চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, শরীয়তপুর ও ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :
দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও সদর উপজেলার চারটি গ্রামের কিছু বাড়িতে, শরীয়তপুরের প্রায় ৩০ গ্রামের এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের প্রায় ১৩টি গ্রামের মানুষ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র রোজা পালন শুরু করেছেন।
রোববার (১০ মার্চ) রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে পবিত্র রমজান উপলক্ষে তারাবির জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যোগাযোগ বিডির চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, শরীয়তপুর ও ফরিদপুর সংবাদদাতারা জানায়,
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা জানায়, মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারী সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল, সোনাকানিয়া, গারাঙ্গিয়া ও গাটিয়াডাঙ্গা, লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা চরম্বা ও চুনতি, বাঁশখালী উপজেলার জালিয়াপাড়া, ছনুয়া, মক্ষিরচর, চাম্বল, শেখেরখীল, ডোংরা, তৈলারদ্বীপ ও কালিপুর পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও, বাহুলী ও ভেল্লাপাড়াসহ ৬০ গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ প্রথম রোজার সেহেরি খেয়ে রোজা রেখেছেন।
মির্জারখীল দরবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২৫০০ বছর আগে সাতকানিয়া উপজেলার মির্জারখীল গ্রামে হযরত মাওলানা মোখলেছুর রহমান জাহাঁগীরি (রহ.) হানাফি মাজহাবের ফতোয়া অনুযায়ী পৃথিবীর যেকোনো দেশে চাঁদ দেখা গেলে রোজা, ইদুল ফিতর, ইদুল-আজহাসহ সব ধর্মীয় উৎসব পালন করার ফতোয়া দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় মুরিদ ও অনুসারীরা একই নিয়মে সব ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাখীল দরবার শরীফের মাওলানা আবদুর রহমান বলেন, আমরা যেহেতু সৌদি আরবের দিনক্ষণ অনুসরণ করি, সে অনুযায়ী আজ রাতে আমরা সেহেরি খেয়ে রোজা রাখা শুরু করবো। আমরা হানাফী মাযহাবের অনুসারী হিসেবে সৌদি আরবের মক্কা ও মদীনা শরীফে তথা আরব বিশ্বে চন্দ্র উদয়ের খবর পেয়ে সোমবার ভোর রাতে সেহরি খেয়ে আমাদের প্রথম রোজা শুরু করবো। রবিবার রাতে আমরা তারাবীহ আদায় করেছি।
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানায়. নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও সদর উপজেলার চারটি গ্রামের কিছু বাড়িতে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা হয়। প্রায় ১০০ বছর ধরে বাংলাদেশের স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে একদিন আগেই তারাবির নামাজ পড়ে রোজা শুরু করেন তারা। এ বছরও এসব গ্রামের মানুষ একদিন আগেই পবিত্র রোজা পালন করছেন।
গ্রামগুলো হলো- নোয়াখালী পৌরসভা লক্ষ্মীনারায়ণপুর ও হরিণারায়নপুর গ্রাম; বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর গ্রাম।
মসজিদগুলো হলো- বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বসন্তবাগ গ্রামের সিনিয়র মাদ্রাসা জামে মসজিদ, বসন্তবাগ পোদ্দার বাড়ি জামে মসজিদ, বসন্তবাগ গ্রামের নগর বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, বসন্তবাগ গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, পশ্চিম বসন্তবাগ গ্রামের মুন্সি বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, ফাজিলপুর গ্রামের দায়রা বাড়ির জামে মসজিদ, বেগমগঞ্জের জিরতলী ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের জামে মসজিদ ও নোয়াখালী পৌরসভা লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের দায়রা বাড়ি কাছারিঘর, হরিণারায়নপুর রশিদিয়া রহিমিয়া দরবার শরিফ।
