Dhaka শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুপার ওভারে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৩০:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • ১৮০ জন দেখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক :

সুপার ওভারের শুরুটা ছিল একেবারে স্বপ্নময়। বল হাতে দায়িত্বটা স্বাভাবিকভাবেই পান রিপন মণ্ডল, পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে যিনি ছিলেন বাংলাদেশের মূল ভরসা ও সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ব্যাটারদের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া এই পেসার প্রথম দুই বলেই ভারতীয় দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ভারতকে দাঁড় করালেন ০/২, সুপার ওভারের মতো উচ্চচাপে যা প্রায় অপ্রত্যাশিতই বলা যায়।

কিন্তু রিপনের এমন বীরত্বময় প্রদর্শনের পরেও ম্যাচটা আবার জটিল হয়ে ওঠে ইয়াসির আলীর আত্মাহুতির সিদ্ধান্তে। যেখানে দলের প্রয়োজন মাত্র ১ রান, সেখানে ইয়াসির আলী বেছে নিলেন ছক্কা মারার ঝুঁকিপূর্ণ পথ। লংঅনে তোলা শটটি সোজা ফিল্ডারের হাতে জমা পড়তেই বাংলাদেশ পড়ে যায় উদ্বেগে। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় বোলার সুয়াশ শর্মার এক ওয়াইড বলেই জয় নিশ্চিত হয় টাইগারদের।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দোহার ওয়েস্ট অ্যান্ড পার্ক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রাইজিং স্টার্স এশিয়া কাপের সেমি-ফাইনালে সুপার ওভারের নাটক শেষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। মূল ম্যাচে নির্ধারিত ২০ ওভারে দুই দলই ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান করে তুলেছিল।

তবে শেষ ওভারের শেষ বলেই যে নাটকীয় মোড় এসেছিল, তা হয়তো বাংলাদেশের সমর্থকরা বহুদিন ভুলতে পারবেন না। ভারতের প্রয়োজন ছিল ৪ রান; হার্শ দুবে বলটিকে ঠিকভাবে টাইম করতে না পারলেও বল চলে যায় লংঅনে। থ্রো ঠিকঠাক না হলেও দুই রানের বেশি হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই বল হাতে দাঁড়িয়ে থাকলেই ম্যাচটি জিতে যেত বাংলাদেশ।

কিন্তু সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অধিনায়ক আকবর আলী করেন এক অবিশ্বাস্য ভুল, বল হাতে পেয়েও তিনি দাঁড়িয়ে থাকার বদলে ছুঁড়ে দেন স্টাম্প ভাঙতে। তার থ্রো স্টাম্পে না লাগায় হয়ে যায় ওভার থ্রো এবং ভারতের ব্যাটাররা বাড়তি রান নিয়ে ম্যাচটিকে ঠেলে দেয় সুপার ওভারে। পুরো দলের লড়াই ওই এক ভুলেই মুহূর্তের জন্য মাটি হতে বসেছিল।

এর আগে বাংলাদেশ বরাবরের মতোই ম্যাচে এগিয়ে ছিল ব্যাটিংয়ের দাপটে। জিসান আলম ও হাবিবুর রহমান সোহানের ওপেনিং জুটি এনে দেয় ২৬ বলে ৪৩ রানের ঝকঝকে সূচনা। দুটি চার ও দুটি ছক্কায় ২৬ রান করা জিসানকে ফেরান গুর্জাপনিত সিং। এরপর সোহান জাওয়াদ আবরার ও আকবর আলীর সঙ্গে গড়ে তোলেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি, যা দলের সংগ্রহকে স্থির রাখে। ৪৬ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৬৫ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন সোহান।

তবে ভারতের বোলাররা দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে মাত্র ২২ রানের ব্যবধানে চার উইকেট তুলে নিয়ে, যার ফলে বাংলাদেশ পড়েছিল চাপের মুখে। ঠিক সেই অবস্থায় ইনিংসের মোড় ঘুরিয়ে দেন এসএম মেহেরব। ছয় নম্বরে নেমে তিনি খেলেন ভয়ংকর এক বিস্ফোরক ইনিংস, মাত্র ১৮ বলে ৬ ছক্কা ও ১ চারে অপরাজিত ৪৮ রান। শেষ দিকে ইয়াসির আলীর ৯ বলে ১৭ রানের ক্যামিওও স্কোরবোর্ডকে নিয়ে যায় লড়াই করার মতো উচ্চতায়।

লক্ষ্য তাড়ায় ভারতও শুরুটা করে তুমুল গতিতে। বৈভব সুরিয়াভানশি ও প্রিয়ানশ আরিয়া মাত্র ২২ বলে গড়ে তোলেন ৫৩ রানের ঝড়। সেই জুটি ভাঙার পর বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত স্পেলে ভারত হোঁচট খেলেও ফিল্ডারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় বারবার ম্যাচ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল।

ইয়াসির আলী দুটি সহজ ক্যাচ ফেলেন, অধিনায়ক আকবর ফেলেন একটি, এমনকি শেষ বলে যখন ভারতের প্রয়োজন মাত্র ৮ রান, তখন জিসান আলমও সহজ ক্যাচ ফেলে উল্টো চার রান দিয়ে বসেন। জীবনের পর জীবন পেয়ে জিতেশ শর্মা করেন ৩৩ রান, নেহাল বাধেরা করেন অপরাজিত ৩২ রান, আশুতোষ শর্মাও পান একটি জীবন। সেই সব ব্যর্থতায় বাংলাদেশকে লড়াই করতে হয়েছে প্রায় প্রতিটি বলেই।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

