Dhaka রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জাতীয় সনদ পাঠানো হবে : আলী রীয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নানা বৈঠকের পর ঐকমত্য কমিশনের গঠন করা জাতীয় সনদ সোমবার (২৮ জুলাই) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সোমবার (২৭ জুলাই) বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় ধাপের ১৯তম দিনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আজকের আলোচনার বিষয় ছিল রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব এবং পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব।

তিনি বলেন, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংলাপ সম্পন্ন করতে চায় কমিশন। কারণ, কমিশন দ্রুত জাতীয় সনদের দিকে অগ্রসর হতে চায়। এ লক্ষ্যে ‘জুলাই সনদের’ খসড়া সোমবার (২৮ জুলাই) এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে আজকের সংলাপ রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের আলোচ্য ২০টি বিষয়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে, যদিও এর মধ্যে কিছু বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে। সাতটি বিষয়ে এখনও ঐক্যমত হয়নি এবং তিনটি বিষয়ে আলোচনা অসমাপ্ত রয়েছে। অসমাপ্ত বিষয়গুলো নিয়ে পুনরায় আলোচনা প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো খসড়ায় একটি প্রাথমিক পটভূমি থাকবে এবং সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, আজকে থেকে আগামী তিন দিনের মধ্যে আমি আশা করছি, অনেকগুলো কাজ সম্পাদন করে আমরা প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করতে পারবো বা চূড়ান্তে উপনীত হতে পারবো। আপনারা (রাজনৈতিক দলগুলো) অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করছেন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টায় অবশ্যই সফলতা আসবে। এই বিশ্বাস এবং আস্থা আমাদের রাখা দরকার।

ড. আলী রিয়াজ বলেন, আমরা খসড়া নিয়ে এখানে কোনো আলোচনা করবো না। যদি বড় ধরনের কোনো মৌলিক আপত্তি ওঠে তাহলে আমরা সেটা ফ্লোরে আনবো না হলে আনবো না। আলাদাভাবে যদি আপনারা কোনো মতামত দেন, সেগুলো সংযোজন করেই চূড়ান্ত সনদ হবে। সেখানে পটভূমি থাকবে, প্রক্রিয়া থাকবে এবং কমিটমেন্টের জায়গাগুলো থাকবে। কিন্তু এখন প্রাথমিক পর্যায়ে যেগুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর তালিকা এখনই দেওয়া হচ্ছে না।

আজকের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে একটি অনালোচিত বিষয় আছে উল্লেখ করে আলী রিয়াজ বলেন, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণবিষয়ক প্রস্তাবটি অনালোচিত ছিল। সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল যে, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে এবং তৃতীয় ভাগে বর্ণিত যে অধিকারগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে, সেগুলো একটি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত করে বিল অফ রাইটসের মতো করে উপস্থাপন করা। সেই বিষয়ে তারা সুস্পষ্টভাবে কিছু কিছু পরামর্শ এবং সুপারিশ দিয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় দেখা গেছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, এ ব্যাপারে একমত হতে পারেননি। রাজনৈতিক দলগুলো নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের ব্যাপারে একমত কিন্তু কিভাবে সম্প্রসারণ করা হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে।

পুলিশ কমিশনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা একটি পুলিশ কমিশনের প্রস্তাব করেছি। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে ১৬৬টা সুপারিশ আপনাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সেগুলোতে পুলিশ কমিশনের ব্যাপারে সুপারিশ ছিল না। আমরা এখন একটি সংযুক্ত করছি সময়ক্ষেপণের জন্য নয়। এই আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে নাগরিকদের পক্ষ থেকে নানা জায়গা থেকে শুনেছি, যে পুলিশ কমিশনের বিষয়ে কেন আলোচনা হচ্ছে না। গত ১৬ বছরে পুলিশের ভূমিকার কারণেই এই প্রশ্নটা খুব বৈধভাবে উৎপন্ন হয়েছে। তাই এটি সংযুক্ত করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস আমরা, সবকিছু নিয়ে একটি ঐকমত্য তৈরি করতে পারবো।

আজকের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)সহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নেন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পাকুন্দিয়ায় শরীফ হত্যা মামলার আরো এক আসামী গ্রেফতার

সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জাতীয় সনদ পাঠানো হবে : আলী রীয়াজ

প্রকাশের সময় : ০১:২৬:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নানা বৈঠকের পর ঐকমত্য কমিশনের গঠন করা জাতীয় সনদ সোমবার (২৮ জুলাই) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সোমবার (২৭ জুলাই) বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় ধাপের ১৯তম দিনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আজকের আলোচনার বিষয় ছিল রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব এবং পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব।

তিনি বলেন, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংলাপ সম্পন্ন করতে চায় কমিশন। কারণ, কমিশন দ্রুত জাতীয় সনদের দিকে অগ্রসর হতে চায়। এ লক্ষ্যে ‘জুলাই সনদের’ খসড়া সোমবার (২৮ জুলাই) এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে আজকের সংলাপ রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের আলোচ্য ২০টি বিষয়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে, যদিও এর মধ্যে কিছু বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে। সাতটি বিষয়ে এখনও ঐক্যমত হয়নি এবং তিনটি বিষয়ে আলোচনা অসমাপ্ত রয়েছে। অসমাপ্ত বিষয়গুলো নিয়ে পুনরায় আলোচনা প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো খসড়ায় একটি প্রাথমিক পটভূমি থাকবে এবং সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, আজকে থেকে আগামী তিন দিনের মধ্যে আমি আশা করছি, অনেকগুলো কাজ সম্পাদন করে আমরা প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করতে পারবো বা চূড়ান্তে উপনীত হতে পারবো। আপনারা (রাজনৈতিক দলগুলো) অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করছেন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টায় অবশ্যই সফলতা আসবে। এই বিশ্বাস এবং আস্থা আমাদের রাখা দরকার।

ড. আলী রিয়াজ বলেন, আমরা খসড়া নিয়ে এখানে কোনো আলোচনা করবো না। যদি বড় ধরনের কোনো মৌলিক আপত্তি ওঠে তাহলে আমরা সেটা ফ্লোরে আনবো না হলে আনবো না। আলাদাভাবে যদি আপনারা কোনো মতামত দেন, সেগুলো সংযোজন করেই চূড়ান্ত সনদ হবে। সেখানে পটভূমি থাকবে, প্রক্রিয়া থাকবে এবং কমিটমেন্টের জায়গাগুলো থাকবে। কিন্তু এখন প্রাথমিক পর্যায়ে যেগুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর তালিকা এখনই দেওয়া হচ্ছে না।

আজকের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে একটি অনালোচিত বিষয় আছে উল্লেখ করে আলী রিয়াজ বলেন, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণবিষয়ক প্রস্তাবটি অনালোচিত ছিল। সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল যে, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে এবং তৃতীয় ভাগে বর্ণিত যে অধিকারগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে, সেগুলো একটি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত করে বিল অফ রাইটসের মতো করে উপস্থাপন করা। সেই বিষয়ে তারা সুস্পষ্টভাবে কিছু কিছু পরামর্শ এবং সুপারিশ দিয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় দেখা গেছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, এ ব্যাপারে একমত হতে পারেননি। রাজনৈতিক দলগুলো নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের ব্যাপারে একমত কিন্তু কিভাবে সম্প্রসারণ করা হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে।

পুলিশ কমিশনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা একটি পুলিশ কমিশনের প্রস্তাব করেছি। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে ১৬৬টা সুপারিশ আপনাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সেগুলোতে পুলিশ কমিশনের ব্যাপারে সুপারিশ ছিল না। আমরা এখন একটি সংযুক্ত করছি সময়ক্ষেপণের জন্য নয়। এই আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে নাগরিকদের পক্ষ থেকে নানা জায়গা থেকে শুনেছি, যে পুলিশ কমিশনের বিষয়ে কেন আলোচনা হচ্ছে না। গত ১৬ বছরে পুলিশের ভূমিকার কারণেই এই প্রশ্নটা খুব বৈধভাবে উৎপন্ন হয়েছে। তাই এটি সংযুক্ত করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস আমরা, সবকিছু নিয়ে একটি ঐকমত্য তৈরি করতে পারবো।

আজকের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)সহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নেন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।