নোয়াখালী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, আমার বাড়িতে দরবার শরিফ। প্রতি বছর আমরা তারাবির নামাজ সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আদায় করি। পৃথিবীতে চাঁদ একটাই। সুতরাং পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলেই আমরা তারাবি, রোজা ও ঈদ পালন করি।
রশিদিয়া রহিমিয়া দরবার শরিফের মুসল্লি আবু তাহের বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আমার দাদারা রোজা-ঈদ পালন করেছেন। আমরা তারাবির নামাজ আদায় করলাম। এটাই আমাদের আনন্দ। আজ আমরা খুশি।
রশিদিয়া রহিমিয়া দরবার শরিফের ইমাম হাফেজ মোবারক হোসেন রাকিব বলেন, সর্বপ্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা রাখি এবং ঈদ উদযাপন করি। বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলেই আমরা রোজা ও ঈদুল ফিতর পালন করছি। আমাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখি। প্রায় ১০০ বছরের বেশি হবে।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানায়, বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের সহস্রাইল, দড়ি সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, বারাংকুলা, বড়গাঁ, মাইটকুমড়া, গঙ্গানন্দপুর, রাখালতলী, কাঁটাগড়, কলিমাঝি, বণ্ডপাশা, জয়দেবপুর ও দিঘীরপাড় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আগাম রোজা পালন শুরু করেছেন। তবে একদিন আগে যারা রোজা ও ঈদ উদ্যাপন করেন তারা সবাই চট্টগ্রামের মির্জাখিল শরীফের মুরিদান।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, শেখর ও পার্শ্ববর্তী রুপাপাত ইউনিয়নের প্রায় ১৩টি গ্রামের আংশিক মানুষ দীর্ঘদিন যাবত সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে আগাম রোজা ও দুইটি ঈদ উদ্যাপন করে আসছেন।
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানায়, সারা দেশে সুরেশ্বর পাক দরবার শরীফের কয়েক লাখ ভক্ত ও অনুরাগী ১৯২৮ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র তারাবি, রোজা ও ঈদ উদযাপন করে। এরমধ্যে শরীয়তপুরের সুরেশ্বর, কেদারপুর, চাকধ্, চন্ডিপুরসহ ৩০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র রোজা পালন করেন। পবিত্র রোজা রাখার উদ্দেশ্যে মুসল্লিরা রোববার রাতে তারাবির নামাজ পড়ে ভোর রাতে সেহরী খান। সোমবার (১১ মার্চ) থেকে তারা রোজা পালন করে আবার একদিন আগেই পবিত্র ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিবেন।
সুরেশ্বর দরবার শরীফের ভক্ত রফিক মিয়া বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র রোজা রাখবো বলে সুরেশ্বর দরবারে এসেছেন তারাবির নামাজ আদায় করতে।
তিনি বলেন, আমার বাবাও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখতেন। আমরা বংশ পরম্পরায় এভাবেই ধর্ম পালন করি। ইনশাআল্লাহ আমি সোমবার থেকে রোজা রাখব।
সুরেশ্বর দরবার শরীফের গদীনশীন পীর ও মুর্শিদ কেবলা শাহ মুজদ্দেদী সৈয়দ তৌহিদুল হোসাইন শাহিন নূরী বলেন, পবিত্র রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সুরেশ্বর দরবার শরীফের দুইটি মসজিদে প্রায় ১০০ বছর ধরে তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পৃথিবীতে চাঁদ একটাই। সুতরাং পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলেই আমরা তারাবি, রোজা ও ঈদ পালন করি। এবছর প্রথম ও দ্বিতীয় জামাত মিলে প্রায় ১ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে এসেছেন। সুরেশ্বরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৩০ গ্রামের ২০ হাজার মুসল্লি সোমবার পবিত্র রোজা পালন করছেন। দরবার শরীফের গদীনশীন পীর শাহ সূফি সৈয়দ কামাল নূরী আল সুরেশ্বরী ও শাহ সূফি সৈয়দ বেলাল নূরী আল সুরেশ্বরী সবাইকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।