তারেক রহমানকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে চাই : লুৎফুজ্জামান বাবর

সুপার ওভারে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ০৯:৩০:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

স্পোর্টস ডেস্ক :

সুপার ওভারের শুরুটা ছিল একেবারে স্বপ্নময়। বল হাতে দায়িত্বটা স্বাভাবিকভাবেই পান রিপন মণ্ডল, পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে যিনি ছিলেন বাংলাদেশের মূল ভরসা ও সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ব্যাটারদের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া এই পেসার প্রথম দুই বলেই ভারতীয় দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ভারতকে দাঁড় করালেন ০/২, সুপার ওভারের মতো উচ্চচাপে যা প্রায় অপ্রত্যাশিতই বলা যায়।

কিন্তু রিপনের এমন বীরত্বময় প্রদর্শনের পরেও ম্যাচটা আবার জটিল হয়ে ওঠে ইয়াসির আলীর আত্মাহুতির সিদ্ধান্তে। যেখানে দলের প্রয়োজন মাত্র ১ রান, সেখানে ইয়াসির আলী বেছে নিলেন ছক্কা মারার ঝুঁকিপূর্ণ পথ। লংঅনে তোলা শটটি সোজা ফিল্ডারের হাতে জমা পড়তেই বাংলাদেশ পড়ে যায় উদ্বেগে। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় বোলার সুয়াশ শর্মার এক ওয়াইড বলেই জয় নিশ্চিত হয় টাইগারদের।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দোহার ওয়েস্ট অ্যান্ড পার্ক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রাইজিং স্টার্স এশিয়া কাপের সেমি-ফাইনালে সুপার ওভারের নাটক শেষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। মূল ম্যাচে নির্ধারিত ২০ ওভারে দুই দলই ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান করে তুলেছিল।

তবে শেষ ওভারের শেষ বলেই যে নাটকীয় মোড় এসেছিল, তা হয়তো বাংলাদেশের সমর্থকরা বহুদিন ভুলতে পারবেন না। ভারতের প্রয়োজন ছিল ৪ রান; হার্শ দুবে বলটিকে ঠিকভাবে টাইম করতে না পারলেও বল চলে যায় লংঅনে। থ্রো ঠিকঠাক না হলেও দুই রানের বেশি হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই বল হাতে দাঁড়িয়ে থাকলেই ম্যাচটি জিতে যেত বাংলাদেশ।

কিন্তু সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অধিনায়ক আকবর আলী করেন এক অবিশ্বাস্য ভুল, বল হাতে পেয়েও তিনি দাঁড়িয়ে থাকার বদলে ছুঁড়ে দেন স্টাম্প ভাঙতে। তার থ্রো স্টাম্পে না লাগায় হয়ে যায় ওভার থ্রো এবং ভারতের ব্যাটাররা বাড়তি রান নিয়ে ম্যাচটিকে ঠেলে দেয় সুপার ওভারে। পুরো দলের লড়াই ওই এক ভুলেই মুহূর্তের জন্য মাটি হতে বসেছিল।

এর আগে বাংলাদেশ বরাবরের মতোই ম্যাচে এগিয়ে ছিল ব্যাটিংয়ের দাপটে। জিসান আলম ও হাবিবুর রহমান সোহানের ওপেনিং জুটি এনে দেয় ২৬ বলে ৪৩ রানের ঝকঝকে সূচনা। দুটি চার ও দুটি ছক্কায় ২৬ রান করা জিসানকে ফেরান গুর্জাপনিত সিং। এরপর সোহান জাওয়াদ আবরার ও আকবর আলীর সঙ্গে গড়ে তোলেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি, যা দলের সংগ্রহকে স্থির রাখে। ৪৬ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৬৫ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন সোহান।

তবে ভারতের বোলাররা দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে মাত্র ২২ রানের ব্যবধানে চার উইকেট তুলে নিয়ে, যার ফলে বাংলাদেশ পড়েছিল চাপের মুখে। ঠিক সেই অবস্থায় ইনিংসের মোড় ঘুরিয়ে দেন এসএম মেহেরব। ছয় নম্বরে নেমে তিনি খেলেন ভয়ংকর এক বিস্ফোরক ইনিংস, মাত্র ১৮ বলে ৬ ছক্কা ও ১ চারে অপরাজিত ৪৮ রান। শেষ দিকে ইয়াসির আলীর ৯ বলে ১৭ রানের ক্যামিওও স্কোরবোর্ডকে নিয়ে যায় লড়াই করার মতো উচ্চতায়।

লক্ষ্য তাড়ায় ভারতও শুরুটা করে তুমুল গতিতে। বৈভব সুরিয়াভানশি ও প্রিয়ানশ আরিয়া মাত্র ২২ বলে গড়ে তোলেন ৫৩ রানের ঝড়। সেই জুটি ভাঙার পর বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত স্পেলে ভারত হোঁচট খেলেও ফিল্ডারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় বারবার ম্যাচ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল।

ইয়াসির আলী দুটি সহজ ক্যাচ ফেলেন, অধিনায়ক আকবর ফেলেন একটি, এমনকি শেষ বলে যখন ভারতের প্রয়োজন মাত্র ৮ রান, তখন জিসান আলমও সহজ ক্যাচ ফেলে উল্টো চার রান দিয়ে বসেন। জীবনের পর জীবন পেয়ে জিতেশ শর্মা করেন ৩৩ রান, নেহাল বাধেরা করেন অপরাজিত ৩২ রান, আশুতোষ শর্মাও পান একটি জীবন। সেই সব ব্যর্থতায় বাংলাদেশকে লড়াই করতে হয়েছে প্রায় প্রতিটি বলেই।