Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা নেই অন্তর্বর্তী সরকারের : জিএম কাদের

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা নেই। তাদের নির্বাচনের কোনো ইচ্ছা রয়েছে বলেও তিনি বিশ্বাস করেন না। বরং দেশ ধীরে ধীরে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রংপুর নগরীর সেনপাড়ার স্কাই ভিউ বাসভবনে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, এই সরকার দেশকে বিভক্ত করে ফেলেছে। ফ্যাসিবাদের ট্যাগ লাগিয়ে কালাকানুন তৈরি করে দেশের একটি বৃহৎ অংশকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।” অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনব্যবস্থাকে বর্ণবাদী উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, “মানুষ এখন নির্যাতিত। দেশ এক মহাদুর্যোগের মুখোমুখি, যা সামলানোর সক্ষমতা এই ইউনূস সরকারের নেই।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জাপাপ্রধান বলেন, ‘সরকার থাকলে সরকারি দল কোনো নির্বাচন করতে পারবে না। সরকারি দল যদি নির্বাচন করতে চায় সে সরকার ছেড়ে দিতে হবে। কাজেই আমরা মনে করি, এই সরকারের একটা উপযুক্ত নির্বাচন দেওয়ার দরকার; কিন্তু উপযুক্ত নির্বাচন এই সরকার দিতে পারবেন না। আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের ক্ষমতাও নাই, তাদের ইচ্ছাও নাই।’

তিনি বলেন, নির্বাচনে তারা নিজস্ব একটি দল তৈরি করেছে। সেই দল এখন পর্যন্ত কোনো রেজিস্ট্রেশন পায়নি, কিন্তু সর্বক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধভাবে কাঠামো করে যাচ্ছে। তারা করে যাচ্ছে, করুক, তার জন্য আপত্তি নাই। কিন্তু নিজস্ব দল তৈরি করে একই সঙ্গে নির্বাচন করলে সেই নির্বাচন লেভেল প্লেন ফিল্ড কখনোই হওয়া সম্ভব নয়। এটা অনেকবার অনেকভাবে বলা হয়েছে।

জি এম কাদের বলেন, রাজনৈতিক অধিকার থেকে আমাদের (জাতীয় পার্টি) বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের মিটিং-মিছিল করতে দেওয়া হয় না। আমাদের বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। আমরা কাউন্সিল করতে যাব, সেখানে হল ভাড়া করতে গেলে আমরা পারি না। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মানুষকে অযথা ধরে নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখা হচ্ছে। বিনা বিচারে মাসের পর মাস তাদের জেলে আটকে রাখা হচ্ছে।

রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টিকে প্রধান উপদেষ্টা বাদ দিয়েছেন উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, দেশ আমাদের সকলের। সকলে মিলে আমরা দেশকে নিয়ে এগিয়ে যাব। আজকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বিদেশে বলেছেন, একটি মাত্র দল ডিসেম্বরের নির্বাচন চায়। কোনো দল সেটা উনি মিন করেছেন আওয়ামী লীগ। আমরা যে চাচ্ছি, সে কথা তাঁর মনে নাই। কেননা, উনি রাজনৈতিকভাবে আমাদের বাদ দিয়ে রেখেছেন। হিসাবে আমরা নাই। রাজনীতি করার অধিকার ওনার হিসাবে এখন আমাদের নাই।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আইনগতভাবে আমরা সম্পূর্ণভাবে একটি নিবন্ধিত দল। ইলেকশন কমিশনে আমাদের রেজিস্ট্রেশন আছে, সমস্ত ফরমালিটি পূরণ করা আছে। আমাদের কোনো আইনকানুনে ঘাটতি নাই। তথাপি উনারা আমাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছেন না। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আমাদের সবক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছেন।

দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, দেশকে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতি দিকে নিয়ে গেছেন। এই সংঘাতময় পরিস্থিতি সামলানোর মতো প্রশাসনের ক্ষমতা আছে বলে আমি মনে করি না।

পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে অভিযোগ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশ প্রশাসন, তারা ডিমোরালাইজড। তাদের মনোবল শূন্য। তাদের বিভিন্নভাবে এখন দলীয়করণ করা হয়েছে। প্রশাসনেও একই ব্যাপার, তারা ডিমোরালাইজড। তারা আজকে আছে কালকে জেলে যাবে, পশুদিন চাকরি চলে যাবে। তারা জানে না এই পজিশনে।

বিচার বিভাগকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, ‘বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে বিচার বিভাগেও সঠিকভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এই সমস্ত সংগঠনগুলো যখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা দেশ শাসন করবে কীভাবে? তারা নির্বাচন সঠিকভাবে দেবেন কীভাবে? আমরা জানি না?’

অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে জি এম কাদের বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। বেকার সমস্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাড়ে তিন লাখ নতুন বেকার হয়েছে। দরিদ্র সংখ্যা বেড়েছে ৩০ লাখের বেশি। এই ৮-৯ মাসে দেশকে উনারা খারাপের থেকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

সার্বিকভাবে সমস্ত বিজনেস বন্ড হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘আমরা বিজনেস করতে পারছি না, আমাদের কোনো পরিবেশ নেই। বিভিন্নভাবে আমরা কোনোখানে কোনো সহায়তা পাচ্ছি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন।’

এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির, জেলা কমিটির আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান নাজিমসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ঢাকা থেকে চার দিনের সফরে আজ বিকেলে রংপুরে যান তিনি। দলীয় ও ব্যক্তিগত কাজ শেষে আগামী রোববার ঢাকায় ফিরবেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা নেই অন্তর্বর্তী সরকারের : জিএম কাদের

