Dhaka বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেপটিক ট্যাংক থেকে এমপি আনারের মরদেহের ‘খণ্ডিত অংশ উদ্ধার’

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয় সেই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহের ‘খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে এই দেহাংশ যে আনোয়ারুল আজিম আনারের তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি কলকাতায় যাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মঙ্গলবার (২৮ মে) বিকেলে কলকাতা পুলিশ ভবনটির স্যুয়ারেজ লাইনের পাইপ ও সেপটিক ট্যাংকে মরদেহের খণ্ডাংশের খোঁজে অভিযান চালায়।

ভারতে অবস্থানরত ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেপটিক ট্যাংক ভাঙা হয়। কলকাতার সিআইডিকে আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল সেপটিক ট্যাংক ভেঙে তল্লাশি চালানোর জন্য।

তবে ফরেনসিক ছাড়া এমপির মরদেহ এটা তা বলা যাবে না বলেও জানান তিনি।

সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতায় যাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ বলেন, আমরা কলকাতা স্থানীয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি, সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি মরদেহের অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেটি সংসদ সদস্য আনারের কি না তা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তাছাড়া কলকাতা সিআইডি বা পুলিশ আমাদের এখনও অফিসিয়ালি নিশ্চিত করেনি।

‘আমরা এই মুহূর্তে ঘটনা তদন্তের স্বার্থে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের একটি খালে তল্লাশীর কাজ পরিদর্শনে রয়েছি। এর মধ্যে আমরা এই তথ্য পেয়েছি। আমরা এখন ঘটনাস্থলের (সঞ্জিভা গার্ডেন) দিকে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারব।’

তিনি আরো বলেন, মরদেহ বা দেহাংশ উদ্ধার হলেও সেটি যে সংসদ সদস্য আনারের তা আগাম বলার সুযোগ নেই। ডিএনএ টেস্ট করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ভবনটি থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসা সিদ্ধেশ্বর মন্ডলের কাছে পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্যাংক থেকে মাংস উদ্ধার হচ্ছে। গন্ধের কারণে শরীর খারাপ লাগে। অসম্ভব বমি পায়। আর থাকতে পারিনি। তাই চলে এসেছি। ফোনে ছবি ওঠাতে চেয়েছিলাম। তুলতে দেয়নি।

সিদ্ধেশ্বর মন্ডল বলেন, ‘আমার ভগ্নীপতি ভূষণ শিকারী ট্যাংক পরিষ্কার করার দায়িত্বে ছিল। উদ্ধার হওয়া মাংস ওজনে তিন-চার কেজির মতো হবে। ’

তিনি নিজের অনুমানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘হয়তো তাকে খুনের পর কুচি কুচি করে মাংস কমোডে ফ্ল্যাশ করে থাকতে পারে, সেটা পাইপ হয়ে সেপটিক ট্যাংকে গিয়ে দলা হয়েছিল। ’

এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পলিথিনে দলা দলা মাংস জড়ো করতে দেখা যায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের। সেই মুহূর্তের ভিডিওচিত্র বাংলানিউজের হাতে রয়েছে। এরপর সেখান থেকে পুলিশের দুটি গাড়ি বের হতে দেখা যায়। সেসময় পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, এখনই কিছু বলবো না। তবে এটা মানুষের মাংস একপ্রকার নিশ্চিত। ফরেনসিক পরীক্ষার পরই সব বলা যাবে।

এদিকে ডিবি সূত্র বলছে, ভারতের সিআইডি সেপটিক ট্যাংক-এ তল্লাশি করে আশানুরূপ ফল পেয়েছে। কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া কসাই জিহাদ হাওলাদার বলেছিল প্রায় ৪ কেজি ওজনের দেহাংশ কমোডে ফেলা হয়েছে।

এর আগে কলকাতার গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সঞ্জীবা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়, তার কমোড দিয়ে মরদেহের টুকরো ফ্ল্যাশ করে দেওয়া হতে পারে।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছে ডিবিপ্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার (২৮ মে) দিনের শুরুতে নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেল থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন হারুন অর রশীদ।

গত ১২ মে ঢাকা থেকে কলকাতায় যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ১৩ মে নিউটাউনের আবাসনে খুন হন তিনি। হত্যার পর লাশ গুম করতে দেহের চামড়া ছাড়িয়ে হাড়-মাংস আলাদা করে ফেলা হয়। চার টুকরো করা হয় মাথার খুলি। এরপর দেহাংশ ট্রলি ব্যাগে ভরে কলকাতা লাগোয়া বিভিন্ন জায়গায় জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ১ জনকে গ্রেফতার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান সিইসির

