নিকোলসও পেতে পারতেন সেঞ্চুরি। তবে ৯৫ রানে ফিরতে হয়েছে তাকেও। রিশাদ হাসানের দিনের দ্বিতীয় ক্যাচ ছিলেন তিনি। উইকেট পেয়েছেন শরীফুল।
বাকি সময়টা আর ভুগতে হয়নি নিউজিল্যান্ডকে। দেখেশুনেই ম্যাচ শেষ করেছেন টম ব্লান্ডেল এবং টম ল্যাথাম। কিউইদের জয় এসেছে ৭ উইকেটের ব্যবধানে। বাংলাদেশের হয়ে সফল বোলার হাসান। পেয়েছেন দুই উইকেট। অন্য উইকেট গিয়েছে শরীফুলের কাছে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ দল। কিন্তু শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। ১২ বলে ব্যক্তিগত ২ রানে আউট হন ওপেনার এনামুল হক বিজয়। অ্যাডাম মিলনের ওভারে বলে খোঁচা মারেন তিনি। স্লিপে তার ক্যাচ নেন কিউই অধিনায়ক টম লাথাম। প্রথম ওয়ানডেতে ৪৩ রান করেছিলেন তিনি। বিজয়ের পর ভুল শট খেলে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। জ্যাকব ডাফির ওভারে লিডিং এজ হয়ে তিনি ক্যাচ দেন হেনরি নিকোলসকে। ৯ বলে ৬ রান করেন এ ব্যাটার।
লিটনও ফিরে যান পাওয়ার প্লের মধ্যেই। দশম ওভারের চতুর্থ বলে আউট হন এ ব্যাটার। ১১ বলে ৬ রান করেন তিনি। এরপর সৌম্য ও তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে রানের চাকা ঘুরছিল বাংলাদেশের। দুজনে মিলে গড়েছিলেন ৩৪ রানের জুটিও। কিন্তু সৌম্য ক্লার্কসনের একটি বল খেলেন সোজা স্টাম্প বরাবর, হৃদয় ছিলেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তের লাইন থেকে একটু দূরে, ক্লার্কসন বলে শরীর লাগিয়ে দিলে রানআউট হতে হয় তাকে।
উইকেটের মিছিলেই হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য। ৫৮ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। সে সময়ে জস ক্লার্কসনের বলে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন রাচিন রবীন্দ্র। একই ওভারে বাংলাদেশি অলরাউন্ডারকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার, রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান সৌম্য। সৌম্যকে দারুণ একটি জুটি গড়ে সঙ্গ দেন মুশফিকুর রহিম। দুজনে মিলে গড়েন ৯১ রানের জুটি। এরপর হাফসেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকতে আউট হন বাংলাদেশ কিপার। ৫৭ বলে ৫টি চারের মার খেলেন তিনি।
মুশফিকের পরে সৌম্যের সঙ্গে জুটি গড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনে ৫৩ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন। ব্যক্তিগত ১৯ রান করে মিরাজ আউট হলেও এক প্রান্ত আগলে রাখেন ওপেনার সৌম্য। শেষদিকে তানজিম হাসান সাকিব (১১ বলে ১৩ রান) ও রিশাদ হোসেনের সঙ্গে জুটি গড়েন সৌম্য। তবে ইনিংস শেষ করে যেতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ১৬৯ রান করে আউট হন। সবমিলিয়ে ৫০ ওভার থেকে ১ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশ পায় ২৯১ রানের সংগ্রহ। কিউইদের হয়ে আজ সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন জ্যাকব ডাফি এবং উইলিয়াম ওরুর্কে।
পাঁচ বছর পর ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সৌম্য। ছাড়িয়ে গেছেন নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস ১২৭ও। কত সুযোগ হাতছাড়া করেছেন সৌম্য নিজেও জানেন না। তবে বারবারই তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিলেন কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে।
শচীন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে সৌম্য দিয়েছেন প্রতিদান। এশিয়ান ব্যাটার হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড নিজের করে নিলেন সৌম্য। ২০০৯ সালে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ১৬৩ রানে অপরাজিত ছিলেন শচীন।