প্রকাশের সময় : ১১:১৩:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা নেই। তাদের নির্বাচনের কোনো ইচ্ছা রয়েছে বলেও তিনি বিশ্বাস করেন না। বরং দেশ ধীরে ধীরে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রংপুর নগরীর সেনপাড়ার স্কাই ভিউ বাসভবনে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, এই সরকার দেশকে বিভক্ত করে ফেলেছে। ফ্যাসিবাদের ট্যাগ লাগিয়ে কালাকানুন তৈরি করে দেশের একটি বৃহৎ অংশকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।” অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনব্যবস্থাকে বর্ণবাদী উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, “মানুষ এখন নির্যাতিত। দেশ এক মহাদুর্যোগের মুখোমুখি, যা সামলানোর সক্ষমতা এই ইউনূস সরকারের নেই।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জাপাপ্রধান বলেন, ‘সরকার থাকলে সরকারি দল কোনো নির্বাচন করতে পারবে না। সরকারি দল যদি নির্বাচন করতে চায় সে সরকার ছেড়ে দিতে হবে। কাজেই আমরা মনে করি, এই সরকারের একটা উপযুক্ত নির্বাচন দেওয়ার দরকার; কিন্তু উপযুক্ত নির্বাচন এই সরকার দিতে পারবেন না। আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের ক্ষমতাও নাই, তাদের ইচ্ছাও নাই।’

তিনি বলেন, নির্বাচনে তারা নিজস্ব একটি দল তৈরি করেছে। সেই দল এখন পর্যন্ত কোনো রেজিস্ট্রেশন পায়নি, কিন্তু সর্বক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধভাবে কাঠামো করে যাচ্ছে। তারা করে যাচ্ছে, করুক, তার জন্য আপত্তি নাই। কিন্তু নিজস্ব দল তৈরি করে একই সঙ্গে নির্বাচন করলে সেই নির্বাচন লেভেল প্লেন ফিল্ড কখনোই হওয়া সম্ভব নয়। এটা অনেকবার অনেকভাবে বলা হয়েছে।

জি এম কাদের বলেন, রাজনৈতিক অধিকার থেকে আমাদের (জাতীয় পার্টি) বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের মিটিং-মিছিল করতে দেওয়া হয় না। আমাদের বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। আমরা কাউন্সিল করতে যাব, সেখানে হল ভাড়া করতে গেলে আমরা পারি না। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মানুষকে অযথা ধরে নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখা হচ্ছে। বিনা বিচারে মাসের পর মাস তাদের জেলে আটকে রাখা হচ্ছে।

রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টিকে প্রধান উপদেষ্টা বাদ দিয়েছেন উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, দেশ আমাদের সকলের। সকলে মিলে আমরা দেশকে নিয়ে এগিয়ে যাব। আজকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বিদেশে বলেছেন, একটি মাত্র দল ডিসেম্বরের নির্বাচন চায়। কোনো দল সেটা উনি মিন করেছেন আওয়ামী লীগ। আমরা যে চাচ্ছি, সে কথা তাঁর মনে নাই। কেননা, উনি রাজনৈতিকভাবে আমাদের বাদ দিয়ে রেখেছেন। হিসাবে আমরা নাই। রাজনীতি করার অধিকার ওনার হিসাবে এখন আমাদের নাই।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আইনগতভাবে আমরা সম্পূর্ণভাবে একটি নিবন্ধিত দল। ইলেকশন কমিশনে আমাদের রেজিস্ট্রেশন আছে, সমস্ত ফরমালিটি পূরণ করা আছে। আমাদের কোনো আইনকানুনে ঘাটতি নাই। তথাপি উনারা আমাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছেন না। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আমাদের সবক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছেন।

দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, দেশকে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতি দিকে নিয়ে গেছেন। এই সংঘাতময় পরিস্থিতি সামলানোর মতো প্রশাসনের ক্ষমতা আছে বলে আমি মনে করি না।

পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে অভিযোগ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশ প্রশাসন, তারা ডিমোরালাইজড। তাদের মনোবল শূন্য। তাদের বিভিন্নভাবে এখন দলীয়করণ করা হয়েছে। প্রশাসনেও একই ব্যাপার, তারা ডিমোরালাইজড। তারা আজকে আছে কালকে জেলে যাবে, পশুদিন চাকরি চলে যাবে। তারা জানে না এই পজিশনে।

বিচার বিভাগকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, ‘বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে বিচার বিভাগেও সঠিকভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এই সমস্ত সংগঠনগুলো যখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা দেশ শাসন করবে কীভাবে? তারা নির্বাচন সঠিকভাবে দেবেন কীভাবে? আমরা জানি না?’

অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে জি এম কাদের বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। বেকার সমস্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাড়ে তিন লাখ নতুন বেকার হয়েছে। দরিদ্র সংখ্যা বেড়েছে ৩০ লাখের বেশি। এই ৮-৯ মাসে দেশকে উনারা খারাপের থেকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

সার্বিকভাবে সমস্ত বিজনেস বন্ড হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘আমরা বিজনেস করতে পারছি না, আমাদের কোনো পরিবেশ নেই। বিভিন্নভাবে আমরা কোনোখানে কোনো সহায়তা পাচ্ছি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন।’

এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির, জেলা কমিটির আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান নাজিমসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ঢাকা থেকে চার দিনের সফরে আজ বিকেলে রংপুরে যান তিনি। দলীয় ও ব্যক্তিগত কাজ শেষে আগামী রোববার ঢাকায় ফিরবেন।