নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে আওয়ামী সরকার ভয় পায়। কারণ তারা জানে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষদের কিন্তু এগুলো করে লাভ হবে না। সরকার হুমকি দিলে জাতীয়তাবাদী শক্তি আরও বেশি করে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারি ষড়যন্ত্রের নির্বাচন দেশে আর হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য জনগণ এবার লাঠি, গুলি, টিয়ার গ্যাসের সামনে বুক পেতে লড়াই করবে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা বলেন, সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না। কেন? ১৯৯৫-৯৬ সালে সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেননি? ধ্বংসযজ্ঞ চালাননি? আপনারা যেতে পারেন, তাহলে কেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিএনপি যেতে পারবে না? এ কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের নেতারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন।
রিজভী বলেন, সংবিধান তো মানুষের কল্যাণের জন্য। সংবিধানে বিধান আছে অনুচ্ছেদ আছে, তাহলে হবে না কেন? আসলে এই জন্যই হবে না, ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত টাকা বানানোর যে সুযোগ করে দিয়েছেন, ধনী করার সুযোগ দিয়েছেন সেগুলো কিসের টাকা। এ টাকা তো কুইকরেন্টালের টাকা, পদ্মাসেতুর টাকা, ব্যাংক লুটপাটের টাকা। এগুলো অবাধে পাচার করেছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনার লোকজন এবং পছন্দের অফিসাররা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে-অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে না, যেভাবে চলছে চলুক।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, জবরদস্তি করে, জবরদখল করে বারবার ভোটাদের কোণঠাসা করে একতরফা নির্বাচন করবেন, গ্রামে গ্রামে মাইকিং করবেন ভোট কেন্দ্রে আসতে পারবেন না- এভাবে আর চলবে না। নিজের ভোট নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, জনগণ এখন সাহসের প্রতীক। বুলেট, লাঠিচার্জ, টিয়াগ্যাস, বিষাক্তগ্যাসে মানুষকে আর কাঁদাতে পারবে না। সব কিছু ধারন করে মানুষ প্রতিহত করবে এই সরকারের সমোস্ত অনাচার, অত্যাচার এবং নিপীড়ন।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান ও তার কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের নামে মনগড়া, অসত্য অপপ্রচার চালাচ্ছে।
রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমান ও ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো প্লাটফর্মে কোনো অ্যাকাউন্ট, আইডি অথবা পেজ নেই। সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল কমিউনিকেশনস প্লাটফর্মসমূহ যেমন- ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইন্সটাগ্রাম, লিঙ্কডইন, ইউটিউব, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যালসহ কোথাও তাদের কোনো অ্যাকাউন্ট, আইডি অথবা পেইজ নেই। বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন না।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সাইবার জগতে তাদের নামে ‘ফেক আইডি ও পেইজ’ তৈরি করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন কারসাজিমূলক, বিকৃত ও বানোয়াট তথ্যাদি প্রচারের মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে লিপ্ত আছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানসহ সচেতন দেশবাসীকে এই বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ডা. জুবাইদা রহমান ও ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে সকল ফেক আইডি ও পেইজ তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোতে সংযুক্ত না থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানানো যাচ্ছে। এইসব ফেক আইডি ও পেইজগুলোকে সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় রিপোর্ট করে জানানোর জন্যও সকলকে আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে করে এই ফেক আইডি ও পেইজগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ও তার পরিবার তথা জিয়া পরিবারকে নিয়ে চক্রান্তমূলকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান ও তার কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের নামে মনগড়া, অসত্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক লাখ লোক নিয়োগ দিয়ে আইটি সংশ্লিষ্ট বিকৃত কন্টেন্ট তৈরি করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। এছাড়াও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের ব্যাঙ্গাত্মক ছবি দিয়ে সড়ক-মহাসড়কে পোষ্টার, বিলবোর্ড তৈরি করে ছাত্রলীগের নামে টাঙ্গানো হচ্ছে। অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকায় উগ্র লালসা থেকে সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটিয়েছে, এজন্যই তারা হিংস্র, রক্তপিপাসু ও বিকৃত রুচির মানুষে পরিণত হয়েছে। নিজেদের মহাদুর্নীতি, অনাচার, অপকীর্তি ঢাকতেই জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে উঠেপড়ে লেগেছে। আওয়ামী চক্রান্তকারীদের এহেন নোংরা রাজনীতির কৌশলকে মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম,স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল উপস্থিত ছিলেন।