সেপটিক ট্যাংক থেকে এমপি আনারের মরদেহের ‘খণ্ডিত অংশ উদ্ধার’

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয় সেই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহের ‘খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে এই দেহাংশ যে আনোয়ারুল আজিম আনারের তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি কলকাতায় যাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মঙ্গলবার (২৮ মে) বিকেলে কলকাতা পুলিশ ভবনটির স্যুয়ারেজ লাইনের পাইপ ও সেপটিক ট্যাংকে মরদেহের খণ্ডাংশের খোঁজে অভিযান চালায়।

ভারতে অবস্থানরত ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেপটিক ট্যাংক ভাঙা হয়। কলকাতার সিআইডিকে আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল সেপটিক ট্যাংক ভেঙে তল্লাশি চালানোর জন্য।

তবে ফরেনসিক ছাড়া এমপির মরদেহ এটা তা বলা যাবে না বলেও জানান তিনি।

সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতায় যাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ বলেন, আমরা কলকাতা স্থানীয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি, সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি মরদেহের অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেটি সংসদ সদস্য আনারের কি না তা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তাছাড়া কলকাতা সিআইডি বা পুলিশ আমাদের এখনও অফিসিয়ালি নিশ্চিত করেনি।

‘আমরা এই মুহূর্তে ঘটনা তদন্তের স্বার্থে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরের একটি খালে তল্লাশীর কাজ পরিদর্শনে রয়েছি। এর মধ্যে আমরা এই তথ্য পেয়েছি। আমরা এখন ঘটনাস্থলের (সঞ্জিভা গার্ডেন) দিকে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারব।’

তিনি আরো বলেন, মরদেহ বা দেহাংশ উদ্ধার হলেও সেটি যে সংসদ সদস্য আনারের তা আগাম বলার সুযোগ নেই। ডিএনএ টেস্ট করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ভবনটি থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসা সিদ্ধেশ্বর মন্ডলের কাছে পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্যাংক থেকে মাংস উদ্ধার হচ্ছে। গন্ধের কারণে শরীর খারাপ লাগে। অসম্ভব বমি পায়। আর থাকতে পারিনি। তাই চলে এসেছি। ফোনে ছবি ওঠাতে চেয়েছিলাম। তুলতে দেয়নি।

সিদ্ধেশ্বর মন্ডল বলেন, ‘আমার ভগ্নীপতি ভূষণ শিকারী ট্যাংক পরিষ্কার করার দায়িত্বে ছিল। উদ্ধার হওয়া মাংস ওজনে তিন-চার কেজির মতো হবে। ’

তিনি নিজের অনুমানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘হয়তো তাকে খুনের পর কুচি কুচি করে মাংস কমোডে ফ্ল্যাশ করে থাকতে পারে, সেটা পাইপ হয়ে সেপটিক ট্যাংকে গিয়ে দলা হয়েছিল। ’

এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পলিথিনে দলা দলা মাংস জড়ো করতে দেখা যায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের। সেই মুহূর্তের ভিডিওচিত্র বাংলানিউজের হাতে রয়েছে। এরপর সেখান থেকে পুলিশের দুটি গাড়ি বের হতে দেখা যায়। সেসময় পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, এখনই কিছু বলবো না। তবে এটা মানুষের মাংস একপ্রকার নিশ্চিত। ফরেনসিক পরীক্ষার পরই সব বলা যাবে।

এদিকে ডিবি সূত্র বলছে, ভারতের সিআইডি সেপটিক ট্যাংক-এ তল্লাশি করে আশানুরূপ ফল পেয়েছে। কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া কসাই জিহাদ হাওলাদার বলেছিল প্রায় ৪ কেজি ওজনের দেহাংশ কমোডে ফেলা হয়েছে।

এর আগে কলকাতার গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সঞ্জীবা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়, তার কমোড দিয়ে মরদেহের টুকরো ফ্ল্যাশ করে দেওয়া হতে পারে।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছে ডিবিপ্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার (২৮ মে) দিনের শুরুতে নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেল থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন হারুন অর রশীদ।

গত ১২ মে ঢাকা থেকে কলকাতায় যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ১৩ মে নিউটাউনের আবাসনে খুন হন তিনি। হত্যার পর লাশ গুম করতে দেহের চামড়া ছাড়িয়ে হাড়-মাংস আলাদা করে ফেলা হয়। চার টুকরো করা হয় মাথার খুলি। এরপর দেহাংশ ট্রলি ব্যাগে ভরে কলকাতা লাগোয়া বিভিন্ন জায়গায় জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ১ জনকে গ্রেফতার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি।