Dhaka শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৈয়দপুরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ৩০০টির বেশি মালবাহী ওয়াগন

নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি : 

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ইয়ার্ডগুলোয় প্রায় দেড় যুগ ধরে পড়ে রয়েছে ৩০০টির বেশি মালবাহী ওয়াগন। একদিকে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ওয়াগন কেনা হচ্ছে। অন্যদিকে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে এসব পুরোনো ওয়াগন। সান্তাহার, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুর ইয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি ওয়াগন পড়ে রয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, মেরামতের উদ্যোগ না নেওয়ায় এগুলো এখন স্ক্র্যাপ (পরিত্যক্ত) হিসেবে বিক্রির চেষ্টা চলছে।

নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিকেরা বলছেন, ওয়াগনগুলো কারখানায় নিয়ে মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব। এতে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করা যেত। কিন্তু প্রয়োজনীয় মেটালিসটিক রাবার ইউনিটের সরবরাহ না থাকা এবং চাহিদা কম থাকার অজুহাতে ওয়াগনগুলো ইয়ার্ডে ফেলে রাখা হয়েছে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশন ইয়ার্ডে যেমন সান্তাহার, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুরে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার ৩২৯টি বিসি ধরনের ওয়াগন পড়ে রয়েছে। প্রতিটির আমদানি মূল্য ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে এগুলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৈয়দপুর রেলওয়ের এক উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, অতি প্রয়োজনীয় মেটালিসটিক রাবার ইউনিটের সরবরাহ না থাকায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে বিসি ধরনের মালবাহী ওয়াগন মেরামত করা হচ্ছে না। সান্তাহার জংশন ইয়ার্ডে ৯০টি বিসি ও ২৫টি বিসিএফজি বা হপার ওয়াগন রয়েছে। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদী ইয়ার্ড থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ আরও ৫০টি ওয়াগন সান্তাহার ডিপোতে রাখা হয়েছে। একই কারণে পার্বতীপুর ওয়াগন ডিপোতে ১২০টি ওয়াগন পড়ে রয়েছে।

রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ওয়াগনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অনেক আগেই শেষ। পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী সাদেকুর রহমান বলেন, একটি ওয়াগনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ বছর। কিন্তু পড়ে থাকা ওয়াগনগুলো প্রায় ৭০ বছরের পুরোনো। বডি, চাকা, বেয়ারিংসহ বেশির ভাগই নষ্ট। মেরামত করা সম্ভব নয়।

রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান বলেন, একদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, রেলে মালবাহী ওয়াগনের চাহিদা নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্প্রতি ভারত থেকে ৪২০টি মালবাহী ওয়াগন আমদানি করেছে। স্বল্পমূল্যের মেটালিসটিক রাবার ইউনিট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে ইয়ার্ডে পড়ে থাকা ওয়াগনগুলো মেরামত করা হচ্ছে না।

রোবায়েতুর রহমানের মতে, কাগজে-কলমে অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হলেও অবকাঠামো ঠিক থাকলে সেগুলো মেরামত করা সম্ভব, যেমন অর্থনৈতিক মেয়াদোত্তীর্ণ যাত্রীবাহী কোচগুলোকে জিওএইচ বা প্রকল্পের মাধ্যমে মেরামত করে নতুন প্রাণ দেওয়া হয়। একইভাবে মেটালিসটিক রাবার ইউনিট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ নিয়ে ওয়াগনগুলো আধুনিক রূপে ফেরানো সম্ভব।

রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, পড়ে থাকা ওয়াগনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সৈয়দপুরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ৩০০টির বেশি মালবাহী ওয়াগন

প্রকাশের সময় : ১২:১৫:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি : 

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ইয়ার্ডগুলোয় প্রায় দেড় যুগ ধরে পড়ে রয়েছে ৩০০টির বেশি মালবাহী ওয়াগন। একদিকে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ওয়াগন কেনা হচ্ছে। অন্যদিকে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে এসব পুরোনো ওয়াগন। সান্তাহার, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুর ইয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি ওয়াগন পড়ে রয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, মেরামতের উদ্যোগ না নেওয়ায় এগুলো এখন স্ক্র্যাপ (পরিত্যক্ত) হিসেবে বিক্রির চেষ্টা চলছে।

নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিকেরা বলছেন, ওয়াগনগুলো কারখানায় নিয়ে মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব। এতে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করা যেত। কিন্তু প্রয়োজনীয় মেটালিসটিক রাবার ইউনিটের সরবরাহ না থাকা এবং চাহিদা কম থাকার অজুহাতে ওয়াগনগুলো ইয়ার্ডে ফেলে রাখা হয়েছে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশন ইয়ার্ডে যেমন সান্তাহার, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুরে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার ৩২৯টি বিসি ধরনের ওয়াগন পড়ে রয়েছে। প্রতিটির আমদানি মূল্য ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে এগুলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৈয়দপুর রেলওয়ের এক উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, অতি প্রয়োজনীয় মেটালিসটিক রাবার ইউনিটের সরবরাহ না থাকায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে বিসি ধরনের মালবাহী ওয়াগন মেরামত করা হচ্ছে না। সান্তাহার জংশন ইয়ার্ডে ৯০টি বিসি ও ২৫টি বিসিএফজি বা হপার ওয়াগন রয়েছে। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদী ইয়ার্ড থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ আরও ৫০টি ওয়াগন সান্তাহার ডিপোতে রাখা হয়েছে। একই কারণে পার্বতীপুর ওয়াগন ডিপোতে ১২০টি ওয়াগন পড়ে রয়েছে।

রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ওয়াগনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অনেক আগেই শেষ। পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী সাদেকুর রহমান বলেন, একটি ওয়াগনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ বছর। কিন্তু পড়ে থাকা ওয়াগনগুলো প্রায় ৭০ বছরের পুরোনো। বডি, চাকা, বেয়ারিংসহ বেশির ভাগই নষ্ট। মেরামত করা সম্ভব নয়।

রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান বলেন, একদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, রেলে মালবাহী ওয়াগনের চাহিদা নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্প্রতি ভারত থেকে ৪২০টি মালবাহী ওয়াগন আমদানি করেছে। স্বল্পমূল্যের মেটালিসটিক রাবার ইউনিট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে ইয়ার্ডে পড়ে থাকা ওয়াগনগুলো মেরামত করা হচ্ছে না।

রোবায়েতুর রহমানের মতে, কাগজে-কলমে অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হলেও অবকাঠামো ঠিক থাকলে সেগুলো মেরামত করা সম্ভব, যেমন অর্থনৈতিক মেয়াদোত্তীর্ণ যাত্রীবাহী কোচগুলোকে জিওএইচ বা প্রকল্পের মাধ্যমে মেরামত করে নতুন প্রাণ দেওয়া হয়। একইভাবে মেটালিসটিক রাবার ইউনিট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ নিয়ে ওয়াগনগুলো আধুনিক রূপে ফেরানো সম্ভব।

রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, পড়ে থাকা ওয়াগনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা হবে।